আমাদের স্বাস্থ্যের কি অবস্থা তা অনেক সময় আঙ্গুলের নখ বলে দেয়। আজকে আপনাদের মাঝে উল্লেখ করব ১১ ধরনের নখ দেখে আপনার শরীরে কি রোগ বেঁধেছে। বিভিন্ন ধরনের নখ রয়েছে যেমন: নখ নীল হয়ে যাওয়া,
- নখে লম্বা গাঢ় দাগ পড়া,
- নখে ছোট সাদা দাগ পড়া,
- নখ মাঝখান দিয়ে দেবে যাওয়া,
- নখ সবুজ হয়ে যাওয়া,
- নখের মাথা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসা,
- নখের আশেপাশের মাংস ফুলে যাওয়া,
- নখ হলুদ হয়ে যাওয়া,
- নখে ছোট ছোট গর্ত হওয়া,
- দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো ও
- ফ্যাকাশে নখ ইত্যাদি।
আজকের এই টপিকটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে কিছু জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, স্কিন ক্যান্সার, রক্ত শূন্যতা, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরে ফেলে চিকিৎসা করাতে পারবেন।
১. নখ নীল হয়ে যাওয়া।
হঠাৎ করে নখ নীল হয়ে যাওয়া মারাত্মক একটি লক্ষণ। রক্তের অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কমে গেলে এমন হতে পারে। সাথে শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা থাকতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই হঠাৎ করে নখ নীল হয়ে গেলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য কারণ যেমন, কিছু ফুসফুসের রোগ, হার্টের রোগ ইত্যাদিতে নখ নীল হতে পারে। এগুলো হঠাৎ অক্সিজেন কমে যাওয়ার মত জরুরি না হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
২. নখে লম্বা গাঢ় দাগ পড়া।
নখে আঘাত পেলে গাঢ় দাগ হতে পারে। আবার এক ধরনের স্কিন ক্যান্সারের কারণে এমন দাগ হতে পারে। যদি কোন আঘাত পাওয়া ছাড়াই নতুন করে লম্বা গাঢ় দাগ দেখা দেয় বা আগের থেকেই ছিল এমন দাগ আরো ছিল ছড়িয়ে যায় বা রং বদলায় তাহলে একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিনের ডাক্তার দেখাবেন। এমন হলে আতঙ্কিত হবেন না। ক্যান্সার ছাড়া আরো অনেক কারণে এমন নখে গাঢ় দাগ হতে পারে। তবে ক্যান্সার হওয়ার যেহেতু সম্ভাবনা আছে তাই ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া শ্রেয়। আর এই ক্যান্সার যতই আগে ধরা যায় ততই ভালো।
৩. নখে ছোট সাদা দাগ পড়া।
দাঁত দিয়ে নখ খোটালে বা নখে আঘাত পেলে সাধারণত এমন নখে ছোট সাদা দাগ পরে। নতুন নখ আসলে এই দাগ চলে যায়। তাই এটা নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা করার কারণ নাই।
৪. নখ মাঝখান দিয়ে দেবে যাওয়া।
আয়রনের অভাবের সাধারণত এমন কারণ দেখা যায়। নখের এমন ভাবে দেবে যায় মনে হয় মাঝখানের চামচের মত হয়ে গেছে। ঠিকমতো চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যায়।
৫. নখ সবুজ হয়ে যাওয়া।
নখের সুরোমনাস নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ইনফেকশন হলে নখে এমন গাঢ় সবুজ রঙে হতে পারে। এটা সাধারণত নিজে থেকেই সারে না। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে সারাতে হয়।
৬. নখের মাথা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসা।
এটা কিছু রোগের কারণে হতে পারে। আবার যারা নিয়মিত থালাবাসন ধোঁয়া এবং কাপড়-চোপর ধোয়ার কাজগুলো করেন তাদের এমন হতে পারে। পানি আর ডিটারজেন্টের কারণে নখ ক্ষয় হয়ে যায়। এমন হলে ধোয়ার সময় হাতে গ্লাভস পড়ে নিতে পারেন। পানির কাজ শেষ হলে নখে লোশন মাখিয়ে নিবেন। আর সম্ভব হলে ধোয়ার কাজটা একটু কমাবেন। যে রোগ গুলোর কারণে এমন হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে আয়রনের অভাব, থাইরয়েডের রোগ ইত্যাদি। সাধারণ রক্ত পরীক্ষা করলেই এই সব রোগ ধরা যায় এবং এগুলোর সহজ কিছু চিকিৎসা আছে। তাই নখের যত্ন নেওয়ার পরেও যদি এমন দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন। এছাড়াও ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে নখ ভেঙ্গে আসতে পারে। যদি নখ ভেঙ্গে আসার সাথে যদি নখ হলুদ হয়ে যায় তাহলে সেটা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিবেন।
