বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৪

নবজাতক শিশু প্রতিটি বাবা মায়ের একটা পরম সাধনার বস্তু। কিভাবে বাচ্চাকে সুস্থ রাখা যায় সেই চেষ্টার শেষ থাকেনা বাবা মায়ের। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই বাচ্চার বিভিন্ন রোগ হতে দেখা দেই। বাচ্চাদের পেট ফাঁপা সমস্যা এই তালিকায় সবার প্রথমে। পেটফাঁপা ছাড়াও বাচ্চাদের আর ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন আমাদের বাংলায় ইনফোতে। চলুন আজ জেনে নিই বাচ্চাদের পেট ফাঁপা নিয়ে বিস্তারিত-

বাচ্চাদের পেট ফাঁপার লক্ষণ কি কি?

বাচ্চা জন্মের পরপরই নবজাতক শিশুদের পেটে গ্যাস জমতে পারে যা পরবর্তীতে শিশুদের পেটে গ্যাসের সমস্যা ও হতে পারে। নবজাতক শিশুদের জন্য এটা এক অস্বস্তিকর অবস্থা এবং অবশ্যই অভিভাবকদের জন্য তো বটেই। এ সমস্যাটা স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। তবে চিন্তার কিছু নাই এ সমস্যা সাময়িক। কিছুদিন পর এমনিতেই এটা নিরাময় হয়ে যায়।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায়-

  • অতিরিক্ত কান্না করা।
  • অস্থিরতা, ক্ষুধামন্দা।
  • অতিরিক্ত মোচড়ানো।
  • পেট ফোলা ও তলপেট শক্ত হওয়া।
  • খাবার খেতে না চাওয়া।
  • অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপার কারণ কি?

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা দেখা দিলে বাচ্চা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে, খাওয়া দাওয়া করতে চাই না, অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ করে। চলুন এ সমস্যার কারনগুলো জেনে নিই-

  • নবজাতক শিশুটির পাকস্থলীর গঠন প্রকৃতি থাকে দুর্বল। এ সময় তাদের হজমশক্তি কম থাকায় কিছুটা গ্যাস সৃষ্টি হয় বটে। এছাড়া হরমোনজনিত সমস্যার জন্য ও পেট ফাঁপতে পারে।
  • বাইরের বাজারজাত ফর্মুলা মিল্ক ও ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ালে বোতলে অতিরিক্ত ফেনা বা বাতাস জমার কারণে শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি হয়।

শিশুর ছয় মাস বয়সে বাড়তি খাবার শুরু করার সময়ও পেটে গ্যাস হতে পারে। এসময় খেয়াল রাখুন কোন খাবারে আপনার বাচ্চার পেটে গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন: গরুর দুধ, ডাল ইত্যাদি।

  • শিশুর পেটে বাতাস ঢোকার ফলে পেট ফুলে যায় এবং পেটে কামড়ায় বা পেট ব্যথা করে বিধায় তারা অতিরিক্ত কান্না করে। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
  • মায়ের যদি বুকের দুধ বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয় সে ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ও বেশি পরিমাণে দুধ বাচ্চার পেটে চলে যায়। পাশাপাশি অনেক পরিমাণে বাতাসও বাচ্চার পেটে প্রবেশ করে। ফলে শিশুর পেটে গ্যাসের উদ্রেক হয় এবং পেটে কামড়ায় বা পেট ব্যথা করে বিধায় তারা অতিরিক্ত কান্না করে। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
  • বিপরীতভাবে মায়ের বুকের দুধ কম আসলে, সে ক্ষেত্রে খুব ধীরগতিতে ও কম পরিমাণে দুধ আসার কারণে বাচ্চার পেটে অধিক বাতাস প্রবেশ করে এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
  • এ ছাড়া মায়ের শারিরীক কিছু সমস্যার কারণেও শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। যেমন— মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা হলে করণীয় কি?

আরো পড়ুন: শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ টিপস ২০২৪।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা হলে প্রতিটি পরিবার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কি করব? কিভাবে বাচ্চার কান্না থামবে? কিভাবে বাচ্চা একটু স্বস্তি পাবে? চলুন জেনে নিই আমাদের কি করতে হবে?

১. পেটের গ্যাস দূর করতে হবে:

বাচ্চার পেটের গ্যাস দূর করতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সাহায্যে নাভির ওপরের অংশে ম্যাসাজ করুন। তার পর নাভির নীচে ম্যাসাজ করবেন। নাভির ওপরে দুবার ও নাভির নীচে দুবারের বেশি ম্যাসাজ করবেন না। বাচ্চার পেটে গ্যাসের ব্যথা হলে এই পদ্ধতিতে মালিশ করতে পারেন। এতে বাচ্চার পেটের গ্যাস কমে।

২. পেটের অস্বস্তি দূর করতে হবে:

বাচ্চার পেটের অস্বস্তি দূর করার জন্য বাচ্চাকে ধীরে ধীরে পেট ম্যাসাজ (Stomach Massage) করুন। এভাবে ম্যাসাজ করতে পারলে পারলে গ্যাস আপনার অন্ত্রের নীচের দিকে চলে আসবে এবং পায়ুদ্বারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পেটের উপরের অংশে ম্যাসাজ করুন। ডান হাতটিকে ডানদিকে বুকের খাঁচার হাড়ের নিচের দিকে ধরুন। এরপর গোলভাবে ম্যাসাজ করুন। এভাবেই দ্রুত সমস্যা কমানো সম্ভব। একবার করে দেবাচ্চাদের পেট ফাঁপা কমানোর দোয়া।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা কমানোর দোয়া।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা সমস্যার নিরাময়ের পথপ্রদর্শক হিসাবে অনেক মা-বোনেরা বিভিন্ন দোয়া খুঁজে থাকেন। আল্লাহর কালাম আপনার সন্তানের পেট ব্যাথা কমাতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। চলুন দোয়া জেনে নিই –

