ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি শেখানো হয়?

বর্তমান যুগটাই এখন অনলাইনের। তথ্যপ্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে গোটা বিশ্ব। অনলাইন উন্মোচন করছে কাজের নতুন নতুন দিগন্ত।ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নানাভাবে আয় করছেন অনেকেই। এজন্য রয়েছে বেশ কিছু প্ল্যাটফর্ম।আর এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হচ্ছে ডিজিটাল মারকেটিং।

 সাধারণত কোন কিছুর প্রচার প্রসার করাই হলো সেই জিনিসের মার্কেটিং।আর ডিজিটাল উপায়ে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কোন পন্য বা সার্ভিসের প্রচারনা করা হলো ডিজিটাল মার্কেটিংবর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে বলতে গেলে পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।মানুষ এখন ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে নিজের পছন্দসই প্রোডাক্ট কেনাকাটা করছে মোবাইল এর মাধ্যমে। মোবাইল প্রযুক্তি আপডেট হওয়ার সাথে সাথে মানুষের চাহিদা ও আধুনিক হচ্ছে।

                         

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

বর্তমানে ৭০% মোবাইল ব্যাবহারকারীরা তাদের কেনাকাটা মোবাইল এর মাধ্যমেই করে । তাই বলা যায় মোবাইল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অংশ। (২০২২ সালের এক হিসাব থেকে জানা যায়) বর্তমানে ৭৫ শতাংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করে।তাই ডিজিটাল মাধ্যম গুলোকে কাজে লাগিয়ে এখন বেশিরভাগ ব্যাবসার পথ আরো সমৃদ্ধি হচ্ছে।আর ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও লাভজনক।তাই বর্তমানে যেকোন ব্যাবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং আবশ্যক।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান স্তম্ভ ৩ টি:

  1. সার্চ ইন্জিন মার্কেটিং
  2. সোশ্যাল মিডিয়া
  3. মার্কেটিং কনটেন্ট মার্কেটিং

 মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

 আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং এতবড় একটা সেক্টর যে এর প্রকারভেদ বের করা মুশকিল।যারা অনেক দিন ধরে এই সেক্টরে আছেন তাদের অনেকেরই ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।তবুও কিছু কিছু মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের মতে ডিজিটাল মার্কেটিং মোটামুটি দুই প্রকার,আর এই মতটিই বেশি গ্রহনযোগ্য এবং জনপ্রিয়।

প্রকারগুলো হলো: 

১. অনলাইন মার্কেটিং ও

২. অফলাইন মার্কেটিং। 

 এই প্রকাভেদ দুটির ও ভিন্ন ভিন্ন সেক্টর রয়েছে যেমন :— অনলাইন মার্কেটিং এর সেক্টর গুলো— 

  • সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
  •  সার্চ ইন্জিন মার্কেটিং(SEM)
  •  সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং(SMM) 
  •   কনটেন্ট মার্কেটিং(Content Marketing) 
  •   ইমেইল মার্কেটিং(Email Marketing)
  •   পে পার ক্লিক(PPC) 
  •   এফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing)

ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হতে চাইলে আপনি এই পোস্ট টি পড়তে পারেন-

অফলাইন মার্কেটিং এর সেক্টর গুলো হচ্ছে :– 

মোবাইল এডভারটাইজিং(Mobile Advertising) 

টেলিভিশন এডভারটাইজিং(Television Advertising)

রেডিও মার্কেটিং(Radio Marketing)

ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড মার্কেটিং(Bilboard Marketing)

নিম্নে অনলাইন ও অফলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হলো- অনলাইন মার্কেটিং এর সেক্টর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা:

SEO: সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে এই SEO.প্রতিদিন হাজার হাজার ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। আর ইউজার রা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য গুগলের সার্চ ইন্জিনে সার্চ করে থাকে।আর ভিন্ন ভিন্ন নীশের উপর অনেক ওয়েবসাইট আছে এবং প্রতিনিয়ত তৈরি ও হচ্ছে। এখন গুগল কোনটা রেখে কোন ওয়েবসাইটকে অগ্রাধিকার দিবে? সার্চ ইন্জিনে এই কাজটাই করা হয়।

SEM: সার্চ ইন্জিন মার্কেটিং 

SEM হচ্ছে পেইড মেথর্ড।এটি একটি লংটাইম প্রসেস হলেও এর দ্বারা খুব তাড়াতাড়ি রেজাল্ট পাওয়া যায়। এস ই এম এ আমরা টার্গেটেড সার্চ ইন্জিনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির এড দিতে পারি।

SMM: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

এস এম এম বলতে পেইড অথবা ফ্রি যেকোন মেথর্ডে সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করাকে বুঝায়।সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন সেক্টর রয়েছে যেমন:ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম,টুইটার,টিকটক,পিন্টারেস্ট।আমাদের বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে ফেইসবুক বেশি জনপ্রিয়।

