আসসালামু আলাইকুম ,আশা করি সকলে ভাল আছেন । বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ।আজ থেকে ২-৩ বছর আগেও বাংলাদেশে ব্যাবহার করা হতো হাতের লিখা খতিয়ান যা অনুসন্ধান করতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসে না গিয়ে অনুসন্ধান করা যেতনা।
তবে এখন সব কিছু আধুনিক হওয়ার সাথে সাথে খতিয়ানও করা হয়েছে আধুনিক এবং ডিজিটাল। এখন আমরা চাইলে ঘরে বসেই মোবাইলের সাহায্যে মাত্র ৫ মিনিটেই খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারি।
খতিয়ান খুব প্রয়োজনিয় একটি ডকুমেন্ট জমির মালিক অনুসন্ধান করার জন্য এটার প্রয়োজন হয়।
একটা জমি কিংবা বাড়ি-ঘরের যত গুলো কাগজ থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো খতিয়ান আর সেই খতিয়ান অনুসন্ধান করতে গেলে আমাদের পরতে হয় বিভিন্ন জামেলায়, তবে এখন আমরা চাইলে ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটে খতিয়ান অনুসন্ধান করার পাশাপাশি সেটা ডাউনলোড করে বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করতে পারব।
আজকে আমরা জানব কিভাবে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হয় এবং খতিয়ান অনুসন্ধান করতে কি কি প্রয়োজন হয়।আপনি যদি ঘরে বসে সঠিক ভাবে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কেন খতিয়ান অনুসন্ধান প্রয়োজন:
ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান থেকে শুরু করে নামজারি ও জমি বিক্রি করতে । এই সব জায়গায় খতিয়ান অনুসন্ধান করা হবে। কারণ খতিয়ান ছাড়া জমির প্রকৃত মালিক চেনা সম্ভব নয়। যার ফলে প্রতিটি কাজে খতিয়ান লাগে। আর এই সব বিষয় সহ আরো নানান কারনে খতিয়ান অনুসন্ধান প্রয়োজন হয়।
কত প্রকার খতিয়ান রয়েছে?
খতিয়ান অনেক প্রকারের রয়েছে। আমি এখানে বর্তমানে যে খতিয়ান গুলো অনুসন্ধান করা হয় সে গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। বর্তমানে যে দুটি খতিয়ান বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে , তা হলো এস.এ ও আর. এস।
খতিয়ান অনুসন্ধান করতে কি কি লাগে?
জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান দুইভাবে করা যায়। যথা-
১.অনলাইনের মাধ্যমে
২.ভূমি অফিসে গিয়ে
আজকের আলোচনার বিষয়গুলো অনলাইনে কিভাবে খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান করা যায়। চাইলেই অনলাইনে জমির খতিয়ান বা পর্চা অনুসন্ধান ও দাগের তথ্য যাচাই করা যাবে। সাথে সাথে নিচের বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।
জমির ঠিকানাঃ
জমি যে ঠিকানায় অবস্থিত সেটি পূর্ণাঙ্গভাবে জানা থাকতে হব। যেমন – বিভাগের নাম, জেলার নাম, উপজেলার নাম ,জমির মৌজার নাম।
খতিয়ান তথ্যঃ
খতিয়ান নাম্বর, দাগ নম্বর, জমির মালিকের নাম, পিতা ও স্বামীর নাম এর যেকোনো একটি তথ্য জানা থাকতে হবে।
খতিয়ান অনুসন্ধান করার নিয়ম ঘরে বসে মোবাইল দিয়ে?
