শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ত্বক এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ত্বক। শীতকালে এই ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ প্রয়োজন হয় যত্নের। শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ টিপস পেয়ে যাবেন আজকের পোস্টে।
শীতকালে ত্বকে কি মাখবেন?
শীতকাল আসার সাথে সাথেই আমাদের প্রধান চিন্তার কারণ হয় কোন ময়েশ্চারাইজার মাখব, কোন ক্লিনজার কিনব, কোন লোশন টা আমার জন্য ভালো হবে, এসব চিন্তা করতে করতে একসময় আমরা ত্বকের ধরণ বিবেচনা না করেই আমরা ইচ্ছা মতো একটা কিনে ফেলি ফলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে আমাদের স্কিন টাইপ কি। শুষ্ক নাকি তৈলাক্ত নাকি সেনসিটিভ? সেই অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার বা ক্লিনজার বা সানস্ক্রিন কিনব। ত্বক যেন শুষ্ক না থাকে সেজন্য শীতকালে বার বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বক প্রাণবন্ত থাকবে।আর সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্যই ভালো মানের ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া শিয়াবাটার, গ্লিসারিন, অরগান অয়েল, বাদাম তেল সব ধরনের ত্বকের জন্যই শীতকালে কম বেশি ব্যবহার করা যায়।
শীতকালে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায়
শীতকালে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিতে সর্বপ্রথম স্কিনের ধরণ জানতে হবে। সেই অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার, ক্লিনজার, সানস্ক্রিন বাছাই করে ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে ক্লিনজার দিয়ে যতবার ত্বক পরিষ্কার করা হবে ততবার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে, গোসলের পর লোশন অথবা গ্লিসারিন গোলাপ জলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, ঠোঁটে সবসময় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা উচিত। রাতে ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার, লোশন ব্যবহার করতে হবে। সকালে সুন্দর করে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। এভাবে শীতকালে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়
শীতকাল আসার সাথে সাথেই যখন ত্বক টানটান ভাব, ঠোঁট ফাটা, চামড়া ওঠা এই ধরনের সমস্যা চোখে পড়ে তখনই আমরা ঘরোয়া টোটকা দিয়েই শুরু করে দিই আমাদের রুপচর্চা। ঘরে থাকা মেথি, মশুর ডাল, লেবু, মধু, কলা, গ্লিসারিন এসব দিয়েই শুরু করে দিই রুপচর্চা। রুপচর্চার উপকরণের ভুল ব্যবহারের ফলে ত্বক লাল হয়ে যায়, পুড়েও যেতে পারে। এজন্য দরকার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান। তেমনি কিছু কার্যকরী ঘরোয়া টোটকা জেনে নিন-
১. বেসন, দুধ ও কলা ব্লেন্ড করে মুখে, গলায়, হাতে ও পায়ে লাগাতে পারেন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান৷ এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, হয়ে উঠবে নরম ও কোমল৷
২. এক চামচ মধুর সঙ্গে দুই চামচ মিল্ক পাউডার ও এক চিমটে হলুদ ভালো করে মিশিয়ে মুখে মেখে দিন। ১৫ মিনিট পরে তা ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুন: অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? কৃমি চিকিৎসায় ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট
শীতকালে শুষ্ক ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
শীতকালে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কেননা শীতকালে শুষ্ক ত্বক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের যত্নে ঘরোয়া কিছু উপায় জেনে নিন-
১. রোজ রাতে মুখে, হাতে-পায়ে ঘি মাখলে ত্বক নরম থাকবে। ত্বকে টানটান ভাব থাকবেনা।
২. আধা কাপ দইয়ের সঙ্গে তিন চামচ মধু এবং তিন চামচ চিনির দানা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ভালো করে মুখে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
৩. আধা চামচ অ্যাপল সিডার, আধা চামচ পানি, আধা চামচ মধু, দুই চামচ গোলাপ জল ও কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। কনুই, হাঁটু, হাতে-পায়ে ভালো করে মাখিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন, উপকার পাবেন।
শীতকালে ত্বকের যত্নে মধু কতটা কার্যকরী?
শীতকালে ত্বকের যত্নে মধু অতুলনীয়। শীতকালে ঠান্ডা, সর্দি থেকে বাঁচতে মধু যেমন অব্যর্থ ঔষধ, তেমনি রুপচর্চাতেও মধুর তুলনা হয় না। ঘরোয়া কোনো উপকরণ না থাকলেও শুধু মাত্র মধুই হতে পারে আপনার ত্বকের জন্য যথেষ্ট। ত্বকের যত্নে মধুর কয়েকটি কার্যকরী ব্যবহার জেনে নিন-
১. প্রথমে ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল আর ১ টেবিলচামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মুখে, গলায়, হাতে সমানভাবে লাগান। ২০-৩০ মিনিট বসতে দিন। তারপর পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটিতে নারিকেল তেলের বদলে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করা যায়।
২. একটি পাকা কলা চটকে নিন, তাতে মেশান দুই টেবিল চামচ মধু। ভালো করে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন।
৩. দুই টেবিল চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে সারা মুখ, গলা, কনুই আর হাঁটুতে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা দুধ জোগাড় করা অসুবিধে হলে গুঁড়া দুধ পানিতে গুলে ব্যবহার করতে পারেন।
৪. দুটি বা চারটি ডার্ক চকলেটের টুকরো কাপে নিয়ে গরম করে গলিয়ে নিন। একটু ঠান্ডা হলে তাতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন। মুখে আর গলায় লাগিয়ে হালকা হাতে মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
শীতকালে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন কিভাবে?
