বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? কৃমি চিকিৎসায় ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট

 

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? কৃমি শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। জীবনে একবারও কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হোন নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্যা। তাই আপনার সমস্যাগুলো দূর করার জন্য বা আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর গুলো পাওয়ার জন্য এই ব্লক পোস্টের মাধ্যমে কৃমি কেন হয়, কৃমি কিভাবে মানব দেহে প্রবেশ করে, কৃমিতে আক্রান্ত হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেয়, কৃমি হলে সচেতনতা অবলম্বন করুন, কৃমি চিকিৎসায় ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট যাবতীয় বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। 

 

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি?

আমাদের দেশে সাধারণত ২০০৪ সাল থেকে কৃমিনাশক কর্মসূচি চলু হয়েছে। যার অধীনে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো হয়। 

কেননা শিশুরা সবচেয়ে বেশি কৃমি হওয়ার প্রবণতার হুমকিতে থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সময় মতো কৃমিনাশক ঔষধ সেবন এড়িয়ে যাওয়ার  ফলে বিভিন্ন সময় আমরা কৃমিতে আক্রন্ত হয়ে পড়ি। আজকের পোস্টে কৃমি হওয়ার কারণ ও কৃমি হলে করণীয় কাজ সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 

কৃমি কেন হয়? কারা সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে থাকে?

কৃমি খুব খুদ্র আকারের একধরনের পরজীবী। মানুষের শরীরে অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি কি, তা জানা অত্যধিক জরুরি। এটি মানুষের দেহের পাশাপাশি অন্যান্য পশুপাখি যেমন: গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি প্রাণীর অন্ত্রে বসবাস করে। এরা মূলত অন্ত্রের পুষ্টি খেয়ে জীবন ধারণ করে ও বংশবিস্তার করে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গবেষণা অনুযায়ী ২০২১ সালে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু কোননা কোনভাবে কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হতো। সুতরাং বুঝা যায় যে অতিরিক্ত কৃমি শিশুদের জন্য মারাত্মক একটি সমস্যা। 

 

আরো পড়ুন:

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে? এর লক্ষণ ও প্রতিকার

নখ দেখে জানুন আপনি কী রোগে আক্রান্ত হয়েছে

 

কৃমি কিভাবে মানব দেহে প্রবেশ করে? 

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃমিতে সংক্রামিত হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে কমন কিছু কারণ হলো: 

  • দূষিত পানি
  • অপরিষ্কার খাদ্য গ্রহণ
  • পঁচা খাবার 
  • খাবার পূর্বে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার না করা
  • খালি পায়ে হাঁটা বা ওয়াশরুমে বসা
  • ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে হাত, পা পরিষ্কার না করা ইত্যাদি

 

কৃমিতে আক্রান্ত হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেয়

সাধারণ কিছু লক্ষ রয়েছে যার দ্বারা বুঝতে পারবেন আপনার শিশু বা আপনি কৃমিতে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। যেমন:

  • বুমি বা বুমি বুমি ভাব
  • খাবারে অরুচি
  • ক্ষুধামন্দা
  • হজমশক্তি হ্রাস
  • ডায়রিয়া
  • ওজম কমে যাওয়া
  • ওজন কম বা বেশি না হওয়া
  • গ্যাস বা পেট ফাঁপা ইত্যাদি

 

কৃমি হলে করণীয় কি? 

আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার বা আপনার পরিবারের কোন সদস্যের পেটে কৃমি হয়েছে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের নিকট স্বরনাপন্ন হতে পারেন। বাজারে অনেক ধরণের কৃমিনাশক ঔষধ পাওয়া যায়। প্রতি তিন মাস পরপর নিজ ও পরিবারের সকল সদস্যকে অ্যালবেনডাজল বড়ি সেবন করতে পারেন। তবে মেবেনডাজল বড়ি হল পরপর তিনদিন নিয়মিতভাবে খেতে হবে। এক সপ্তাহ পর আরেকটি ডোজ খাওয়া যেতে পারে। দুই বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে কৃমিনাশক সিরাপ খাওয়াতে পারেন। 

চিনি বা মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার খেলের কৃমির উৎপাত বেড়ে যায়। প্রচলিত ধারণাটি সমপূর্ণ ভুল। চিনি না মিষ্টান্ন খাবারের সাথে কৃমির কোন সম্পর্ক নেই।  