আপনার খতিয়ানটি যদি ইতি মধ্যে অনলাইন করা হয়ে থাকে তাহলে আপনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে কিছু তথ্য দিয়ে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন।
কিন্তু আপনার খতিয়ান যদি অনলাইন করা না থাকে তাহলে আপনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে খতিয়ানটি অনুসন্ধান করতে পারবেন না এমনকি ডাউনলোডও করতে পারবেন না।
অনলাইন খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হলে আগে খতিয়ানটি অনলাইন করার জন্য আবেদন করতে হবে।
খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য সাধারণ কিছু তথ্যের প্রয়োজন হবে।
যেমন-
- বিভাগ – জেলা – উপজেলা – মৌজা।
- খতিয়ানের ধরন। একি নিয়মে যে কোন খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারবেন।
- খতিয়ান নাম্বার।
- জমির দাগ নাম্বার এবং মালিকের নাম।
নির্ভুলভাবে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে ধাপগুলো অনুস্মরণ করতে হবে :
ধাপ ১– খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য প্রথমেই যেতে হবে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট https://www.eporcha.gov.bd/ -এ
সেখান থেকে সার্ভে খতিয়ান অপশনটি বাছাই করতে হবে।
ধাপ ২– সার্ভে খতিয়ান অপশন-এ ক্লিক করার পর সেখান থেকে আপনার বিভাগ খুজে নিতে হবে । অবশ্যই আপনার জমি যেই বিভাগে আছে সেই বিভাগ বাছাই করতে হবে। যেমন আমি বাছাই করলাম রাজশাহী।
ধাপ ৩– আপনার বিভাগ নির্বাচন করার পর জেলা নির্বাচন করার অপশন আসবে সেখান থেকে আপনার জেলা নির্বাচন করতে হবে । যেমন আমি নির্বাচন করলাম পাবনা জেলা।
ধাপ ৪– এখানেও পূর্বের মতই আপনার জেলা নির্বাচন করার পর উপজেলা নির্বাচন করার অপশন আসবে। সেখান থেকে আপনার উপজেলা নির্বাচন করতে হবে। যেমন ফরিদপুর।
ধাপ ৫– এখানে আপনার খতিয়ানের ধরন নির্বাচন করতে হবে। আমাদের দেখানো নিয়ম অনুস্মরণ করে এখানে থাকা সব ধরনের খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন। আপনি যেই খতিয়ান অনুসন্ধান করতে চান সেটা এখান থেকে বাছাই করে নিতে পারেন। যেমন আর এস খতিয়ান।
ধাপ ৬– খতিয়ানের ধরন বাছাই করার পর আপনার মৌজা বাছাই করে নিতে হবে । আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে আপনার মৌজা কোনটি তারপর বাছাই করতে হবে । যেমন নারায়নপুর।
ধাপ ৭– একদম শেষ দাপ খতিয়ানের তালিকা অপশন-এ আপনার খতিয়ান নাম্বার দিয়ে খুজুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পরেই আপনার খতিয়ানটির তথ্য দেখতে পারবেন।
ধাপ ৮– খতিয়ান নাম্বার দিয়ে অনুসন্ধান করে না পেলে অধিকতর অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করতে হবে । তারপর জমির মালিকের নাম এবং দাগ নাম্বার দিয়ে খুজুন বাটনে ক্লিক করলে খতিয়ানের তথ্য দেখতে পারবেন।
আমাদের দেখানো এই নিয়মে খতিয়ান অনুসন্ধান করার চেষ্টা করলে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই দেখতে পারবেন।
খতিয়ান অনলাইন করার জন্য আবেদন পদ্ধতি:
জমির খতিয়ান ডাউনলোড করার নিয়ম এবং খতিয়ান অনলাইন করার জন্য আবেদন করার নিয়ম ৯৫ শতাংশ একরকম।
তবুও আপনাদের বুঝার জন্য দেখাচ্ছি।
খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, খতিয়ানের ধরন এবং মৌজা সবকিছু নির্বাচন করার পর খতিয়ানের তালিকা অপশন-এ এসে যদি আপনার খতিয়ান নাম্বার তথ্য দেখতে না পান তাহলে খতিয়ান আবেদন বাটনে ক্লিক করতে হবে ।
ক্লিক করার পর আগের মতই একটি ফর্ম অপশন ওপেন হবে সেটা ফিলাপ করতে হবে । খতিয়ান ডাউনলোডের জন্য আবেদন ফর্ম এবং খতিয়ান অনলাইন করার জন্য আবেদন ফর্ম একরকম তবে অনলাইন করার জন্য আবেদন ফর্মে অনলাইন কপি ডাউনলোড করার অপশনটি পাবেন না।
খতিয়ান অনলাইন করার জন্য আবেদন করার সময় শুধু মাত্র সার্টিফাইড কপির অপশন পাবেন। সেটা ৭ দিনের মধ্যে অফিস কাউন্টার অথবা ডাকযোগে নিতে পারবেন।
জমির খতিয়ান ডাউনলোড করার সহজ নিয়ম:
আমরা ইতি মধ্যেই জেনেছি যে কীভাবে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হয়। তবে আপনার যদি খতিয়ান অনুসন্ধান করার পর সেটা ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় তাহলে খুব সহজেই এখান থেকে খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারবেন।
জমির খতিয়ান ডাউনলোড করার জন্য আরও কিছু তথ্য প্রয়োজন হবে। যেমন-
১.জমির মালিকের আইডি কার্ড
২.আইডি কার্ড নাম্বার,
৩.জন্ম তারিখ,
৪.মোবাইল নাম্বার,
৫.ঠিকানা,
খতিয়ান ডাউনলোড করার জন্য “খতিয়ান আবেদন” বাটনে ক্লিক করুন। তারপর একটা ফ্রম দেখতে পারবেন। ৩ টি স্টেপ-এ ফ্রম ফিলাপ করতে হবে।
স্টেপ ১- জমির খতিয়ান ডাউনলোড
জাতিয় পরিচয়পত্র নং লিখতে হবে , জন্ম তারিখ দিতে হবে , আইডি কার্ড নাম্বার দিতে হবে, মোবাইল নাম্বার দিতে হবে ।
স্টেপ ২- জমির খতিয়ান ডাউনলোড
এখানে প্রথমে আপনার নাম দিতে হবে ইংরেজিতে, আপনার যদি ইমেইল থাকে তাহলে ইমেইল বক্স-এ একটি ইমেইল লিখে দিতে পারেন। না দিলে সমস্যা নেই। তারপর আপনার ঠিকানা দিতে হবে।
স্টেপ ৩- জমির খতিয়ান ডাউনলোড
তিন নাম্বার স্টেপ-এ খতিয়ান টি কীভাবে গ্রহন করবেন তা নির্বাচন করতে হবে। তারপর বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত খতিয়ান আবেদন ফ্রী ১০০ টাকা পেমেন্ট করে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে ।
বিকাশ, নদগ, রকেট, উপায় এই সকল মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন।
আবেদন সম্পন্ন হলে আপনার খতিয়ানের কিউ আর কোড সম্বলিত অনলাইন/তাৎক্ষনিক কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।
বলে রাখা ভালো আমরা যেই রকম দেখিয়েছি আপনি হয়তো ঠিক সেই রকম অপশন নাও পেতে পারেন। কারণ এই অপশন গুলো প্রতিনিয়ত আপডেট হয়।
নিচের ভিডিও টি দেখলে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন সম্পুর্ন বিষয় :
শেষ কথাঃ
উপরে দেয়া পদ্ধতিতে খতিয়ান অনুসন্ধান করে জমির খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারলেও এই সার্টিফাইড কপি সকল কাজে ব্যাবহার করতে পারবেন না। জমি ক্রয় বিক্রয় কিংবা এই ধরনের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো করার জন্য নিশ্চয়ই আপনার অরিজিনাল খতিয়ান প্রয়োজন হবে।
আর অরিজিনাল খতিয়ান অনুসন্ধান শুধু মাত্র আপনার জেলা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসেই করতে পারবেন এবং তাদের থেকে অরিজিনাল খতিয়ান সংগ্রহ করে সকল প্রকার কাজে ব্যাবহার করতে পারবেন।
এই আর্টিকেল লিখতে আমাদের একদিনের বেশি সময় লেগেছে তাই যদি এই আর্টিকেলটি আপনার কাজে লাগে তাহলে আপনার থেকে আমরা শুধু মাত্র একটা কমেন্ট অথবা শেয়ার আশা করছি।ধন্যবাদ।নতুন নতুন আপডেট পেতে বাংলায় ইনফো এর সাথেই থাকবেন।
১ নাম্বার খতিয়ান কি?
১নং খতিয়ানভুক্ত জমিকে খাস জমি বলে। খাস জমি হলো সরকারি জমি। এই জমির মালিক হলো বাংলাদেশ সরকার পক্ষে সংশ্লিষ্ট।
জমির দাগ বলতে কি বুঝায়?
মৌজা নক্সায় প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে জমি চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রদত্ত নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে।
বাংলাদেশের খতিয়ান কিভাবে চেক করব?
খতিয়ান স্থানীয় ভূমি অফিস, ডিসি অফিসে পাওয়া যায় । সমস্ত প্রাসঙ্গিক খতিয়ান প্রত্যয়িত কপি প্রাপ্ত এবং পরীক্ষা করা উচিত। দলিলপত্রে দেওয়া ইতিহাসের বিপরীতে মালিকের নাম পরীক্ষা করা উচিত। কোনো গরমিল থাকলে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে।