জাফরান হেয়ার অয়েল এমন একটি অয়েল যার উপকারী উপাদান গুলি খুব সহজে চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে চুল ও স্ক্যাল্পে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। ফলে পুষ্টির অভাবে অতিরিক্ত চুল পড়া দ্রুত বন্ধ হয়।
জাফরান আয়ুর্বেদে খুবই পরিচিত নাম। এটি দুর্লভ একটি ভেজস উদ্ভিত। জাফরান একটি মশলা জাতীয় খাদ্য। এটি খুব দামি হওয়ায় এবং এর সরবরাহ কম থাকায় বাংলাদেশে দুর্লভ। । চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা প্রায়শই নতুন নতুন পদ্ধতি অনুকরণ করে থাকি। নিত্য নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন আবার অনেকে পারলারের ট্রিট্মেন্ট নিয়ে থাকেন। এতে সাময়িক কিছু উপকার মনে হলেও চুলের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায় যা অপুরনীয়। তাই এসব বাদ দিয়ে ন্যাচারাল্ভাবে ব্যাবহার করুন স্থায়ী উপকারি জিনিস জাফরান। আসুন জেনে নেই জাফরান হেয়ার অয়েল উপকারিতা ও বানানো এবং ব্যাবহারের নিয়ম।
জাফরান কি?
ধারনা করা হয় এই উদ্ভিদের উৎপত্তি গ্রীসে। বর্তমানে চীন, ইরান স্পেনসহ অনেক দেশে এটা চাষ করা হয়। জাফরান মূলত একটি বাংলা শব্দ। ইংরেজিতে জাফরানকে বলা হয় saffron crocus .যার বৈজ্ঞানিক নাম হল Crocus sativus .এটি এক ধরণের সপুষ্পক উদ্ভিদ। জাফরান কেশর নামে পরিচিত। এটি ফুলের শুকনো স্টিগ্মা দিয়ে তৈরি। ফুল থেকে কেশরসমূহ বাছাই করে সেই কেশরগুলোই আমাদের কাছে জাফরান হিসেবে পরিচিত। আর এই জাফরান থেকেই তৈরি হয় জাফরান হেয়ার অয়েল বা জাফরান তেল।
জাফরান তেল তৈরিতে কি কি সরঞ্জাম প্রয়োজন?
জাফরান হেয়ার অয়েল জাফরানের নির্যাসসহ কয়েকটি বিরল অসাধারন ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরী হয় যা চুলের জন্য খুবই কার্যকর। ভেষজ উপাদানের মধ্যে আয়রন এবং জিঙ্ক থাকে যা স্ক্যাল্পে অক্সিজেন প্রবাহ করে এবং নতুন টিস্যু তৈরি করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুল দ্রুত বাড়াতে সহায়তা করে। নিম্নে জাফরান হেয়ার অয়েল বানানোর কার্যকরী টিপস দেওয়া হলোঃ
জাফরান হেয়ার অয়েল বানানোর জন্য যে যে সরঞ্জাম গুলো লাগবেঃ
- নারকেল তেল
- আল্মন্ড অয়েল
- ক্যাস্টর অয়েল
- মেথি পাউডার
- কালোজিরা পাউডার
- কিছু পরিমান জাফরান।
জাফরান হেয়ার অয়েল বানানোর নিয়ম বা কিভাবে বানায়?
পরিমানঃ ১০০ গ্রাম খাটি নারকেল তেল, তার চার ভাগের একভাগ অর্থাৎ ২৫গ্রাম ক্যাস্টর অয়েল, ২৫ গ্রাম আল্মন্ড অয়েল, এক চা চামচ মেথি পাউডার, কালোজিরা পাউডার এক চা চামচ, সামান্য কিছু বা হাপ চা চামচ জাফরান।
একটা পাত্রে কিছুটা পানি নিয়ে চুলার উপর রাখবো। সেই পানির ভিতরে ছোট আর একটা পাত্রে এই সরঞ্জামের মিশ্রনটা নিয়ে চুলার আচ মিডিয়াম অবস্থায় রেখে জ্বাল দিতে থাকবো। ৮-১০ মিনিট জ্বাল করে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে কোন ছাকনির সাহায্যে ছেকে একটা কাচের বোতলে ভরে রাখতে হবে। কারন কাচের বোতলে রাখলে তেল দীর্ঘদিনভালো থাকে।
জাফরান তেল আসল নকল চেনার উপায়
আপনার মোবাইল ফোনে QR CODE READER ডাউনলোড করে জাফরান অয়েল এর সিকিউরিটি কার্ডের QR CODE এই app দিয়ে স্ক্যান করুন। QR CODE টি যদি স্ক্যান না হয় বা QR CODE টিতে থাকা মেয়েটির ছবি যদি হুবহু এই মেয়েটির মত না হয় তাহলে জাফরান তেলটি নকল।
জাফরান তেল ব্যাবহারের নিয়ম
চুলের আগা ফাটা,চুল পড়ে যাওয়া,চুলের দুর্বল সাস্থ্যের সমস্যা সমাধানে আপনি ব্যবহার করতে পারেন জাফরান হেয়ার অয়েল। যেকোন জিনিস যেমন মেডিসিন নিয়ম মাফিক সেবনে যেমন সহজে রোগমুক্তি হওয়া সম্ভব তেমনি এই জাফরান হেয়ার অয়েল নিয়ম অনুযায়ী ব্যাবহারে আপনার চুলের প্রায় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাই নিয়মগুলি ভালো করে ফলো করুনঃ
দুই হাতের তালুতে জাফরান তেল নিয়ে সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় ম্যাসেজ করুন। নিয়মিত এরকম ব্যাবহারে চুলের গোড়া হবে মজবুত।
জাফরান হেয়ার অয়েল এর সাথে কিছু বাদাম বেটে মিশিয়ে নিন। তারপর সমস্ত চুল গোড়াসহ লাগিয়ে নিন। আধাঘন্টা বা ৪০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যাবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুল হবে ঘন ও উজ্জ্বল।
চুলের খুশকি দূর করতে এই জাফরান তেলের জুড়ি নেই। চুলের খুশকি দূর করতে চাইলে জাফরান তেলের সাথে কিছুটা গোল মরিচের গুড়ি মিশিয়ে হাল্কা গরম করে চুলের গোড়া ম্যাসেজ করুন। মোটামূটি ৭ দিন এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যাবহার করলে চুলের খুশকি দূর হয়ে যাবে।
জাফরান তেলের সাথে অল্প কিছু অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যাবহার করলে চুলের আগা ফাটা দূর হয়ে যায়।
জাফরান তেল কি চুল লম্বা করে?
নারীর সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে চুলের ভূমিকা সবার উর্ধে। কালো , লম্বা এবং ঝলমলে চুল কে না পছন্দ করে বলেন ? কিন্তু আমাদের প্রত্যাহিক জীবনযাত্রার কারণে আমরা আমাদের চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলতে বসেছি। আজকাল তাই চুল পড়া ,টাক হওয়া ,খুশকির মতো এইসকল সমস্যা আমাদের চুলের একটি নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্গী। কিন্তু আমরা চাইলে আমাদের চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য খুব সজজে ফিরিয়ে আনতে পারি।
চুলের ঘনত্ব এবং দ্রুত বৃদ্ধির জন্য জাফরান তেলের অন্য কোনো বিকল্প নেই। চুলের বৃদ্ধিতে জাফরান তেল যতটা কাজ করে অন্য কোনো কেমিক্যাল সমৃদ্ধ উপাদান তা করতে পারে না। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে জাফরান অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। জাফরান হেয়ার অয়েল এর এই ভেষজ উপাদানগুলি দ্রুত এবং সহজেই চুল এবং চুলের উপাদানগুলিতে প্রবেশ করে এবং চুল এবং মাথার ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। তারপরেও একটা কথা না বললেই নয় যে চুল লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে বংশগত ও একটা ধারা থাকে।
জাফরান তেলের উপকারিতা
জাফরান তেল যেমন চুলের আগা ফাটা দূর করে, খুশকি দূর করে, চুল লম্বা,কালো ও উজ্জ্বল করে, চূলের গোড়া মজবুত করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে তেমনি ত্বক ও সাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। এই তেলের ব্যাবহারে ত্বকের সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে ত্বক মসৃণ হয়ে যায়। জাফরান তেল নিয়মিত ব্যাবহারে ত্বকের সমস্ত দাগ দূর হয়ে ত্বককে দাগ্মুক্ত উজ্জ্বল ও লাবন্যময় করে তোলে। শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা উপশমে এই তেল ওষূধের মত কাজ করে। নিয়মিত ব্যাথার জায়গায় এই তেল দিয়ে মালিশ করলে ব্যাথা আস্তে আস্তে কমে যায়। জাফরান তেল বাচ্চাদের সাথে সাথে বড়দের ও পেশি গঠনে সাহায্য করে।
দাত ব্যাথার জন্য জাফরান তেল
মুখের টোনড অংশগুলি শিথিল করতে জাফরান তেলের সাথে মধু ও গ্লিসারিন মিক্স করে দাত মাজলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।আবার জাফরান ও মধু মিশিয়ে দাতের মাড়ি মালিশ করলে মাড়ি ব্যাথা উপশম হয়।
সাস্থ্যকর ঠোটের জন্য জাফরান তেল
জাফরান এমনই একটি উদ্ভিদ যারমধ্যে প্রচুর পরিমানে “ভিটামিন বি” বা রাইবোফ্লাবীণ রয়েছে যেটা ঠোটের জন্য খুবই উপকারি। জাফরানের সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে ঠোট মালিশ করলে ঠোট হয় নরম ও কালোদাগ্মুক্ত।
স্নায়ুবিক সমস্যায় জাফরান তেল
স্নায়ুবিক সমস্যার সমাধানেও জাফরান তেল ভালো কাজ করে। এজন্য কপালে মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পেশিবহুল সমস্যার জন্য জাফরান তেল
জাফরান পেশিগুলোর অধঃপতন রোধ করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ পেশির কোষগুলি নিরাময়ে সাহায্য করে।
রান্নায় জাফরান তেল
রান্নায় যদি আপনি জাফরান তেল ব্যাবহার করতে পারেন তাহলে খাবারে সুন্দর একটা ফ্লেভার পাবেন এবং খাবারের স্বাদ ও বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে এই তেল খুব বেশি পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় খাবার ও হবে পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং শরীর ও রোগ্মুক্ত থাকবে।
শেষকথা
এই পোস্টে জাফরান তেল ও জাফরান হেয়ার অয়েল এর উপকারিতা,বানানোর নিয়ম এবং ব্যাবহারের নিয়ম সবই আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু এটা অনেক ব্যায়বহুল হওয়য়
বেশিরভাগ মানুষেরই ধরাছোয়ার বাইরে।
আসল জাফরান তেল চেনার উপায় কি?
জাফরান অয়েল যদি অরিজিনাল হলোগ্রামের সাথে সেইম টু সেইম না মিলে তাহলে সেটা মাস্ট নকল। অরিজিনাল জাফরান অয়েলের হলোগ্রাম আর নকল টার হলোগ্রামের মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
জাফরান তেলের অপকারিতা কি?
তেলটি অনেক ঠান্ডা। তাই যারা রাতে তেলটি লাগিয়ে ঘুমান তাদের মাথা ব্যাথা, ঠান্ডা লাগা, নাক-মুখ ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যাদের এলার্জি আছে তাদের জন্য তেলটি উপকারী নয়। তেলের মধ্যে অনেক শক্তিশালী একটি ঘ্রান রয়েছে। অনেকে এই ঘ্রাণটিকে পছন্দ করেন না।
জাফরান তেলের দাম কত?
জাফরান হেয়ার অয়েল বা জাফরান হেয়ার গ্রোথ থেরাপির খুচরা মূল্য ৪৫০-৫০০ টাকা।
জাফরান তেল কি চুল লম্বা করে?
হ্যা,চুল লম্বা হওয়ার জন্য জাফরান হেয়ার অয়েল প্রসিদ্ধ।
জাফরান তেল কিভাবে বানায়?
জাফরান এর সাথে পরিমানমত আলমন্ড অয়েল,মেথি গুড়ো,কালোজিরা গুড়ো,ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ৮-১০ মিনিট জ্বাল করে বানানো হয়। পোস্টে সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে।
জাফরান তেল মুখে কিভাবে ব্যাবহার করবেন?
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ২/৩ টি জাফরান সারারাত ভিজিয়ে রেখে তার সাথে ১ চা চামচ দুধ,১ চা চামচ পানি, ২ ফোটা নারকেল তেল এবং ১ চিমটি চিনি ভালো করে মিক্স করে তুলোর সাহায্যে মুখে ও ঘাড়ে ম্যাসেজ করুন।