শীতকালে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল খুবই কার্যকরী উপাদান। গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে অলিভ অয়েল লাগালে ত্বক থাকে মসৃণ, সতেজ, তরতাজা। তবে এমন কার্যকরী ফল পেতে অলিভ অয়েল এর সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন-
১. কেমিক্যাল মুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ত্বকের উপর ভাল করে ম্যাস্যাজ করে মিনিট ১৫ রাখুন। তারপর ভিজে তোয়ালে ব্যবহার করে ত্বক মুছে নিন। এই ভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ট্যান দূর হয়ে যাবে।
২. এক কাপ অলিভ অয়েলের সঙ্গে অর্ধেক কাপ ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এটা ট্যান পড়ে যাওয়া জায়গায় দিনে চার-পাঁচবার লাগান। দেখবেন, ত্বকের জ্বালাভাব এবং পোড়াভাব দুটোই কমে গিয়েছে।
৩. ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করেও আপনি ট্যান দূর করতে পারবেন।
৪. গোসলের পানিতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার ওই পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে সহজে ত্বকে ট্যান পড়বে না।
শীতকালে ত্বকের যত্নে এ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে জানুন
এ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে বহুল ব্যবহৃত হয়। কম বেশি সকলের বাসায় এটি পাওয়া যায় এজন্য এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়। শীতকালে ত্বককে সুস্থ রাখতে কিভাবে এ্যালোভেরা ব্যবহার করব আসুন জেনে নিই-
১. এক চিমটি হলুদের গুঁড়া ও ১ চা চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটির সঙ্গে অ্যালোভেরাজেল মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। মুখে, গলায় বা হাত-পায়ে পেস্টটি লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে হাল্কা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ বার এই মাস্ক ব্যাবহারে আপনি পেতে পারেন উজ্জ্বল ও ফর্সা ত্বক।
২. অ্যালোভেরার দু’পাশের কাঁটাগুলো কেটে ব্লেন্ডারে পিষে নিন। তারপর একটি লেবুর সম্পূর্ণ রস বের করে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ফ্রিজে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে। মুখে, গলা, হাত বা পায়ের রঙ হালকা ও দাগ দূর করতে প্রতিদিন লাগিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি রোঁদে পোড়াভাবও দূর করে।
৩. মুলতানি মাটির সঙ্গে মধু, লেবুর রস ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন। মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার মাস্কটি ব্যাবহারে মুখের তৈলাক্ত সমস্যা দূর হবে।
৪. একটি কাঁচা টমেটোর মাঝখান থেকে শাঁসটুকু নিবেন। মসুর ডালের পাউডারের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল ও টমেটোর শাঁস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। মুখে, গলায় এবং হাত-পায়ে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি খুবই পরিষ্কার ত্বক অনুভূত করবেন।
শীতকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কি করবেন ?
১. নারিকেল তেল ত্বকে রাতে লাগিয়ে রাখুন। সকালে উঠে কুসুম গরম পানিতে রুমাল ভিজিয়ে ত্বকের উপর দিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এটি খুবই কার্যকরী।
২. কলা পেস্ট করে তাতে সামান্য মধু দিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৩. টমেটোর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বাড়বে এবং উজ্জ্বল দেখাবে।
৪. দুধের ক্রিম অথবা টক দইয়ে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মেশান। চামচ দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন। মিশ্রণটি ব্যবহারের আগে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট মিশ্রণটি ত্বকে রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন।
আরো পড়ুন: অ্যালার্জি দূর করার ঘরো
শেষ কথা (Conclusion)-
বছরের অন্য সময়ের থেকে শীতকালে ত্বকের যত্ন বেশি নিতে হয়। ত্বককে সুস্থ, তরতাজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। সবসময় ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যাতে ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ থাকে। শীতকালে ত্বকে সবসময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যাতে ত্বক শুষ্ক না থাকে। ভালো মানের ক্যামিক্যালমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করব। ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নিব। এতে ত্বকের ক্ষতি কম হয়।
FAQ –
১. শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব কেমন?
শীতকালে ত্বককে রক্ষা করার জন্য ত্বকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ঠান্ডা বাতাসের কারণে ত্বক নির্জীব, নিস্তেজ হয়ে গেলে ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি কিন্তু এতে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলো আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রেখে ব্যবহার করলে ত্বককে সুস্থ রাখা যায়।
২. শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায় কি?
শীতকালে ত্বকের যত্নে হাল্কা গরম পানি ব্যবহার করুন, অতিরিক্ত গরম পানির ব্যবহার কমান এবং সাবান ব্যবহার বন্ধ করুন। না হলে চুলকানি, চামড়া উঠা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি সঠিক নিয়মে ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের পরিচর্চা করুন। বেশি বেশি পানি পান করুন। এটি ত্বককে সুস্থ রাখবে।