বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

2024-এ আগ্নেয়গিরি কি? আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়? 

আগ্নেয়গিরির অগ্নিপাত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ভৌগোলিক ঘটনা। এটি এমন একটি ঘটনা যা বেশ কয়েকবার ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক পারো মিলিয়ন গণবিলুপ্তির কারণ ছিল শুধুমাত্র আগ্নেয়গিরি। আমাদের অনেকেরই অজানা কে আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয় এবং আগ্নেয়গিরি কাকে বলে। তাই আজকে আপনাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে আসলাম। আজকে আমরা জানবো আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়, আগ্নেয়গিরি কাকে বলে আগ্নেয়গিরি কেন হয় এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি কি। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়

আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়

আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয় 

পৃথিবীতে কিছু বাহার আছে যেগুলোতে এ ধরনের বাহার কে বলা হয় আগ্নেয়গিরি। আবার অগ্নুপাত আগ্নেয়গিরি যে নির্গমন পথ থেকে ঘটে তাকে বলা হয় জালানো। আমাদের পৃথিবীর গভীরে তাপমাত্রা খুবই বেশি প্রায় ৬০০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। আর পৃথিবীর উপরিভাগ কিছু প্লেটের সমন্বয় তৈরি। এখানে রয়েছে ৭টি মেজর টেকনোলিক প্লেট বা ভারী প্লেট এবং ২৬ টি মাইনো টেকনোলিক প্লেট বা হালকা প্লেট। প্লেটগুলো সর্বদাই গতিশীল।

ফলে প্রায় এদের মধ্য সংঘর্ষ বা এদের সংযোগস্থলে চাপের সৃষ্টি হয়। প্লেটের সংঘর্ষ চাপের ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়। যেমন হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে ইউরেশিয়ান প্লেটের সাথে সংঘর্ষ ফলে। ধাক্কার সময় একটি তরঙ্গের সৃষ্টি হয় যাকে আমরা বলি ভূমিকম্প। ভূপৃষ্ঠ এবং পৃথিবীর কেন্দ্রের গলিত লোহার মাঝামাঝি একটি কঠিন শিলাস্তর রয়েছে যাকে মেন্টল বলা হয়। চাপের পাশাপাশি দুইটি প্লেটের মাঝামাঝি প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয়। যা শিলস্তর বা মেন্টলকে গলিয়ে ফেলে এবং সৃষ্ট চাপ এই গলিত পদার্থকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে। গলিত পদার্থ ভূপৃষ্ঠে জমা হয় এবং ঠান্ডা হয়ে তৈরি করে বিশাল বিশাল পর্বত। এই পর্বতগুলোকে আমরা আগ্নেয়গিরি বলে থাকি। তাহলে বুঝতে পারছেন আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়।

আগ্নেয়গিরি কয় ধরনের হয়ে থাকে এবং কি কি? 

আগ্নেয়গিরি তিন ধরনের হয়ে থাকে 

১. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি 

২. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং 

৩.মৃত আগ্নেয়গিরি 

সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হচ্ছে সেই আগ্নেয়গিরি যা বর্তমানে সক্রিয় বা যার জালা মুখ দিক দিয়ে কোন অগ্নুপাত হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীতে এরকম আগ্নেয়গিরির সংখ্যা প্রায় ১৫০০। 

যেসব আগ্নেয়গিরি অনেক দিন পর পর হঠাৎ জেগে উঠে অর্থাৎ জ্বালা মুখ দিয়ে উত্তপ্ত পাথর ছাই বেরিয়ে আসে তাদের বলা হয় সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। এ আগ্নেয়গিরি খুবই ভয়ানক কারণ কেউই জানে না কখন এই আগ্নেয়গিরি ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। জাপানের ফুজিয়ামা আগ্নেয়গিরি বা ফিলিপিনসে মায়ান আগ্নেয়গিরি হলো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির উদাহরণ। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে রয়েছে এ ভয়ংকর সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। 

পৃথিবীর যেসব আগ্নেয়গিরর থেকে আর ওগুলো পাতের সম্ভাবনা নেই সেগুলোকে মৃত আগ্নেয়গিরি বলা হয়। আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, পার্মার পোপা এগুলো হলো পৃথিবীর বুকে ঘুমিয়ে থাকা কিছু আগ্নেয়গিরির উদাহরণ। 

এবার আমরা এমন কিছু আগ্নেয়গিরির কথা জানবো যা অতীত ও বর্তমানেও ছাপ রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। মাউন্টএইটনা সিসিলি দ্বীপের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এটি ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি যার উচ্চতা ৩,৩২৯ মিটার এটি আফ্রিকা প্লেট এবং ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যভর্তি স্থানে অবস্থিত। ১৯৭০ সালে এই আগ্নেয়গিরি থেকে দোয়ার কুন্ডলী বের হতে দেখা গিয়েছিল।

২০২০ সালে পুনরায় এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়। মাউন্টনিরাগঙ্গ এই আগ্নেয়গিরি আফ্রিকার কঙ্গোতে অবস্থিত। বর্তমানে সবচেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এটি। ১৮৮২ সাল থেকে মোট ৩৪ টি বার এই আগ্নেয়গিরি থেকে বিস্ফোরণ হতে দেখা গিয়েছে। ১৯৭৭ বিস্ফোরণে ৭ মাইল গতিতে লাভা পাশের গ্রামে ছড়িয়ে যায় এবং এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রায় ৭০ জনের মৃত্যুসহ প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের ফলে শ্রেষ্ঠ লাভার গভীরতা ৭০০ মিটার। এটি পৃথিবীর গভীরতম লাভা রথ। 

ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হচ্ছে মাউন্টমিরাপি ২০১০ সালে এখানে ভয়াবহ অগ্নিপাত হয়। বিপর্যয়ের আশঙ্কা পেয়ে কর্তৃপক্ষ আগেই ১১ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। ইতালির নেপপ্লস উপকূলীয় অবস্থিত মাউন্টমিসলিয়াস আগ্নেয়গিরি এটি ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত। বিগত কয়েক শতাব্দীর ধরে এখানে অসংখ্য বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে বর্তমানে আগ্নেয়গিরিতে সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। 

পপোকেটাপেতল একটি উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো অঞ্চলে অবস্থিত একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। পপোকেটাপেতল অর্থ হলো ধোয়ার পাহাড়। মেক্সিকোর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এই আগ্নেয়গিরির অ্যালপোপ নামেও পরিচিত। কিলাওয়া আগ্নেয়গিরি হাওয়াই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এখানে ভূ-অভ্যন্তরীন মেঘমা গলিত পাথর মেটাল ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং প্রবাহিত হতে থাকে মাসের পর মাস। লাভার পথে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আগ্নেয়গিরি সুনিশ্চিত ভাবেই ধ্বংসাত্মক। কিন্তু এই ভূগর্ভস্থ শক্তি ছাড়া নিশ্বাস নেওয়ার মতো বায়ুমণ্ডল তৈরি হতো না। তৈরি হতো না কোন ভূমি মহাসাগর এবং সূচনা হতো না জীবনের। ফলে আগ্নেয়গিরির ধ্বংসলীলার মাঝেও লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। 

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি 

আজ আপনাদের জানাবো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবন্ত আগ্নেয়গিরির কথা। এই আগ্নেয়গিরিটির নাম মাউন্টইওরসুর। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মানুয়াতুর একটি দ্বীপ তানয় অবস্থিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরিটি। প্রশান্ত মহাসাগরের রিনো ফায়ার নামে পরিচিত আগ্নেয়গিরিটি। বলয়ের এ আগ্নেয়গিরিটির উচ্চতা ১১৮৪ ফুট থেমে থেমে এ আগ্নেয়গিরিটি গত শতাব্দি ধরে আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো এক ঘন্টায় বেশ কয়েকবার অগ্নুপাত হয় এই আগ্নেয়গিরিটির।

বর্তমানে এ আগ্নেয়গিরিটির স্থানীয় কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই আগ্নেয়গিরিটির নাম মাউন্টএডনা। ইতালির সিসিলি দ্বীপের অবস্থিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। প্রাচীন গোষ্ঠীর বিশ্বাস ছিল তাদের আগুনের দেবতা বলখানের বাসা ছিল এই আগ্নেয়গিরিতে। আর তাদের যুদ্ধের দেবতা মার্চের জন্য অস্ত্র তৈরি করা হতো বলেও বিশ্বাস করত। খ্রিস্টের জন্ম ১৫০০ বছর আগেও অন্তত ২০০ বার আগুন ছড়িয়েছে এই আগ্নেয়গিরিটি। ১০ ৯৫৮ ফুট উঁচু ইউরোপে সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি।

এই আগ্নেয়গিরিটির নাম সটমলিন দক্ষিণ ইতালির পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এ আগ্নেয়গিরিটি ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এটি হুমত সাগরের বাতিঘর নামে বেশি পরিচিত। মূলতই এইআগ্নেয়গিরিটি সৃষ্টি হয়েছে পানির নিচে। শুধুমাত্র চুড়াটি উঠে আছে পানির উপর। কালে কালে অগ্নুপাতের ফলে লাভা এবং আগ্নেয়শিলা জমে জমে এই আগ্নেয়গিরিটির অজ্ঞা পেয়েছে। বেশিরভাগ সময় এ আগ্নেয়গিরিটি থেকে অল্প মাত্রাই ছাই, লাভা ও আগ্নেয়শিলা নির্গত হয়।

 তবে ২০০২ সালে একটি বড় ধরনের অগ্নুপাতের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে সটমলি নামের গ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর নাম সান্টামারিয়া। গুয়াতামালার উপকূলীয় সমভূমিতে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরিটি। ১২৩৭৫ ফুট উঁচু এই আগ্নেয়গিরিটি আসলে একটি স্টাটও বলগানো। এটি সিয়ারামাদরে আগ্নেয় বলয়ের একটি আগ্নেয়গিরি। যা গোএতেমালা পশ্চিমবঙ্গের পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। 

১৯০২ সালে এই আগ্নেয়গিরিতে একটি ভয়াবহ অগ্নুপাতের ঘটনা ঘটে। যার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম গুয়েতেমালাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সাধিত হয়। এই আগ্নেয়গিরিটির নাম সাঙ্গী। ইকিয়টরে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি হাজার হাজার বছর ধরে আগুন উৎপিরন করে যাচ্ছে। ১৭,১৫৮ ফুট উচ্চতায় এ আগ্নেয়গিরিটি ইতালির সটমলিন আগ্নেয়গিরির মতোই ছাই, লাভা ও আগ্নেয়শিলা উৎপিরণ করে থাকে। ১৬৬২ সালে এই আগ্নেয়গিরর অগ্নুপাতের খবর জানা যায়। এরপর থেকে থেমে থেমে ১৭২৮ থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং ১৯৩৪ থেকে আজ পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে এই আগ্নেয়গিরিটি। 

এই পোষ্টের শেষ মন্তব্য 

আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয় এবং আগ্নেয়গিরি কি? এবং জানতে পেরেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি কোনগুলো ও আগ্নেয়গিরি কোথায় অবস্থিত। যথা সম্ভব আমি আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখানে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনারা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। এছাড়াও বিজনেস আইডিয়া পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এমন আরও নতুন ও ইউনিট তথ্য পেতে বাংলায় ইনফোর ভিজিটের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করলাম। ধন্যবাদ সবাইকে। 

আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয় সংক্রান্ত আরো কিছু জানতে চাইলে নিজের ভিডিওটি দেখতে পারেন। 

https://youtu.be/rG3UDANWyy8?si=lF4g7n kiRZsfD1

আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয় এর সাধারণ কিছু প্রশ্ন আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

FAQ: 

১. পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরির নাম কি? 

ওজোস দেল সালাডো হল আর্জেন্টিনার-চিলি সীমান্তে আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত স্ট্র্যাটো-আগ্নেয়গিরি।  

২. পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি কোনটি? 

আগ্নেয়গিরি কিভাবে সৃষ্টি হয়

হাওয়াইয়ের মাওনা লোয়া আমাদের গ্রহের বৃহত্তম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। 

৩. মাওনা লোয়া আগ্নেয়গিরি কোথায় অবস্থিত?

হাওয়াই দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে আপনিও গিরির চূড়ায় জুড়ে হিলোর কাছে পূর্ব উপকূলরেখা পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার ৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। 

Leave a Comment