প্রতিদিন আমাদের মধ্যে এমন অনেক কেই আছেন যারা প্রফেশনাল কাজের জন্য কিংবা বাড়ির কাজের জন্য নিজের যত্ন নিতে ভুলে যান। কিন্তু আমরা ভালো করেই জানি যে আমাদের ত্বক ও শরীরের ঠিকভাবে যত্ন না নিলে ভবিষ্যতে সেখান থেকে নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে যা খুবই চিন্তার বিষয়। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে এসেছি যা করতে আপনার খুব বেশি সময় নষ্ট হবে না, আপনি যতই ব্যস্ত থাকেন না কেন লাইফ এ এতো টুকু সময় নিজের ভালোর জন্য দিতেই পারেন তাই না?আমরা আজ মাত্র ৮ দিনের মধ্যে আপনি কিভাবে নিজের ত্বকের উচ্ছলতা ফায়ার পাবেন সেই নিয়েই আজকে আমাদের পোস্ট।
আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কপালে কুচ পড়তে শুরু করে কিংবা রাতে ঠিক ভাবে ঘুম না হওয়ার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। যেটা সহজে সারতে চায় না। পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা আগে ছিল সেটা হঠাৎ করে দেখা যায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা স্ক্রিন মলিন হয়ে যাচ্ছে কিংবা আগের ত্বকের যে উজ্জ্বলতার ভাবটা ছিল সেটা দ্রুত কমে যাচ্ছে। এসব সমস্যায় পড়লে অনেকেই কিন্তু ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। এসব সমস্যা যে শুধুই মেয়েদের হয় তা কিন্তু না। এরকম সমস্যা ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে কিন্তু খুব কম পোস্ট টি আমরা দেখতে পাই যা ছেলেদের ত্বকের জন্য নিয়ে লিখা।
কারণ এমন অনেকেই মনে করেন যে রূপচর্চা তো শুধুই মেয়েদের জন্য তাই না ?আপনি যদি এমন টা ভেবে থাকেন তাহলে ভুল ভাবছেন নিজের ত্বক ও শরীরের জন্য নেওয়া কোনও মাত্র একটি লিঙ্গের উপর ডিপেন্ড করে না। সেটা সব মানুষদের জন্যই প্রয়োজনীয়। কারণ আপনি যখন নিজে ভিতর থেকে খুশি থাকবেন আপনার ডায়েট ও ত্বকের যত্ন কিংবা শরীরের যত্ন নিবেন তখন দেখবেন আপনি মানসিক দিক থেকেও ততটাই খুশি থাকবেন। আজকাল ডিপ্রেশন এবং ফ্রাস্ট্রেশন এর রোগী প্রায় আমরা সবাই আর সেটা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় নিজেকে ভালো ও খুশি রাখা।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য কিন্তু আসলে নজর দিতে হবে মূলত খাবারের প্রতি এবং নিয়মিত ব্যায়ামের প্রতি। যে সকল খাবারগুলো খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে সেই বিষয় গুলোই আজ তুলে ধরছি। এই পোস্টে আমরা জানতে চলেছি মেয়ে কিংবা ছেলে উভয়েরই চেহারা সুন্দর করার কিছু গুরুত্ব পূর্ণ উপায় যা আপনাকে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আপনার চেহারাকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে। তবে হ্যা আপনাকে এইসব উপায় প্রতিদিন পালন করতে হবে নাহলে ভালো ফলাফল পাবেন না।
আসুন দেরি না করে জেনে নেই কি কি উপায়ে নিজেকে ৮ দিনে আমরা সুন্দর করে তুলবো ?