এছাড়াও আমাদের সমাজে আরেকটি প্রচলিত ধারণা আছে তাহলো: “গরমের সময় কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়া যাবে না”। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণা। যেকোন ঋতুতে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। ভরা পেটে কৃমিনাশক ঔষধ সবেন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

 

কৃমি হলে সচেতনতা অবলম্বন করুন

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? শিশুদের কৃমি হলে তারার বারবার পায়ুপথ চুলকায় এবং পরক্ষেণে সেই হাতে মুখে তুলে নেয় বা গালে দেয়। যার ফলে তারা কৃমি দ্বারা আরোও বেশি সংক্রামিত হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে কৃমির হাত থেকে বাঁচাতে আপনি ও আপনার শিশুকে প্রতিবার খাবারের আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন। তবে অন্যকোন কারণেও শিশু পায়ুপথ চুলকাতে পারে। 

সর্বদা পরিষ্কার পানি পান করুন। প্রয়োজনে পানিকে ফুটিয়ে পান করুন। শাকসবজি, ফলমূল ও তরিতরকারি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। দৈনিক দুই বেলা দাঁত পরিষ্কার করুন। প্রতিবার শৌচাগার ব্যবহারের পর পানি ও সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। জুতা পড়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করুন। অপরিচ্ছন্ন স্থানে খালি পায়ে হাঁটা চলা এড়িয়ে চলুন। 

আপনার শিশুকে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এতে করে তারা রক্তশূন্যতা বা অপুষ্টিতে ভুগবেনা এবং শারীরিকভাবে বেড়ে ওঠবে। 

 

গুড়া কৃমি কি? কিভাবে আক্রন্ত করে?

কৃমির অনেক গুলো জাত রয়েছে যার মধ্যে গুড়া কৃমি অন্যতম। পিনওয়ার্ম বা গুড়া কৃমি সাদা এবং সুতোর মত দেখতে হয়। এদের খালি চোখে দেখা কষ্টসাধ্য। তবে অন্তর্বাসে বা পায়খানায় রাতের বেলায় এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এরা একধরনের পিনওয়ার্ম বাপ্যারাসাইট পরজীবী। যা মানুষের মলদ্বারে বসবাস করে এবং পুষ্টি খেয়ে জীবনধারণ করে। এদেরকে এন্টারোবিয়াসিস ও বলা হয়।

গুড়া কৃমির আক্রমণে মলদ্বারে চুলকানি, বুমি বুমিভাব, খিদে কমে যাওয়া, বারবার পেট ব্যথা হওয়া ও ওজন হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এদের চিকিৎসায় মলদ্বার থেকে জলীয় নমুনা ব্যবহার করা হয়। যা মাইক্রোস্কোপের নিচে পরিক্ষা করে এদের উপস্থিতি নির্নয় করা যায়। এছাড়াও গুড়া কৃমি পরিক্ষায় টেপ বা ফিতা ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের কৃমির হাত থেকে বাঁচতে উপরে উল্ল্যেখিত নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কৃমিনাশক সেবন করুন। 

 

তথ্যসূত্রে: Dr. Ayush Pandey

MBBS,PG Diploma, General Physician

Myupchar.com, Articles: গুড়া কৃমি 

 

কৃমি চিকিৎসায় ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট

ঘরোয়া কিছু ট্রিটমেন্ট বা প্রথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে কৃমি সংক্রামণ কমানো যেতে পারে। যদি কৃমি সংক্রামণ কম থাকে তাহলে হেলেনচার রস ও নিম পাতার রস পরিমান মতো এক সঙ্গে মিশিয়ে। পরপর ৩ দিন নিয়ম করে খেলে কৃমির উপদ্রব কমানো সম্ভব। তবে বাচ্চাদের এই ধরণের ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট না দেওয়াই ভালো। 

বাংলাদেশে এই বছর ২২ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে এই বছর ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ২ কোটি ৭ লাখ শিশুকে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর উদ্ধোগ নিয়েছেন তারা। তবে কৃমিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার চেয়ে শুরুতেই সচেতনতা হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। 

 

আমার শেষ কথা:-

অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? আশা করি ব্লগ পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পর, আপনি আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়েছেন।  আপনার শরীর থেকে কৃমির পরিত্রাণ পেতে আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে, যাতে আপনি ভাল ফলাফল পেতে পারেন। পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ !!

 

Leave a Comment