নারীস্বাস্থ্যের একটি সাধারণ সমস্যা হলো ওভারিয়ান সিস্ট। এটি হলো ডিম্বাশয়ে (ovary) জমে থাকা তরল বা আধা-ঠাসা পদার্থযুক্ত একটি থলে বা গাঁট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ এবং নিজে থেকেই চলে যায়, তবে কিছু কিছু সিস্ট গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই পোস্টে আমরা ওভারিয়ান সিস্টের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যাতে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
ওভারিয়ান সিস্ট কী?
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট হলো ডিম্বাশয়ে তরল বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে পূর্ণ একটি ছোট থলে। এটি এক বা উভয় ডিম্বাশয়ে গঠন হতে পারে। বেশিরভাগ ওভারিয়ান সিস্ট হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয় এবং সময়ের সাথে নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে কিছু কিছু সিস্ট বড় হতে পারে এবং ব্যথা বা অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
ওভারিয়ান সিস্টের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ
ওভারিয়ান সিস্টের উপসর্গ সবার ক্ষেত্রে একরকম নাও হতে পারে। অনেক সময় কোনও উপসর্গ দেখা যায় না এবং সিস্টটি আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে ধরা পড়ে। তবে নিচে কিছু সাধারণ উপসর্গ তুলে ধরা হলো:
১. পেট বা তলপেটে ব্যথা
ডিম্বাশয়ে সিস্ট থাকলে পেটের নিচের দিকে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি অনেক সময় এক পাশেই বেশি হয়, যেখানে সিস্টটি অবস্থান করছে।
২. মাসিক চক্রে পরিবর্তন
মাসিক অনিয়মিত হওয়া, ব্যথাযুক্ত পিরিয়ড বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া ওভারিয়ান সিস্টের একটি ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে হরমোন-নির্ভর সিস্টের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
৩. পেট ফুলে যাওয়া
সিস্ট বড় হলে পেট ফোলা বা ভারী অনুভব হতে পারে। অনেক সময় এটি অন্ত্রের গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য ভাবের মতো মনে হতে পারে।
৪. ঘনঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে চাপ
সিস্ট যদি মূত্রথলির উপর চাপ সৃষ্টি করে, তবে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ বা অস্বস্তি হতে পারে।
৫. যৌনমিলনে ব্যথা
অনেক নারী যৌনমিলনের সময় তলপেটে ব্যথা অনুভব করে থাকেন, যা সিস্টের কারণে হতে পারে।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি
বড় সিস্ট হলে এটি পাকস্থলী বা অন্ত্রের উপর চাপ ফেলতে পারে, ফলে বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
৭. ওজন বৃদ্ধি
সিস্ট অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যার ফলে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি উপরের কোনো উপসর্গ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে বা হঠাৎ তীব্র ব্যথা, জ্বর, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা রক্তপাত দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক পরীক্ষা ও আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে সমস্যা নির্ণয় করা যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসা
চিকিৎসা সিস্টের ধরন, আকার ও উপসর্গের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে নিচের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:
- পর্যবেক্ষণ (Watchful Waiting): ছোট ও উপসর্গহীন সিস্টগুলোর ক্ষেত্রে কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
- ঔষধ সেবন: হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
- অপারেশন: যদি সিস্ট বড় হয়ে যায় বা ক্যান্সারজাতীয় উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে সার্জারির মাধ্যমে সিস্ট অপসারণ করা হয়।
উপসংহার
ওভারিয়ান সিস্ট একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষা না করার মতো নারী স্বাস্থ্য সমস্যা। সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ এই সমস্যার থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। যদি আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার শরীরে এই ধরনের উপসর্গ রয়েছে, তাহলে দেরি না করে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই আপনাকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।