১.শরীরকে ডিটক্স করা
প্রথম পর্যায়ে যে কাজটি করা প্রয়োজন সেটি হলো শরীরকে ডিটক্স করা। ডিটক্স করা জন্য প্রয়োজন এন্টিঅক্সিজেন। প্রশ্ন হলো, এই এন্টি অক্সিজেন আপনি কোথায় পাবেন? সাধারণ কিছু খাবারের মধ্যেই কিন্তু এন্টি অক্সিজেন পাওয়া যায়। আপনি ওষুধ সেবন করে সেই পরিমাণ সুষম পুষ্টি কিন্তু পাবেন না।
তাই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আপনি চাইলে শরীরটাকে ডিটক্স করে ফেলতে পারেন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যদি আপনি লেবু, মধু এবং গরম পানি মিশ্রণ করে যদি আপনি খান তাহলে এটা আপনার শরীরে ডিটক্স করতে দারুন সাহায্য করবে। লেবু এবং মধু অ্যান্টিঅক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে। এই লেবু এবং মধু যখন আপনি খালি পেটে খাবেন তখন এটি আপনার শরীরে প্রবেশ করে কোষ থেকে যে টক্সিন গুলো তৈরি হয় সেগুলোকে বের করে দিবে।
ফলে শরীরের ডিটক্স হবে বা বিষমুক্ত হবে। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুব বেশি বা গ্যাস্ট্রিক আলসার আছে তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই লেবু, মধু এবং গরম পানি দুপুরের খাবারের পরে ভরা পেটে আপনি খাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে কোন সমস্যা হবে না বা সমস্যা কম হবে।
কিন্তু তারপরও যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি লেবুর বদলে এলোভেরা জুস ব্যবহার করতে পারেন বা অ্যালোভেরা জুস খেতে পারেন অথবা এলোভেরা জুসের যদি আপনার খেতে সমস্যা হয় যেমন: কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে এলোভেরা জুস খাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। সে ক্ষেত্রে আপনি লেবুর বদলে কিন্তু ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে এই খাবারগুলো আপনার ত্বক আগের তুলনায় অনেক উজ্জ্বল করে তুলবে এবং উজ্জল বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়া আপনি সকালে খালি পেটে ২ থেকে ৫ সের কাঠ বাদাম খেতে পারেন। এইটি ত্বকের জন্য বেশ ভালো।
২.খাবারে স্যালাড যোগ করা
আপনি বিভিন্ন ধরনের সালাত খাবার অভ্যাস করতে পারেন। সেটা সকালের নাস্তা কিংবা বিকালের নাস্তায় এক প্লেট সালাত খেতে পারেন। সেই সালাতের মধ্যে বিভিন্ন সবজি থাকতে পারে। যেমন: টমেটো, শসা, গাজর এবং সরিষার তেল অল্প পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার। এই ভিটামিন সি যুক্ত খাবার কিন্তু ত্বকের বন্ধু বলা যেতে পারে। ত্বকের বন্ধু এই ভিটামিন সি সাধারণত বিভিন্ন সবুজ শাকসবজি বা ফলমূলে পাওয়া যায়। এর মধ্যে লেবু এছাড়া আঙ্গুর, কমলা, পেয়ার, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আমলকি ইত্যাদি এসব খাবারের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।
এগুলো আপনি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এক থেকে দুইটা খাবার রাখতে পারেন। এসব খাবার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে নানা রকম ভূমিকা পালন করে। এছাড়া শাকসবজির মধ্যে ব্রকলি, টমেটো, বিভিন্ন ধরনের শাক, ফুলকপি ইত্যাদি এসব সবজির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এসব সবজি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
৩.Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড
Omega 3 এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুন একটি উপাদান এবং এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের শরীরে এটা কিন্তু তৈরি করতে পারে না। সুতরাং এটি খাবারের মাধ্যমে শরীরকে দিতে হবে। Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড কি কাজ করে? Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড সাধারণত সূর্যের যে ক্ষতিকর রশ্মি আছে সেখান থেকে আমাদের ত্বকে রক্ষা করে। এভাবে কিন্তু এটি ত্বকের যে সচ্ছলতা সেভাবে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
সাধারণত Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে তিসির তেল, কেরালা তেল। এসব তেল আমাদের দেশে প্রচলিত নয়। এছাড়া Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড সামুদ্রিক মাছের মধ্যে থাকে যেমন: সেলমন ফিশ, সাডেন ফিস এবং টুনা ফিস ইত্যাদি। এসব মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। দেশীয় মাছের মধ্যে ইলিশ মাছ এবং রুই মাছের মধ্যেও Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়া এসব মাছের ডিমও কিন্তু Omega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। বাদামের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণেOmega 3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এইগুলো চাইলে আপনি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বক আগের তুলনায় অনেক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।
৪ সকালের নাস্তায় নজর দিন
সকালের নাস্তায় তেলের ব্যবহার কমান। তেলের ব্যবহার যদি বেশি করেন যেমন, অনেকেই সকালের ঘুম থেকে উঠেই নুডুলস, পাস্তা কিংবা তেলের ভাজা পরোটা অথবা তেলের ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা গ্রহণ করেন। এইগুলো কিন্তু ত্বকে উজ্জ্বলতা নষ্ট করে। আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন সকালে নাস্তা হিসেবে আটা রুটি খেতে পারেন। এগুলো ত্বকের জন্য বেশ ভালো হবে।
৫.শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করতে হবে
শরীরে যদি ডিহাইড্রেশন থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরের ত্বকে যে টান টান ভাব থাকে সেটা কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেটা প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে আড়াই থেকে তিন লিটার পর্যন্ত পানি পান করতে হবে। এছাড়া পানি পান করার পাশাপাশি কিন্তু আপনি বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস খেতে পারেন। এরমধ্যে রয়েছে, ডাবের পানি, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস খেতে পারেন। এসব আপনার শরীরকে ড্রিহাইড্রেশন থেকে দূর করবে। এর ফলে আপনার ত্বকের জন্য খুবই উপকার হবে।
৬.প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় জিংক রাখুন
জিংকের অভাবে কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে ১- তৃতীয়াংশ মানুষ কিন্তু ঠিকভাবে জিংক গ্রহণ করে না। জিংক কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পাওয়া যায়। যেমন: মাংস, ডিম, দুধ, পেয়ারা ইত্যাদি এসব খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জিংক থাকে। তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিন খাবারের মধ্যে একটা খাবার জিংকের অভাব পূরণ হয়।
৭.রান্নার তেলে পরিবর্তন আনুন
তেল ছাড়া জীবন যেহেতু চলবেই না সেজন্য যাদের সামর্থ্য আছে তারা চেষ্টা করবেন অলিভ অয়েল ব্যবহার করা। অলিভ অয়েল ত্বকের জন্য যেমন ভালো ঠিক তেমনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেই তেল ব্যবহার করেন না কেন আপনি অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হয়ে থাকলে দিনে পাঁচ থেকে ছয় চামচের বেশি তেল কিন্তু আপনার জন্য বরাদ্দ নেই। তাই চেষ্টা করবেন এর মধ্যে ব্যবহার করতে।
৮. গ্রিন টি এর মাধ্যমে চেহারা সুন্দর করা যায়
গ্রিন টি কিন্তু একটি এন্টি অক্সিজেন। এটি ত্বকের সচলতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই এ খাবারটি অবশ্যই খাদ্য তালিকার মধ্যে রাখতে পারেন। তাহলে আপনার তো আগের তুলনায় অনেক সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
৯.প্রচুর পরিমানে ফল খান
রোজকার ডায়েট এ ফল রাখুন। আমরা অনেককেই ডেইলি আমাদের ব্রেকফাস্ট এ ফল খাই না কিন্তু সব সিসোনাল ফল কিন্তু খাওয়া দরকার। ফল আপনার ত্বক এর জন্য খুবই উপকারী। ফল একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির একটি দুর্দান্ত উত্স এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা আমাদের সারির ও ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফল ফ্ল্যাভোনয়েড সহ স্বাস্থ্য-বর্ধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির বিস্তৃত পরিসরও সরবরাহ করে। ফলমূল এবং শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া একজন ব্যক্তির হৃদরোগ, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
১০. মেডিটেশন করুন
আপনি যদি প্রতিদিন অল্প করে হলেও মেডিটেশন এর হ্যাবিট করতে পারেন তাহলে এটা আপনার মন ও শরীর কে সব সময় রিলাক্স রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিনের মেডিটেশন আপনাকে কাজে আরও ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেডিটেশন আপনার ফোকাস এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে এবং আপনার মাল্টিটাস্ক করার ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। মেডিটেশন আমাদের মনকে পরিষ্কার করতে এবং বর্তমান মুহুর্তে ফোকাস করতে সাহায্য করে – যা আপনাকে একটি বিশাল উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এতে বিষণ্নতার ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে। মেডিটেশন এর দ্বারা আপনার শরীর ও মন দুটোই সুন্দর হবে।
পোস্টটি আপনার ভালো লাগলে আমাদের কে অবশ্যৈই জানাবেন। সবশেষে আমরা এটা বলতে পারি আপনি যদি এখন থেকেই আমাদের দেখানো মতো উপরের ১০ টি টিপস মেনে চলতে পারেন ,ডায়েট এ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন এবং তারসাথে সময় মতো ঘুমানো ও খাবার খেতে পারেন তাহলে আপনার চেহারা ও শরীরের পরিবর্তন নিশ্চয় হবে। আশাকরি এই সব উপায় আপনি সঠিক ভাবে মেনে চললে ৮ দিন থেকেই একটা পরিবর্তন লক্ষ করতে পারবেন। পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।