৭. নখের আশেপাশের মাংস ফুলে যাওয়া।
এটা সাধারণত নখের আশেপাশের চামড়ায় ইনফেকশনের কারণে দেখা যায়। যারা ঘন ঘন পানি, সাবান নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই বেশি দেখা যায়। এমন হলে উপরের উল্লেখিত সাবধানতা গুলো অবলম্বন করবেন। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শের চিকিৎসা করবেন। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ যেই যেগুলো জোড়া লাগিয়ে রাখতে সাহায্য করে ( কিছুটা আঠার মতো চিন্তা করতে পারেন ) সেইসবে রোগে দেখা যেতে পারে। যদি এমন হয় আপনি তেমন পানি হাতান না কিন্তু নখের মাংস লাল হয়ে আছে। বিশেষ করে, সাথে অন্যান্য কোন লক্ষণ থাকে যেমন: সেরে উঠতে কষ্ট হওয়া তাহলে অবশ্যই একটা ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কানেক্টিফ্রিকশন রোগ বা অন্য কারনে এমন হচ্ছে কিনা সেটা তিনি খতিয়ে দেখতে পারবেন।
৮. নখ হলুদ হয়ে যাওয়া।
নখের রং হলুদ হয়ে যেতে পারে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে। সাধারণত নখের কোনা হলুদ হওয়া শুরু করে তারপর পুরো নখের ছড়ায়। এক পর্যায়ে নখ ভ্রমর হয়ে যাই তারপর নখ ভেঙ্গে আসে। ওষুধ ছাড়াই সাধারণত এটা ছাড়ে না, তাই এমন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ফাঙ্গাল ইনফেকশন ছাড়াও ফুসফুসের রোগ, সোরিয়াসিস ও ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের কারণে নখ হলুদ হতে পারে। আবার কিছু সাধারণ কারণেও নখ হলুদ হতে পারে। যেমন: হলুদ দিয়ে কিছু রান্না করলে অথবা হলুদ দিয়ে রান্না করার তরকারি হাত দিয়ে মাখিয়ে খেলে নখ হলুদ হতে পারে। ধুমপান করলে নখ হলুদ হয়ে যেতে পারে। এগুলো নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছুই নাই। তবে ধূমপান ছাড়তে পারলে খুব ভালো হবে।
৯. নখে ছোট ছোট গর্ত হওয়া।
সোরিয়াসিস রোগে নখ দেখতে এমন হতে পারে। মনে হয় কেউ খুব শক্ত কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে গর্ত করেছে। এটিকে বলে পেটিং। সোরিয়াসিস ছাড়াও একজিমা, আল্পেসি ইত্যাদি রোগে এমন হতে পারে। এমন হলে অবশ্যই একজন স্কিনের ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। রোগ সনাক্ত করে তিনি চিকিৎসা দিতে পারবেন।
১০. দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো।
মানসিক চাপে থাকলে অনেকেই নখ চাবান। অনেকেই এগুলো অভ্যাসের কারণে করে থাকেন। সাধারণত ছোটরা নখ চাবায়। বড় হতে হতে এই অভ্যাসে চলে যায়। আপনার এখনই এই অভ্যাস থাকলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। চেষ্টা করার পরেও যদি ছাড়তে না পারেন তাহলে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন কিনা তিনি তা খতিয়ে দেখতে পারবেন এবং মানসিক রোগ থেকে থাকলে তার চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।
১১. ফ্যাকাশে নখ।
আমাদের নখ সাধারণত গোলাপী রঙের হয়। তেমন না হয়ে যদি নখের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায় সেটা কয়েক ধরনের রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন: রক্তশূন্যতা, অপুষ্টি, লিভারের রোগ ইত্যাদি। যেহেতু এইগুলো অনেক ধরনের কারণে হতে পারে তাই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তিনি আমার সমস্যা খুঁজে বের করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবে।
বিশেষ তথ্য:
সর্ব শেষে হলো: নখে কিছু পরিবর্তন এসেছে মানে যে রোগ হয়েছে তা না। তবে আপনি যদি বুঝতে না পারেন কেন নখের পরিবর্তন হলো বা অন্য কোন কারণে যদি দুশ্চিন্তা হয় তাহলে আপনি একজন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করবেন।
শেষ কথা:
আশা করি, উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো আপনি লক্ষ্য করলে সহজেই আপনার নখ দেখে আপনি কী রোগে ভুগছেন তা জানতে পারবেন এবং সাথে সাথে আপনি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিন। আর আমাদের পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকবেন।