এখন সময় শীতের শেষ। শীতের সুস্কতায় জরাজীর্ণ মানুষের ত্বক। এই পুরো শীতে ত্বকের যত্ন নেওয়া দরকার হলেও কাজের ব্যাস্ততায় অনেকেই পরিপূর্ণ যত্ন নিতে পারেন নি। সেই জরাজীর্ণ ত্বককে সঠিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে কিছু যত্নের প্রয়োজন। এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে, যা ত্বকের জন্য খুবই ভালো। মুখের জেল্লাও যেমন ফেরায়, আবার ত্বকের নানা সমস্যাও সমাধান করে। অ্যালোভেরা হল তার মধ্য়ে অন্যতম। আর ত্বকের এই যত্নের ব্যাপারে প্রাকৃতিকভাবে আপনার সঙ্গী হতে পারে অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)।
অ্যালোভেরার উপকারিতা আজ কারও কাছেই অজানা নয়। ত্বক এবং চুলের যত্নে অ্যালোভেরা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। বছরের পর বছর ধরে ঘরোয়া রূপচর্চায় অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার হয়ে আসছে। এই এলোভেরা কখনও হেয়ার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার মুখেও সরাসরি লাগানো হয় অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)।
অ্যালোভেরার গুণাগুণ
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী উপকারী উদ্ভিদ। এর পাতার মাঝে যে স্থিতিস্থাপক অংশটা আছে, তার মূল উপাদান পানি। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর এমন একটা প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ যার উপকারিতার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। বর্তমানে রাস্তাঘাটে কিংবা বাজারে খুবই সহজলভ্য এটি।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম,ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, জিংক, আয়রন, জিঙ্ক, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি, যা স্বাস্থ্যরক্ষার বিভিন্ন কাজে লাগে।
রস হিসেবে খাওয়া যায় আবার ত্বকের প্রদাহে প্রতিষেধক হিসেবেও লাগানো যায়। আর এইসব গুনাগুন অক্ষুন্ন রেখে বানানো হয় এই জেলটি। তবে বাজারে যে অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)পাওয়া যায় তার থেকে খুবই ভালো হয় যদি আপনি ঘরে বানান।আসুন জেনে নেই কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এলোভেরা জেল বানানো যায় এবং এর ব্যাবহার ও উপকারিতা।
কীভাবে বানাবেন অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)?
যারা প্রতিনিয়ত বাইরে বের হন তাঁদের ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না । কিন্তু শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচতে ত্বকের যত্ন নিতে হবে । তার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি । তবে বাজারজাত অ্যালোভেরা জেল না-কিনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন এই জেল ( Aloe Vera Gel)। জেনে নিন তার কয়েকটি উপায় ।
প্রথমে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত করে নিন।
বাসায় অ্যালোভেরার গাছ থাকলে একটি অ্যালোভেরা পাতা কেটে নিন। বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় অ্যালোভেরা।
এবার পাতাটি লম্বা করে কেটে নিন, দুটি অংশ আলাদা হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরার দুটি অংশেই স্বচ্ছ আঠার মতো শাঁস দেখতে পাবেন। এই শাঁসকেই বলা হয় জেল। এবার একটি চামচ দিয়ে টেনে শাঁস বের করে একটি পাত্রে রাখুন।এটাকে ব্লেন্ড করলেই জেল তৈরি হয়ে যাবে কিন্তু সংরক্ষন করা যাবেনা। নিচে সংরক্ষন করার কয়েকটি টিপস দেওয়া হলোঃ
1) অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেলির মতো অংশাটুকু বার করে তাতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে মিশিয়ে স্টোর করে রাখুন। সাতদিন মত ব্যবহার করতে পারবেন।
2) অ্যালোভেরা গাছের পাতা থেকে জেল বার করে ভালো করে মিশিয়ে আইস ট্রে-তে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারবেন ।
3) অ্যালোভেরার জেলী মধুর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে একমাস মতো সংরক্ষণ করে রেখে দিন ।
4) তিন থেকে চার চামচ মত জেল এর সঙ্গে একটি ভিটামিন সি ক্যাপসুল ভালো করে মিশিয়ে এক থেকে দুই মাস মত সংরক্ষণ করে রাখুন ।
অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel) এর উপকারিতা
বর্তমানে আমাদের অনেকেই বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ টবে লাগিয়ে থাকেন। এই উদ্ভিদ হৃদযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, মুখের ঘা, পেটের সমস্যা, ত্বকের সুরক্ষায় ও আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।ত্বক এবং চুলের যত্নে অ্যালোভেরার তুলনা নেই। শুষ্ক ত্বক, ফাটা গোড়ালি, খুশকি থেকে মেদ ঝরানো—সব ধরনের সমস্যায় অ্যালোভেরা উপকারী।
অ্যালোভেরা তে এ- অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল/ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান আছে। টি ট্রি অয়েল মুখের অতিরিক্ত তেল উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে অ্যাকনের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করে।
শরীরের কোথাও কেটে কিংবা পুড়ে গেলে এই জেল ব্যবহারে আরাম মেলে। টি ট্রি অয়েল ত্বকের নানা সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, তৈলাক্ত ত্বকে এই ধরনের ফেসপ্যাক বেশি ভালো কাজ করে।
প্রতিদিন এক গ্লাস করে এলোভেরা পাতার নির্যাসের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। অনেক সময় অ্যালোভেরা পাতার নির্যাসের শরবত রাস্তাঘাটে বিক্রি করতে দেখা যায় কিন্তু এই গুলি খাওয়া উচিত নয় এর থেকে ভালো আপনি নিজেই ঘরে তৈরী করে নিন।।
কীভাবে ব্যবহার করবেন অ্যালোভেরা জেল
একটাই প্রোডাক্ট কিন্তু বিভিন্ন ভাবে এইঅ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel) ব্যাবহার করা যায় খুবই ভালো ফলাফলের সাথে। এটা যেমন ত্বকের জন্য উপকারি তেমন চুলের জন্য ও উপকারি আবার যদি এর জুস পান করা যায় সেটাও আমাদের অভ্যান্ত্যরিন শরীরের জন্য খুবই উপকারি। এই জেল এর এরকম কয়েকটি কার্যকারী ব্যাবহার বা টিপস নিচে আলোচনা করছিঃ
১. এটি খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের জন্য।
২. একটা ফেইসপ্যাক হিসেবে ১০-১৫ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে মুখে একটা মসৃণ ভাব নিয়ে আসবে।আর রাতে ঘুমাবার আগে থিক লেয়ার করে স্লিপিং মাস্ক হিসেবে দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারেন।যেটা সারারাত আপনার ত্বকের ভিতর থেকে সতেজ ও দাগ্মুক্ত করবে।
৩. সারা শরীরে লোশনের মত বডী ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ইউজ করতে পারেণ যারা লোশন বা গ্লিসারিন ইউজ করতে পছন্দ করেন না।
৪.রুক্ষ চুলকে উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করতে পারেন মধু, নারিকেল তেল ও অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)। গোসলের ৩০ মিনিট আগে এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে একটা শাওয়ার ক্যাপে ঢেকে দিন মাথা। পারে আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন।
৫.একটি ডিমের কুসুম ও দু’চামচ অ্যালোভেরা জেল ও তার সঙ্গে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। এতে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও চুল পড়া বন্ধ হবে।
৬. চুলের শুষ্ক ভাব এবং ত্বকে চুলকানি দূর করার জন্য ও এই জেল ব্যবহার করতে পারবেন। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরা ফেস সিরাম কীভাবে বানাবেন?
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel) নিন। এর সঙ্গে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এবার ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি নিন। সেটির থেকে এক্সট্র্যাক্ট বের করে নিন। তা এই মিশ্রণে মিশিয়ে দিন। ভালো করে প্রতিটি উপাদান মিশিয়ে ফেস সিরাম তৈরি করুন। এই ফেস সিরাম মুখে লাগান নিয়িমিত একটা সময়।আর দেখুন মেজিকের মত পরিবর্তন।
অ্যালোভেরা নাইট ক্রিম (Aloe Vera Night Cream)
আপনি বাড়িতে এলোভারা দিয়ে বানানো জেল সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারেন। নাইট ক্রিম হিসেবে বেশ উপযোগী এই অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)। বাজারচলতি অ্যালোভেরা জেল ও ব্যবহার করতে পারেন,তবে লক্ষ রাখবেন যেন অতিরিক্ত শুঘন্ধিযুক্ত ও কালারফুল না হয়। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ক্লিনজিং করে নিন। তারপর টোনার ও ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল
চুলের কোন কোন উপকারের জন্য অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel) এর কোন প্যাকটি ব্যাবহার করতে পারবেন তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরা ও মেথির মাস্ক ব্যাবহার করবেন।
- ঘন চুলের জন্য অ্যালোভেরা ও ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার মাস্ক ব্যাবহার করবেন।
- সিল্কি চুলের জন্য অ্যালোভেরা ও টকদইয়ের মাস্ক ব্যাবহার করবেন।
- ডিপ কন্ডিশনিং এর জন্য নারকেল তেল ও অ্যালোভেরার হেয়ার মাস্ক ব্যাবহার করবেন।
- তৈলাক্ত চুলের জন্য অ্যালোভেরা ও লেবুর মাস্ক ব্যাবহার করবেন।
- খুশকি দূর করতে অ্যালোভেরা ও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মাস্ক
- হেলদি হেয়ার পেতে ভিটামিন ই ও অ্যালোভেরার হেয়ার মাস্ক ব্যাবহার করবেন।
সতর্কীকরণ
অ্যালোভেরা কাটার পর সরাসরি মুখে না লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কারন অ্যালোভেরার কাটার স্থান থেকে কিছু হলুদ রঙের জলীয় পদার্থ বের হয়। তা পরিস্কার কোন কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে নিন। অন্যথায় অনেক সময়ই এই হলুদ নির্যাস আপনার ত্বকের জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে। অ্যালোভেরা খেলে অনেক সময় পেটের সমস্যা ও এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকে অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)ব্যবহার করলে ফুসকুড়ি, জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আমার শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel) এর উপকারিতা এত অল্প কথায় বলে শেষ করা যায়না। তাই আপনি নিজেও নিশ্চিতভাবে এই গাছ টবে লাগাতে পারেন আর অর্গানিক উপায়ে ব্যাবহার করতে পারেন ফেইসপ্যাক ও হেয়ারপ্যাক হিসেবে।
অ্যালোভেরা খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়?
অ্যালোভেরা খেলে ত্বক ফর্সা হয়না তবে উজ্জ্বল ও মসৃণ হয় এবং শরীরকে রোগ্মুক্ত রাখে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা কি কি কাজে ব্যাবহার করা হয়?
অ্যালোভেরা ত্বক,চুল এমনকি সমস্ত শরীরের যত্নে ব্যাবহার করা হয়।
অ্যালোভেরা জেল কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়?
শুধু এই জেল মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া মধু,লেবু ও নারকেল তেল এর সাথে মিশিয়ে ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার করতে হয়।
মুখে প্রতিদিন অ্যালোভেরা দিলে কি হয়?
প্রতিদিন দিলে মুখ উজ্জল,দাগ্মুক্ত, সতেজ ও ত্বকের ভিতর থেকে মুখকে ফ্রেস রাখে এবং ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করে।