আমরা যারা মধ্যবিত্ত লোক গরমকালে আমাদের AC চালাতে সবার এক প্রকার ভয় ই করে। আবহাওয়া র আদ্রতা গরমকালে এখন দিন দিন বেড়েই চলছে তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে AC র শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। কিন্তু চিন্তা একটাই সারারাত AC চালালে মাসের শেষে আসবে মোটা টাকার বিল যা দেখে আমাদের সবারই হকচকিয়ে উঠার কথা। আজ আমরা এই AC চালালেও কি করে ইলেকট্রিক বিল কে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে সেটা নিয়েই আপনাদের কিছু টিপস শেয়ার করবো।
প্রথমে আপনাকে যা করতে হবে AC কেনার আগে ভালো করে কোন কোম্পানির AC এর কি কি ফিয়েচার আছে তা আগে ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। এরকম অনেক কোম্পানির ACআছে যাদের AC এর ফাঙ্কশন খুব ভালো এবং এসকল ব্র্যান্ড এর AC তে ইলেকট্রিক বিল কম আসার জন্য পাওয়ার সেভিংস এর সেটিং করা থাকে। তারপরে আসি AC এর ব্যবহারের উপর।
কিভাবে AC চালালে বিল কম আসে?
AC এর ব্যবহার সঠিক ভাবে যদি আপনি না করেন তাহলে আপনার ইলেকট্রিক বিল এর কখনোই স্রাশ্রয় করতে পারবেন না। আপনি যদি ইলেক্ট্রিক বিল সত্যি কমাতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু কথা মেনে চলতে হবে। সেই কথা গুলো মেনে চললে মাসের শেষে দেখবেন আপনার ইলেকট্রিক বিল অনেকটাই কম আসবে। তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নি এমন কি কি বিষয় মাথায় রাখলে আমাদের এই ইলেকট্রিক বিল বেশি আসার সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পাওয়া যাবে।
তাপমাত্রা সঠিক ভাবে সেট করুন–
আপনাকে AC এর সঠিক তাপমাত্রা সেট করতে হবে। যেকোনো তাপমাত্রায় AC চালালে আপনি কখনোই বিল এর সাশ্রয় করতে পারবেন না। কারণ তাপমাত্রার উপর ac এর কম্প্রেসর নির্ভর করে। আপনি যত কম তাপমাত্রা সেট করে রাখবেন কম্প্রেসর তত বেশি চলবে, যার ফলে বিদ্যুৎও খরচও তত বেশি ই হবে। একটি গবেষণায় জানা গেছে যে ,AC চালানোর সময় প্রত্যেক ডিগ্রি তাপমাত্রা কমানোর জন্য 6 শতাংশ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়। কাজেই যত বেশি আপনি তাপমাত্রা সেট করবেন বিদ্যুৎ ও তত কম খরচ হবে।
এখন আপনারা হয়তো ভাবছেন কত এসি কত তে চালানো উচিত?
তাহলে এখানে বলি আপনি ১৮ °C-র বদলে তাপমাত্রা ২৪ °C রাখুন এই তাপমাত্রা খুবই পারফেক্ট দিনের বেলার জন্য। কারণ গরম কালে দিনের বেলায় বাইরের তাপমাত্রা ৩৪-৩৮ °C-এর মধ্যে ওঠা নামা করতে থাকে। তাই আপনি যদি তখন ২৪°C তে AC এর তাপমাত্রা রাখেন তাহলে অনেকটাই আরাম অনুভব করবেন। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৩৬-৩৬ °C-এর মধ্যে উঠানামা করতে থাকে। আপনি ১৮ °C তে না রেখে ২৪ °C তে রাতেও তাপমাত্রা সেট করে ঘুমান দেখবেন কিছু দিনের মধ্যেই আপনার এটি অভ্যাস এ পরিণত হয়ে যাবে। আপনার শরীর ও তখন সেই তাপমাত্রা তাই এডজাস্ট করে নিবে।
ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখুন –
আপনি যখন ই বাড়িতে ac চালাবেন সব সময় মাথায় রাখবেন যে বাড়ির জানালা দরজা ভালো ভাবে বন্ধ করা আছে নাকি ?না থাকলে আগে সেগুলো বন্ধ করুন তারপর AC চালাবেন। সব সময় মনে রাখবেন আপনি AC তখন এ চালাবেন যখন আপনার বাড়ির সব জানলা দরজা ভালো করে সিল থাকবে। দরকার পড়লে ভারী পর্দা ব্যবহার করবেন।
বন্ধ রাখুন বাড়ির সব ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস –
বাড়িতে যখন AC চালাবেন তখন যদি আপনি বাড়ির সব ধরণের ডিভাইস বন্ধ রাখতে পারেন সেই ক্ষেত্রে আপনার অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ হবে। আমাদের প্রত্যেক কের বাড়িতেই কিছু না কিছু অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থাকে যেমন টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি। সব ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে এক ধরণের রেডিয়েশন নির্গত হয় যার ফলে রাতের বেলায় AC চালানোর সাথে সাথে যদি আপনার বাড়ির সমস্ত ডিভাইস ও চলতে থাকে এতে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হবে , তাই AC চালানোর আগেই যদি আপনি এই ধরনের ডিভাইস বন্ধ রাখতে পারেন তখন কম বিদ্যুৎ অনেকটাই কম খরচ হবে।
AC চালান প্রয়োজনে –
এমন অনেককেই আছেন যাদের বাড়িতে পুরো রাত AC চালানো থাকে যখন হয়তো তেমন প্রয়োজন থাকে না যেমন কেউ কেউ সারা রাত্র AC চালিয়ে ঘুমান কিন্তু একবার যখন ঘর ঠান্ডা হয়ে যায় তখন শুধু ফ্যান চালিয়ে নিলেই কিন্তু রুম টেম্পারেচার ঠান্ডা হয়েই যায়। আমরা প্রত্যেক কেই জানি AC তে টাইমার ব্যবহার করা যায় তথাপি আমরা অনেক কেই সেটার ব্যবহার করি না। ঘুম থেকে ওঠার অত্যন্ত 1-2 ঘণ্টা আগে AC বন্ধের সময় টি সেট করে রাখুন। আপনি যত AC টাইমার ব্যবহার করবেন বিদ্যুৎ বাঁচাতে ও ততটাই পারবেন। চেষ্টা করবেন সারা রাত AC চালানোর অভ্যাস না করতে।
AC-র সঙ্গে সঙ্গে ফ্যানও চালান –
সব সময় চেষ্টা করবেন AC এর সাথে সাথে ফ্যান চালানোর। AC এর সাথে সাথে যদি আপনি ঘরে ফ্যান চালিয়ে রাখেন তাহলে দেখবেন রুম টি অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকবে। তারপর যদি কিছুক্ষন পর আপনি AC বন্ধ ও করে দেন তথাপিও ঘরের তাপমাত্রা ঠান্ডা ই থাকবে তবে হা দরজা জানলা কিন্তু ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে।
আপনার AC নিয়মিত সার্ভিসিং করাবেন –
