বর্তমান সময়ে একজন শিক্ষার্থী জীবন শুধুমাত্র লেখাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরঞ্চ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্রজীবন থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে ক্যারিয়ারের যুদ্ধ। সাধারণত লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন ছাত্রের আরো নানা ধরনের কাজের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। এই সময়টা এমন একটা সময় যখন আমরা টাকার প্রয়োজন হলে পরিবারের কাছ থেকে চাইতে পারিনা।
হয়তোবা নতুন একটা জিনিস কিনতে ইচ্ছা করলো পরিবারের কাছে টাকা চাইতে এমন জানি একটা লজ্জা বোধ লাগে। কারণ তারা এমনিতেও পড়ালেখার জন্য অনেক টাকা খরচ করে। তখন মনে হয় আমিও যদি কিছু টাকা উপার্জন করতে পারতাম, তাহলে হয়তোবা আমার সাথে জিনিসটা আমি নিজেই কিনতে পারতাম। তবে কিছু সহজ উপায় অবশ্যই রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করলে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। আজ আমরা একজন ছাত্র অবস্থায় থাকাকালীন কিভাবে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করা যায় এগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
নির্দিষ্ট দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন:
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। মুক্ত পেশা বা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ হলো কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অধীনে না থেকে মুক্তভাবে কাজ করাই হলো ফ্রিল্যান্সিং। যারা এই ধরনের কাজ করে থাকেন তাদেরকে বলা হয় মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার। এ ধরনের কাজে কোন নির্দিষ্ট মাসিক বেতন ভাতা নেই তবে স্বাধীনতা আছে। ইচ্ছামতো ইনকামের সুযোগ আছে। এজন্য স্বাধীন মনের লোকদের আয়ের জন্য এটা একটা সুবিধাজনক পন্থা।
আধুনিক যুগে বেশির ভাগ মুক্ত পেশা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পর্ক হয়ে থাকে। ফলে মুক্তা পেশাজীবীরা ঘরে বসেই কাজ করে উপার্জন করতে পারে। এ পেশার মাধ্যমে অনেক প্রচলিত চাকরি থেকে আয় করে থাকেন এই মুক্ত পেশাজীবীরা। ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজ করতে এ পেশার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি হাজারো বেশি কাস্টমারদের সাথে সুযোগ থাকে। মুক্ত পেশাজীবীরা বা ফ্রিল্যান্সারা সাধারণত কয়েক ধরনের কাজ করে থাকে। যেমন:
১. লেখালেখি ও অনুবাদ।
২. সাংবাদিকতা।
৩. গ্রাফিক্স ডিজাইন।
৪. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।
৫. কম্পিউটার প্রোগ্রামিং।
৬. ডিজিটাল মার্কেটিং।
৭. গ্রাহক সেবা।
৮. প্রশাসনিক সহায়তা।
টিউশনি করে ছাত্র অবস্থায় আয় করা সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম:
টিউশনি আদিমকাল থেকে একটা ছাত্রজীবন অবস্থায় ইনকামের অন্যতম অংশ। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী আরেকজন শিক্ষার্থী শিক্ষাদানের মাধ্যমে কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারেন। তবে বর্তমান বাজারে এই পেশাতে অনেক প্রতিযোগিতা বাড়ার ফলে নিজেকে সঠিকভাবে তৈরি করে নিতে হবে। তবে এই পেশা সবচেয়ে মজার বিষয় হলো অন্যজনকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে ওইসব বিষয়ে নিয়মিত চর্চা থাকার ফলে এক রকমে একটা দক্ষতা চলে আসে। তাই ভবিষ্যতে যদি কেউ শিক্ষাকতা কে যদি কেরিয়ার হিসেবে নিতে চাই তাহলে এটি তার জন্য সাহায্যকারী হয়ে ওঠে।
বাইক মেসেঞ্জারি :
ছাত্র জীবন থেকে যারা উপার্জন করতে চায় তাদের জন্য বর্তমান সময়ে বাইক মেসেঞ্জারি একটা অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটখাটো পার্সেল পাঠাতে চাই। কিন্তু প্রফেশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠালে এটি সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয় বহালও বটে।
তবে যেসব ছাত্রের ব্যক্তিগত বাইসাইকেল রয়েছে তারা চাইলে পার্সেল গুলো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতে পারে। যা ব্যক্তিগত খরচের জন্য খুবই কাজে লাগে। এ ধরনের কাজে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়ই এবং সাইকেলের মাধ্যমে দ্রুত ডেলিভারি দেওয়ার ফলে গ্রাহক এবং তরুণ উভয়ের মাঝে এ সার্ভিসটি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
যদি থাকে বাইক আর সাইকেল পাঠাও রাইট শেয়ারিং উপার্জন করতে আপনিও পারবেন :
বর্তমানে বাংলাদেশে পাঠাও নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে দুই ভাবে শিক্ষার্থীরা উপার্জন করতে পারে। একটি হলো রাইট শেয়ারিং। যেটি মূল তাৎপর্য হলো নিজের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে একজন যাত্রীকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়া। কাজের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ইনকাম করার সম্ভব।
আরেকটি উপায় হল কুরিয়ার সার্ভিস। এটি ওই সাইকেল মেসেঞ্জারিং এর মতই। শুধুমাত্র সাইকেলের জায়গায় মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পার্সেল গুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া মাধ্যমে ইনকাম করা যায়।
বাসা বা ছাত্রাবাসের আশেপাশে রেস্টুরেন্টে চাকরি :
বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম চাকরি একটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যা বছর কয়েক আগেও তেমন একটা দেখা যেত না। একজন শিক্ষার্থী চাইলে পড়াশোনা পাশাপাশি পার্টটাইম জব হিসাবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চাকরি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
অনলাইনে অথবা অফলাইনে কল সেন্টারের কাজ করে:
কল সেন্টার এখন উপার্জনের জন্য জনপ্রিয়তার একটি মাধ্যম। বিশেষ করে ভার্সিটি স্টুডেন্টদের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ স্বরূপ হয়ে এসেছে। বয়েজ কলের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়ায় এই চাকরির মূল কাজ। শিক্ষার্থীরা নিজ সুবিধামতো দিন-রাত যে কোন শিফট অনুযায়ী কাজ করতে পারে। এভাবেই একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে ছাত্র জীবনে উপার্জন করা সম্ভব। কল সেন্টারে সবচেয়ে সুবিধার দিকটি হলো এর কোন ধরা-বাধার নিয়ম নেই। নিজের ইচ্ছামত এ কাজে অংশ নেওয়া যায়।
এরকম আরো অনেক পথ রয়েছে যা আমাদের চোখের সামনে খোলা। হয়তোবা গভীর চিন্তার অভাবে বা সঠিক গাইডলাইন না থাকার কারণে সেইসব বিষয়ে জানতে পারি না। তবে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকলে আর হার না মানার মানসিকতা থাকলে যেকোনো কিছুই করা সম্ভব।
আর নয় বেকার ছাত্র জীবনে। উপরের মাধ্যম গুলো দিয়ে আমরা স্টুডেন্ট অবস্থায় নিজের লেখা পড়ার খরচের পাশাপাশি হাত খরচ ও করতে পারবো নিজের প্রয়জন মত। তাই পরিবারকে সাহায্য করতে ইত্যাদি পন্থা গুলো কাজে লাগাতে পারবেন। আর হে অবশ্যই কমেন্ট করে বলবেন আপনার থেকে কোন পদ্ধতিটি ভালো লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ!