অতিরিক্ত চুল পড়ছে বুঝবেন কিভাবে?
- চুল পড়া বর্তমানে ছেলে মেয়ে উভয়েরই সমস্যা।চুল পড়া নিয়ে হতাশার শিকার হচ্ছে বহু নারী। হতাশার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে আপনার চুল পড়া স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক?
- প্রতিদিন ৫০-১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক বিষয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে যে হারে চুল পড়ছে সেই হারে চুল গজাচ্ছে কিনা?
- যদি দেখা যায় চুল পড়া দিন প্রতি ১০০ এর বেশি অর্থাৎ সংখ্যায় বাড়ছে,কিন্তু সেই হারে চুল গজাচ্ছে না তখন সেটা অতিরিক্ত চুল পড়ছে হিসাবে ধরা হবে।
তবে হতাশার কিছু নাই, প্রতিটি সমস্যার যেহেতু সমাধান আছে তেমনি নিয়মিত পরিচর্চা, হেলদি ডায়েট,নিয়মিত চুলের প্রোটিন প্রদানের মাধ্যমে চুল পড়া সমস্যা কমানো যায়।
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ কি?
- প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে আমাদের কর্মস্হলে ছুটে যেতে হয়। চারপাশের দূষণ, ধুলোবালি আমাদের চুলের সাথে মিশে যায় & স্কাল্পে জমা হয়, ফলে চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্টের পাশাপাশি চুল পড়া শুরু হয়।
- আমাদের অনেকেরই কর্ম ব্যস্ততায় গোসলের পর চুল শুকানোর পর্যাপ্ত সময় থাকেনা,ফলে ভেজা চুলেই দীর্ঘক্ষণ থাকতে হয়,এতে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়।
- হেলদি ডায়েট অর্থাৎ ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার,কড লিভার অয়েল, মাছ,ডিমের কুসুম,দুধ, আয়রন পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ না করা।
- ডায়েট করতে গিয়ে নারীরা অনেক সময় পুষ্টিকর খাবার কম খান। এতে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান বিশেষত আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়।
- প্রতিদিন টাইট করে চুল বাঁধা হতে পারে আপনার চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
- মানসিক চাপ চুল পড়া বৃদ্ধি করতে পারে।
- সঠিক সময়ে না ঘুমালে অর্থাৎ (রাত ১২-ভোর ৪টা) চুল পড়া বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত ক্যামিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।
- উকুন,খুশকি,মাথার স্ক্যাল্পের মরা চামড়া চুল পড়া বাড়াতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
- ক্ষতিকর UV রশ্মির প্রভাবে চুল পড়া বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত ফাস্টফুড খেলে চুল পড়া দেখা দিতে পারে।
- জিনগত কারণে চুল পড়া শুরু হতে পারে,যার পরিসমাপ্তি টাকপড়া।
- বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে প্রোজেস্টেরণ থাকে। ফলে চুল পড়া বাড়তে পারে।
- বিভিন্ন রোগ,যেমন: পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, থায়রয়েড সমস্যা,লিভারের সমস্যা, কেমোথেরাপি নেওয়ার পর চুল পড়া শুরু হতে পারে।
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- চুলের গোড়া শক্ত করে বাঁধা যাবে না।
- ভেজা চুল বাঁধা যাবে না।
- ভেজা চুল না আঁচড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
- হেলদি ডায়েট তথা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার,কডলিভার অয়েল,মাছ,শস্যবীজ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- মানসিক চিন্তা দূর করতে হবে।
- সময় মতো (রাত ১২-ভোর ৪ টা) ঘুমাতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।
- ক্যামিকালমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
- ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে।
নারীদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
সৌন্দর্য প্রিয় মেয়েদের প্রধান আকর্ষণ চুল। চুলকে সিল্কি, মসৃণ,জেল্লাদায়ক করতে চেষ্টার কমতি থাকেনা মেয়েদের। ফলশ্রুতিতে জেনে না জেনে বহু ক্ষতিকর ক্যামিকেল এমনকি ঘরোয়া টোটকার ভুল ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত চুল পড়া শুরু হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় নারীদের চুল পড়ার সমস্যাকে বলে অ্যানড্রো জেনেটিক অ্যালোপিসিয়া।
মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার কিছু উপায়-
- রাতে ঘুমানোর আগে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত নারিকেল তেল ম্যাসাজ করুন। সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- একটি আলু ও একটি পেঁয়াজ রস করে একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ৩টি আলু রস করে একটি ডিমের কুসুম ও ১ চা চামচ মধু দিয়ে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে ৪০ মিনিট পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
- অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে চুলে ১ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পড়া কমানো ও মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করবে।
- ৩. ডিমের কুসুমের সঙ্গে সামান্য অলিভঅয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ১ ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। এটি চুল পড়া তো বন্ধ করবে এবং দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
- অলিভঅয়েল চুলের স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
- পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া যে শুধু মেয়েদের সমস্যা এমন নয়,চুল পড়া সমস্যা এখন ছেলেদের ও অতি পরিচিত একটা সমস্যা। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বাসার বাইরে থাকা লাগে বেশি। ফলে, তাদের চুল বেশি ড্যামেজ হয়।চুল রুক্ষ,শুষ্ক হয়ে যায় & অতিমাত্রায় চুল পড়া শুরু হয়। কর্ম ব্যস্ততায় পরিমিত পরিচর্চা করার সুযোগ থাকে না। ফলে,অকালে টাক হয়ে যায় বহু পুরুষ। ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার কয়েকটি কার্যকরী উপায়-
>> চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে ভিটামিন ই চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। ভিটামিন ই মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুলের ফলিকল উৎপাদনশীল থাকে। এছাড়াও ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্যকর রং বজায় রাখে।
>>সপ্তাহে একদিন মাথায় মেহেদী পাতা বেটে ব্যবহার করেতে পারেন।
>>মেথি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।এটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
>> অনেক সময় খাদ্যাভাসে পরিবর্তন হলে বা প্রোটিনের ঘাটতি হলে চুল পড়ে। তাই খাদ্যতালিকায় চর্বিযুক্ত, মাংস, মাছ, সয়াসহ প্রোটিন রাখুন। এগুলো চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ও চুল পড়া বন্ধ করে।
>> নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা জরুরি। এতে চুলের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা সহজেই দূর হয়। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়। মনে রাখবেন, চুল অপরিষ্কার থাকলে খুশকি ও মাথার ত্বকে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
>> কখনও ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। অনেক পুরুষই হয়তো এ বিষয়টি মানেন না। ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে। ফলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর সময় চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
খাদ্যের মাধ্যমে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ
- ওমেগা-3, প্রোটিন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান ও প্রচুর পরিমাণে সবজি খান। ওমেগা-3 প্রদাহ ও চাপ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে চুল পড়া কমে।
- সবুজ,হলুদ,কমলা বর্ণের ক্যারোটিনসমৃদ্ধ শাকসবজি খেতে হবে।
- কডলিভার অয়েল,বাদাম তেল,অলিভ অয়েল,এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার(মাছ,মাংস)খেতে হবে।
- বাদাম,শস্যাবীজ খেতে হবে।
শেষকথা(Conclusion)
চুল পড়া খুব কমন একটা সমস্যা। তাই চিন্তা না করে ঘরোয়া উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে, কি কারণে চুল পড়ছে সেটা আইডেন্টিফাই করতে হবে,প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যারোটিন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন।
FAQ
চুল পড়ার স্বাভাবিক পরিমাণ কত?
প্রতিদিন চুল পড়ার পরিমাণ ৫০-১০০ হলে সেটি স্বাভাবিক,এর থেকে বেশি চুল পড়লে & নতুন চুল না গজালে তখন অতিরিক্ত চুল পড়ছে বলে ধরা হবে।
চুল পড়া বন্ধ করতে কোন ভিটামিন খেতে হবে?
চুল পড়া বন্ধ করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভিটামিন ডি সমৃদ্ধখাবার খাওয়া।খাদ্য তালিকায় সেসব খাবার অবশ্যই রাখতে হবে যেগুলো থেকে ভরপুর ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
রাতে ঘুম না হলে কি চুল পড়ে?
রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের ঘুমানো অবশ্যই উচিত। ঘুম এর কম হলে ক্লান্তি অনুভব হয়,যা মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে,ফলে চুল পড়তে পারে।
চুল গজানোর জন্য কোন তেল ব্যবহার করতে হবে?
চুল পড়া শুরু হলে প্রথম খেয়াল রাখতে হবে পরিমিত পরিমাণ চুল গজাচ্ছে কিনা? চুল যদি না গজায় তাহলে নারিকেল তেল হালকা গরম করে প্রতিদিন রাতে স্ক্যাল্পে ঘষে ঘষে মালিশ করতে হবে,যাতে স্ক্যাল্পের রক্ত চলাচল বাড়ে। এছাড়া নারিকেল তেল ছাড়াও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল,বাদামের তেল,কালোজিরার তেল নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।