আমরা অনেক কেই আছি যারা AC নিয়মিত সার্ভিস করে থাকি না। আর ঠিক সেই কারণেই আমরা পরে এটার জন্য নানান সমস্যায় ভুগে থাকি। এখানে একটা কথা বলছি সেটি হলো আপনি যদি আপনার AC কে নিয়মিত সার্ভিস করাতে পারেন তখন আপনার AC-র এফিসিয়েন্সি ও বেশি হবে। যার ফলে আপনার মাসের শেষে যে কাড়ি কাড়ি বিল দিতে হয় AC চালানোর জন্য সেটি দেখবেন তখন একটি পরিমানের মধ্যে এসে যাবে। এবং আপনি এর জন্য বিদ্যুৎ বিল এর খরচ টিও কমাতে পারবেন। আশা করি আমাদের এই কথা তা আপনারা মাথায় রেখে এখন থেকে নিয়মিত AC সার্ভিসিং করবেন।
এয়ার কন্ডিশনে শক্তি সাশ্রয় করার উপায় ।
আপনাকে যদি টাকা সাশ্রয় করতে হয় এসি চালানোর ক্ষেত্রে তাহলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে এসি সার্ভিসিং এর কিছু খুটিনাটি বিষয়।
আসুন এখন জেনে নেই এসি সার্ভিসিং এর কিছু খুঁটিনাটি বিষয়গুলো –
আপনি সব সময় গরমের শুরুতেই AC চালানোর ঠিক আগে একজন ভালো এক্সপার্ট সার্ভিস প্রভাইডারকে দিয়ে অবশ্যই চেক করিয়ে নিবেন। নিয়মিত ব্যবহারের জন্য বাতাসে থাকা প্রচুর ধুলাবালি এসির এয়ার ফিল্টারে জমা হতে থাকে এর কারণে আপনার বৈদ্যুতিক সংযোগও নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। তাই অনেক দিন পর AC চালানোর আগে একবার পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। প্রায়ই দেখা যায় অনেক দিন পর AC চালালে একটা আওয়াজ করতে থাকে। অনেক সময় AC থেকে গড়িয়ে জল ও পড়তে থাকে। এবং সাধারণত দীর্ঘদিন এসি বন্ধ থাকলে কুলিং বা উষ্ণতা কমিয়ে ঘরকে ঠান্ডা করার ক্ষমতা টিও কমে যায়। এর জন্য এসির ভেতরের নেট খুলে ধুলোবালি পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। তবে কুলিং একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলে বুঝে নেবেন, এসির ভেতরের গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। তখন গ্যাস রিফিলের জন্য আপনাকে দক্ষ টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিতে হবে। তাই গরমের শুরুতেই একবার এসির এয়ার সকেট, বৈদ্যুতিক সংযোগ, ফিল্টার—এসব ঠিকমতো ভালোভাবে পরীক্ষা করিয়ে নিবেন।
অনেকের আবার AC তে ঠিকমতো ভোল্টেজ কাজ করে না তাই মাঝে মাঝে বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন চেক করিয়ে নিলে ভালো হয়। এতে AC এর কোনও ধরণের বৈদ্যুতিক সমস্যা হবে না। ইলেকট্রিক সুইচে এ সমস্যা থাকলে AC বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাই সেটি কে অবৈশ্যৈই নিয়মিত চেক করে নিলে ভালো। আবার কখনো কখনো দেখা গেছে এসি চলে ঠিকই কিন্তু ঘর ঠান্ডা হয় না। এটার পেছনে থার্মোস্ট্যাট দায়ী। আবার কখনো ওভারলোড প্রটেক্টর খারাপ হয়ে যেতে পারে, ও গ্যাস লিকেজের সমস্যা হতে পারে। তখন থার্মোস্ট্যাট ও গ্যাস পাইপ দুটো কে ভালো ভাবে চেক করা উচিত। প্রয়োজনে পাল্টে নিলেই আর সম্যসা হবে না। খেয়াল রাখবেন বাড়ির ফিউজ বারবার কেটে যেন না যায়। এটা কিন্তু বিপদের লক্ষণ। এসি লাইন বা মোটরের ভেতরে শর্ট সার্কিট হয়ে এমনটা হতে পারে। প্রয়োজনে ভেতরটা চেক করে ও মোটর পাল্টে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।
শেষকথা -আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্ট টি আপনাদের খুবই কাজে আসবে।
আমরা আপনাদের কে কিছু টা হলেও চেষ্টা করেছি যাতে আপনাদের কিভাবে AC চালালেও ইলেকট্রিক বিল কম আসবে ও তারসাথে AC কিভাবে ভালো রাখবেন সেই দিকটি খেয়াল রেখে আজকে আপনাদের জন্য এসি চালানোর কিছু টিপস শেয়ার করলাম। বাংলায় ইনফো তে এইভাবে আরো ভালো ভালো টিপস পেতে হলে আমাদের সাথে অবৈশ্যৈই যুক্ত থাকুন। ধন্যবাদ।