বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে? এর লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু শব্দটি এখন সবার মুখে মুখে আলোচিত । বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে এখন মানুষ আতঙ্কিত ডেঙ্গু কে নিয়ে । আমরা অনেকেই জানিনা ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। এর জন্য সাধারণ জ্বর কে হয়তো আমরা ভেবে বসি ডেঙ্গু জ্বর এবং আমরা ভয়ে  আতঙ্কিত হয়ে পড়ি ।আজ আমরা জানবো ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি  ?  ডেঙ্গু রোগ হলে কি করব সেই সম্বন্ধে আমরা জানবো ।

ডেঙ্গু কি 

ডেঙ্গু জ্বর মশা বাহিত একটি জ্বর। যে মশার মাধ্যমে মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হয় সে মশার নাম হল এডিস মশা। তার মানে সব মশাই কিন্তু এডিস মশার নয় ।এই ডেঙ্গু রোগে কেউ তখনই আক্রান্ত হবে যখন কোন মশা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে সেই ভাইরাস বহন করে তারপর  কোন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে। তাহলে আমরা এখন বুঝতে পারলাম ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে একজনের হতে পারে। 

কোথায় মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয় 

উপক্রান্তিয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম-প্রধান দেশের মানুষ ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয় । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায় কারণ এই জায়গা গুলো উপক্রান্তীয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ।

 ভারতবর্ষের সাধারণত গ্রীষ্ম এবং বর্ষা এই দুই ঋতুতে এই রোগ বৃদ্ধি পায় ।এপ্রিল মাসের দিকে এই রোগ অনেক বেশি হয় । আবার জুন জুলাই মাসের দিকে এই রোগের প্রকোপ কমতে থাকে ।বর্তমানে বাংলাদেশের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু জ্… দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো আমরা অনেকেই জানিনা।  তাই আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা সাধারণ জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর হিসেবে ভেবে নিই । আমাদের প্রত্যেকের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া ভালো । যেন ভবিষ্যতে আমরা সহজে চিহ্নিত করতে পারি কোনটা সাধারণ জ্বর আর কোনটা ডেঙ্গু জ্বর । চলুন জেনে নেওয়া যাক ।

ডেঙ্গু জ্বর হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রভাব টা একটু বেশি হয়। নিচে দেওয়া হল ডেঙ্গু জ্বরের বিভিন্ন লক্ষণ 

উচ্চ জ্বরের মাত্রা 

ডেঙ্গু জ্বর হলে কখনো আপনার জ্বর কমে আবার বাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের উচ্চ মাত্রাটি হল ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি । (উচ্চ জ্বর 40°C/104°F)

প্রচন্ড মাথা ব্যাথা 

আপনি যদি ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত হন আপনার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করবে। আপনারা অসহনীয় মাথা ব্যথা হবে যা ডেঙ্গু জ্বরের একটি অন্যতম লক্ষণ ।

চোখের পেছনে ব্যথা 

ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি লক্ষণ হল আপনার মনে হবে চোখে পিছনের দিকে  ব্যথা হচ্ছে।

মাংসপেশিতে ব্যথা

আপনার সারা শরীরে ব্যথা থাকবে যদি আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয় ।

ত্বকে র‍্যাশ হওয়া 

আপনার চামড়ায় লালচে দাগ অথবা র‍্যাশ হতে পারে এটিও একটি ডেঙ্গু রোগের  লক্ষণ ।

শরীর ঠান্ডা হওয়া 

ডেঙ্গু জ্বর হলে আপনার মনে হতে পারে আপনার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। 

বমি ভাব 

আপনার বমি বমি ভাব হবে এটি একটি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ।

মাথা ঘোরা 

ডেঙ্গু রোগের আরেকটি লক্ষণ হল মাথা ঘোরানো।  আপনার মনে হতে পারে আপনার মাথাটা ঘুরাচ্ছে ।

গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ আরো থাকে সেগুলো হল

  • তীব্র পেট ব্যথা – যখন আপনার গুরুতর ডেঙ্গু হবে তখন আপনার ভীষণ পেট ব্যথা করবে ।
  • পেট ফুলে যাওয়া – গুরুতর ডেঙ্গু রোগের আরেকটি লক্ষণ হল পেট ফুলে যাওয়া ।
  • রক্ত বমি হওয়া – গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর রক্ত বমি হয়ে থাকে।
  • দাঁতের মাড়িতে রক্তক্ষরণ – গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে ।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া – শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এ মন্তব্যটি প্রত্যেক দ্রুত ডেঙ্গু রোগীরা করে থাকে।
  • দ্রুত নাড়ির স্পন্দন – গুরুতরো ডেঙ্গু রোগীদের নাড়ি স্পন্দন দ্রুত হয়ে থাকে। 
  • ঘুম ঘুম ভাব – সাধারণত গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর ঘুম ঘুম ভাব বেশি হইয়া থাকে ।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু রোগীকে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করানো হয় এবং ডেঙ্গু রোগীর প্রতিনিয়ত যত্ন করলে । এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী সুস্থতার দিকে চলে আসেন।

 ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত থাকে। ডেঙ্গু রোগীর সুস্থতার দিকে ডেঙ্গু রোগীর সুস্থতার দিকে চলে আসলেও চিকিৎসকরা বলে থাকেন যে জ্বর কমলে বা রোগী যদি ভালো হয়ে যায় তারপরেও রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কমে যেতে পারে এবং তখনই রক্তক্ষরণ সহ নানা জটিলতা দেখা দেয় । তাই আপনার শরীরটি যদি সুস্থ হয়ে যায় তাহলেও আপনি সাবধানে থাকবেন ।

আরো পড়ুন- ৭ দিনে ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা 

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোন বিশেষ ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি। গবেষকরা এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দিনরাত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা  হয়ে থাকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে। কিন্তু চিকিৎসকরা ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামরশ দিয়া থাকেন। অনেকেই ব্যথা হলে ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তা হিতে বিপরীত হতে পারে । চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সাবধান করেছেন কারণ ব্যথা নাশক ওষুধ দেহের রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।  যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু । তাই ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন করার নিয়ে সতর্ক থাকবেন। 

ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া প্রতিকার 

প্রথমেই বলা হয়েছে ডেঙ্গু রোগের কোন  বিশেষ ঔষধ বা চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি । তাই সাধারণত ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার করা হয় চলুন জেনে নেই ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে

  •  ডেঙ্গু রোগ যেহেতু মশা থেকে হয় তো আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেকে এবং পরিবারকে মশা থেকে রক্ষা করা ।
  •  মশা যেন আপনার আশেপাশে না থাকতে পারে তাই মশা বিস্তার বন্ধ করুন । মশা বিত্তার বন্ধ করার জন্য আপনার আশেপাশে জল জমতে দেবেন না । যেসব জায়গায় জল জমতে পারে সেসব জায়গায় সপ্তাহে একবার হলেও নজর দিন ।
  •  মশা থেকে বাঁচার জন্য আপনি সর্বদা আপনার শরীর ঢেকে রাখুন অর্থাৎ লম্বা হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট ।মৌজা ইত্যাদি পড়ে থাকুন 
  • ডেঙ্গু ভাইরাস বহন কারি মশা বেশি সক্রিও থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা। তাই আপনি এই সময় বেশি সতরক থাকবেন ।
  • রাতে ঘুমানর সময় মসারি ব্যাবহার করবেন।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য খাবার 

যখন আমরা অসুস্থ হই আমাদের পুষ্টির প্রচন্ড দরকার হয় । তো ডেঙ্গু হলেও আমাদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে । যে সমস্ত খাবার ডেঙ্গু রোগীদের জন্য উপকারী হবে সেগুলো হলো 

  • ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীর যেহেতু প্লাটিলেট কমে যায় এর জন্য রোগীকে প্লাটিলেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে । যেমন সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালং শাক, আদা, রসুন ও হলুদ।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আমরা খেতে পারি পেয়ারার শরবত ।এই পানীয়টি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং ডেঙ্গু উপশম করব।
  • ডেঙ্গু রোগীদের যেহেতু রক্তের প্লাটিলেট কমে যায় তাই প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য নিম পাতার রস অত্যন্ত উপকারী। নিম পাতা রক্তের শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে । এছাড়াও এর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গুণও আছে ।
  • জিংক সমৃদ্ধ খাবার ডেঙ্গু রোগীর দেহের জন্য দরকার । যা আমরা পেতে পারি সামুদ্রিক মাছ মটরশুঁটি এবং বাদাম থেকে ।
  • ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আরেকটি উপকারী খাদ্য হলো আইরন সমৃদ্ধ খাবার । যা আমরা পেতে পারি মাংস ও মটর শুঁটি থেকে ।
  • এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীর নিজের শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে ।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য যেসব খাবার মানা 

আমরা যখন অসুস্থ হই তখন আমাদের হজম শক্তি কমে যায় । সেই একই ঘটনা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ঘটে থাকে । তাই যে সমস্ত খাবার সহজে হজম হয় না সেগুলো আমাদের পক্ষে না খাওয়াই ভালো ।সহজে হজম হয় না এরকম কয়েকটি খাবার হল 

  • আমিষ জাতীয় খাবার 
  • চর্বি জাতীয় খাবার 
  • তৈলাক্ত খাবার 
  • ভাজাভুজি বা মুখরোচক খাবার ।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে 

আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ডেঙ্গু হলে গোসল করা যাবে  । 

কিন্তু বেশিক্ষণ ধরে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করাই ভালো। শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে ।তাই আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ।

ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আমাদের শেষ মন্তব্য

 বাংলায় ইনফোর সাহায্যে আমরা এখন জানতে পেরে গেলাম ডেঙ্গু রোগ হলে আমাদের কি করতে হবে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সহ আরো অনেক কিছু। আপনার যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় আপনি ভয় পাবেন না । আতঙ্কিত না হয়ে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সর্বদা মনে সাহস রাখুন। আমরা সর্বদা আপনার উপকারের জন্যই কাজ  করি।

আপনার জন্য এরকম উপকারী আর্টিকেল আমরা আরো নিয়ে আসবো তাই আমাদের সাথে থাকুন । ধন্যবাদ ।

Leave a Comment