উচ্চারণ : রাব্বুনাল্লাহুল লাজি ফিস সামা-ই তাকাদ্দাসা ইসমুক, আমরুকা ফিস সামা-ই ওয়াল আরদ্ব, কামা রাহমাতুকা ফিস সামা-ই, ফাজআল রাহমাতুকা ফিল আরদ্ব, ইগফির লানা হুউবানা ওয়া খাতা-য়া-না আনতা রাব্বুত তাইয়িবিন, আনযিল রাহমাতাম মিন রাহমাতিকা, ওয়া শিফাউম মিন শিফা-ইকা আলা হাজাল ওয়াজ-ই।

নিয়ম: প্রথমে ওযু করে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উপর দৃঢ়বিশ্বাস রেখে আমল করতে হবে। আপনার নিয়ত এবং বিশ্বাস আপনার আমল কার্যকর করতে পথপ্রদর্শক।

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা সমস্যা সমাধানের ঘরোয়া টোটকা।

  • শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ শিশু ও মায়ের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান ও সংযুক্তি ঠিকমতো হতে হবে। শিশুর মাথাটা একটু উঁচুতে রাখতে হবে। শিশুকে শুইয়ে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। এতে পেটে বেশি বাতাস ঢুকে পেটফাঁপা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • শিশুকে সব সময় বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বাজারের ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো ঠিক নয়। কারণ ফর্মুলা মিল্কে সাধারণত কিছু উপাদান সংযুক্ত থাকে, যা নবজাতকের গ্যাসের উদ্রেক করে।
  • দুধ খাওয়ার পরে শিশুকে সোজা করে কাঁধে নিয়ে পাঁচ মিনিট হাত দিয়ে পিঠ চাপড়ে দেওয়া ভালো। অর্থাৎ ঢেকুর তোলানো, যেটাকে বলা হয় ‘বারপিং -Burping’। এতে অতিরিক্ত গ্যাসটা বের হয়ে যায়, বাচ্চা আরাম পায়।
  • ফিডারে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। কারণ ফিডারের মাধ্যমে শিশুর পেটে সবচেয়ে বেশি বাতাস ঢোকে।
  • শিশুর শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে মুছিয়ে দিলে বা গোসল করিয়ে দিলে গ্যাস বের হওয়াটা ত্বরান্বিত হয়।
  • শিশুর শরীর ও পেটে ম্যাসাজ করলেও কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে। যেমন—শিশুকে কিছুক্ষণ উপুড় করে শুইয়ে রাখা। শিশুর পেটে আলতো করে আঙুল দিয়ে ওপর দিক থেকে নিচের দিকে টেনে টেনে বাতাস বের করে দেওয়া যেতে পারে। এতে গ্যাস বের হয়ে যাবে অনেকটাই।
  • মায়ের যেসব খাবারে গ্যাস হয়, সেসব খাবার পরিহার বা নিয়ন্ত্রিতভাবে গ্রহণ করা উচিত।
  • শিশুর ৬ মাস বয়স হলে বাড়তি খাদ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যে খাবার খেলে গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারণা করা হয় সেগুলো পরিহারের চেষ্টা করতে হবে।

শেষকথা (conclusion):

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা খুবই স্বাভাবিক একটা সমস্যা। এটি নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কারণ নাই, উপরে উল্লেখ করা টিপস & ট্রিকস আপনার শিশুকে পেটফাঁপা সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আর ও বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পেতে বাংলায় ইনফো এর সাথে থাকুন

আরো পড়ুন: অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? কৃমি চিকিৎসায় ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট

আরো ভালোভাবে বুঝতে এই ভিডিওটি দেখুন।

FAQ:

১. পেটে গ্যাস হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?

অস্থিরতা, ক্ষুধামন্দা।
অতিরিক্ত কান্না করা।
অতিরিক্ত মোচড়ানো।
পেট ফোলা ও তলপেট শক্ত হওয়া।
অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ।

২. বাচ্চাদের পেট ফাঁপা হলে কি করা উচিত?

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা হলে পেট থেকে গ্যাস দূর করার জন্য বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর কাঁধের উপর উপুড় করে নিয়ে পিঠের উপর থেকে নিচের দিকে হাত বুলাতে হবে।এতে পেটের গ্যাস দূর হবে এবং শিশু পেটপফাঁপা থেকে আরাম পাবে।

৩. অল্প খাওয়ার পর পেট ফুলে যায় কেন?

অনেকসময় দেখা যায় বাচ্চা অল্প খাওয়ার পরেও পেট ফুলে যায়, এর কারণস্বরুপ বলা যায় পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে।মায়ের দুধ স্বল্পতা কিংবা অনেক বেশি পরিমাণে দুধ থাকলে বাচ্চা খাওয়ার সময় বাতাস প্রবেশ করে ফলে বাচ্চার পেটে গ্যাস বৃদ্ধি পাই। এক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চা অল্প খাচ্ছে কিন্তু পেটে বেশি পরিমাণে গ্যাসের সৃষ্টি হচ্ছে ফলে পেটফাঁপা সমস্যা দেখা দেই।

Leave a Comment