কনটেন্ট মার্কেটিং:

ভিডিও, অডিও,আর্টিকেল সবকিছু মিলেই কনটেন্ট মার্কেটিং।কনটেন্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে সব ধরনের বিজনেস এর বর্ননা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।তাছাড়া বর্তমানে হ্যান্ডবুক বা পিডিএফ বুক এর মাধ্যমে কনটেন্ট মার্কেটিং বেশ প্রচলিত।

PPC: পে পার ক্লিক

পি পি সি এর অর্থ হলো প্রতি ক্লিক এর জন্য সার্চ ইন্জিন পে করবে।যেমন – আপনি কোন ট্রাফিক আনার জন্য আপনার ল্যান্ডিং পেইজে একটা এড দিলেন।এখন যদি কোন ইউজার আপনার পেইজে ক্লিক করে, তাহলে সার্চ ইন্জিন আপনাকে প্রতি ক্লিকের জন্য পে করবে।

ইমেইল মার্কেটিং Email Marketing:

ইমেইল মার্কেটিং ইউরোপের দেশগুলোতে খুবই জনপ্রিয়। মোটামুটি সবাই ইমেইল ব্যবহারে অভ্যস্ত।তাই এর মাধ্যমে সহজে অডিয়েন্স এর কাছে পৌছানো যায়।

এফিলিয়েট মার্কেটিং Affiliate Marketing:

এটা সম্পুর্ন অর্গানিক।ডিজিটাল মার্কেটিং মেথর্ড ইউজ করে কোন কোম্পানির পন্য সেল করে সেখান থেকে কিছু কমিশন নেওয়াকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়।আজকাল অনেক যুবক-যুবতি বিভিন্ন মারকেটপ্লেসে এই এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করতেছে।

 অফলাইন মার্কেটিং

বেশ কয়েক বছর আগেও অফলাইন মার্কেটিং খুব জনপ্রিয় ছিলো। এটি একটি কার্যকর মেথড হিসেবেও পরিচিত ছিল।কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন চালু হওয়ার পর থেকে এই অফলাইনের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কয়েকটি অফলাইন মেথড সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ-

মোবাইল এডভারটাইজিং:

এটি খুবই সহজলভ্য বা সবাই সহজেই মোবাইলে এই কাজ করতে পারে,কারন বর্তমানে প্রিথিবীর ৭০% মানুষই মোবাইল ব্যাবহার করে থাকে।থেকে প্রমোশনাল এসএমএস পাই, কল পেয়ে থাকি এটাই মোবাইল এডভার্টাইজিং।

টেলিভিশন এডভারটাইজিং:

টিভিতে যে প্রচুর পরিমাণে বিজ্ঞাপন শো করা হয়, এটাই টেলিভিশন এডভার্টাইজিং।মার্কেটিং এর এই মেথর্ড টা তাদের কাছে অনেক বেশি পরিচিত আমরা যারা ছোট বেলায় টিভিতে প্রচুর সময় কাটিয়েছি ।

ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড মার্কেটিং (Billboard Marketing):

বিভিন্ন শহরের মেইন মেইন জায়গাতে আমরা বড় পর্দার বিভিন্ন ডিজাইনের এডভার্টাইজিং দেখতে পাই তাছাড়া দোকানের সামনে, স্কুল, কলেজ, অফিস ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে এখন ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড দেখা যায় এটাকেই বিলবোর্ড মার্কেটিং বলে।

রেডিও মার্কেটিং (Radio Marketing):

এখন থেকে ১৫-২০ বছর আগেও আমাদের দেশে রেডিও মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয় ছিলো। কিন্তু ডিজিটাল টান্সফরমেশনের ফলে রেডিও এখন স্মার্টফোনে স্থানান্তরিত হয়েছে।তবুও মজার বিষয় হলো এখনো রেডিওতে খুব কম হলেও যথেষ্ঠ পরিমাণ অডিয়েন্স আছে। এক কথায় রেডিওতে পণ্যের প্রচার প্রচারণা চালানোকেই রেডিও মার্কেটিং বলে।

আরো পড়ুন –১০ টি সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং টুলস

FAQ (কিছু প্রশ্নের উত্তর):

ডিজিটাল মার্কেটিং এত পরিচিত ও ব্যাপক হওয়া সত্তেও অনেকের মনে এখনও রয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন।তাই এই বিষয়ে মোটামুটি ক্লিয়ার হওয়ার জন্য নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ৭টি গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলোঃ-

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

মার্কেটিং মানেই যেকোণ পন্যের প্রচার করা। বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম যেমন ফেইসবুক,ইউটিউব,গুগল,ইমেইল  ব্যাবহার যে মার্কেটিং করা হয় তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।বিস্তারিত জানতে উপরোল্লখিত কন্টেন্টি পড়ে আসতে পারেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন শিখবো?

যেহেতু মানুষ এখন কোনকিছু ক্রয় করার আগে ইন্টারনেটে সার্চ  করে তাই বেশিরভাগ ব্যাবসাই এখন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে উঠেছে।বেশিরভাগ ব্যাবসায়ীরা তাদের পন্য ইন্টারনেটে প্রচার করছে।আর এজন্যই ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরের চাহিদা অনেক বেশি।প্রফেশনাল মারকেটাররা এখান থেকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার ডলার পরযন্ত ইনকাম করে থাকে।তাই একটা ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য  ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার বিকল্প নেই।

 ডিজিটাল মার্কেটিং এরমধ্যে কি কি শিখানো হয়?

ডিজিটাল মার্কেটিংসেক্টরের মধ্যে এফিলিয়েট মার্কেটিং,সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং,ইমেইল মার্কেটিং,সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন,কন্টেন্ট মার্কেটিং সহ আরো অনেক সেক্টর রয়েছে।আপনি হয়ত সবকয়টি শিখতে পারেন অথবা যেকোণ একটা শিখে সেই বিষয়ের উপর এক্সপার্ট হতে পারেন।

 ডিজিটাল মার্কেটিং* কি মোবাইল দিয়ে করা যায়?

অবশ্যই নিজের হাতের স্মার্ট ফোন দিয়েই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারবেন।তবে সম্পূর্ণ কাজ করতে পারবেন না।মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরের ফেইসবুক  মার্কেটিং,ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি কাজ করা যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবো ?

ডিজিটাল মার্কেটিং দুইভাবে শিখতে পারেন। ইউটিউব দেখে ফ্রিতে শিখতে পারেন অথবা প্রিমিয়াম বা পেইড কোর্স করে শিখতে পারেন।ক্রিয়েটিভ আইটি, কোডাস্ট ট্রাস্ট, এবিসি এল আইটি ছাড়াও আরো অনেক বিশ্বস্ত আইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ফ্রিতে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স কিভাবে করবো?

আপনি এমন কিছু নেই যে ইউটিউবে পাবেননা।ফ্রিতে কোণকিছু শেখার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব।এছাড়াও “উদেমি’ , “গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ” নামে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আছে যেখানে ফ্রিতে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখানো হয় এবং শেখার পরে সার্টিফিকেট ও দিয়ে দেওয়া হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কতদিন লাগবে?

এই প্রশ্নের কোণ নিদ্রিষ্ট উত্তর নেই।সম্পুরন আপনার উপর নির্ভর করে।আপনি যদি দিনে ৩/৪ ঘন্টা সময় নিয়মিত দিতে পারেন তাহলে ৬মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে শিখতে পারবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিষয়ে আরো জানতে চাইলে নিচের ভিডিও টি দেখতে পারেন –

উপসংহারঃ 

পরিশেষে উপসংহারে বলা যায় প্রথাগত মারকেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও এই দুটোকে একত্র করে মার্কেটিং করলে পন্যগুলো  আরও ভালো বিক্রি হটে পারে।উভয় পদ্ধতি অনুসরন করলে ব্যাবসার প্রচার-প্রসার গুলি আরও ব্যাপক দর্শকের কাছে পৌছাতে পারে।লিড আরও তৈরি করতে পারে এবং বিক্রি অনেক বাড়তে পারে।

ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক ডিজিটাল মার্কেটিং দ্বারাই বেশি সম্ভব হয়।আর অনলাইন ও অফলাইন মার্কেটিং উভয়টির ই গুরুত্ব এখানে অনেক বেশি।মানুষ ক্রমান্বয়ে ডিজিটাল বা অনলাইন মারকেটিং এর দিকে খূব দ্রুত ঝুকছে বলে অফলাইন মার্কেটিং এর মেথরড গুলি এখন প্রায় বিলুপ্তর পথে।এজন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনলাইন ও অফলাইন উভয়  মার্কেটিং মেথড ব্যাবহার করলে ব্যাবসাগুলি আরো বেশি প্রচার ও বিক্রি হোবে।   সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ইমেল  মার্কেটিং ব্যক্তিগতকৃত সামগ্রী ব্যবহার করে আরও ব্যক্তিগত স্তরে তাদের লক্ষ্য দর্শকদের সাথে জড়িত হতে পারে ব্যবসাগুলি।

দিন দিন যে হারে বিভিন্ন নতুন নতুন সফটওয়ার আবিস্কার হচ্ছে এবং মানুষ যে হারে সেগুলোর দিকে ঝুকছে খুব দ্রুতই আপডেট বর্ণনা নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়ে যাবো।তাই আপডেট কিছু পাওয়ার জন্য এই পেইজে চোখ রাখুন।

 

 

Leave a Comment