দেশে কৃষি উন্নয়ন অগ্রগতি এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষি কাজে সম্পৃক্তদের ঋণ প্রদানে এক বিশেষ ব্যাংক কাজ করে থাকে। কৃষকদের এই বিশেষ ঋণ দেওয়া কার্যক্রম যে ব্যাংক থেকে পরিচালিত হয় তাকে কৃষি ব্যাংক বলে।
কৃষি ব্যাংক খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ঋণ সুবিধা প্রদানকে লক্ষ্য হিসেবে বেচে নেয়। আর দেশের সকল পর্যায়ে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া এবং দারিদ্রতা কমানোর লক্ষে কৃষি, এমএমই এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রদানকে লক্ষ্য করে কাজ শুরু করে কৃষি ব্যাংক।
আজকের সঞ্চয় আগামী দিনের ভবিষ্যত।আমাদের কৃষি প্রধান দেশে কৃষকদের কৃষি কাজ করার জন্য দরকার ছোট বড় ঋণ। আবার তা পরিশোধের জন্য দরকার কৃষকদের প্রয়োজন মতো উপায়।তাই একজন কৃষক বা গ্রাহকের কৃষি ব্যাংক ডিপিএস করার নিয়ম জানা উচিত।আজকে আমরা জানবো কৃষি ব্যাংক ডিপিএস করার নিয়ম, কৃষি ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা, কৃষি ব্যাংক ডিপিএস সুবিধা, কৃষি ব্যাংক ঋণ সুদের হার, কৃষি ব্যাংক কি অনলাইন কি না। চলুন শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেল।
কৃষি ব্যাংক ডিপিএস হিসাব খোলা ও পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলীঃ
ক) প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক নিজ নামে এ ডিপিএস এর আওতায় এক বা একাধিক হিসাব ব্যাংকের নির্ধারিত আবেদন ফরমের মাধ্যমে মাসের যে কোন কর্মদিবসে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের যে কোন শাখায় খুলতে পারবে।
খ) হিসাব যে তারিখেই খোলা হোক না কেন পরবর্তী মাস হতে ১০ তারিখের মধ্যেই নিয়মিতটাকা জমা করতে হবে।মেয়াদপূর্তির পর হিসাব খোলার তারিখে বা তার পরবর্তী কর্মদিবসে টাকা প্রদেয় হবে।
গ) হিসাব খোলার সময় আমানতকারীকে তার যথাযথ পরিচিতি (KYC) প্রদানসহ জাতীয় পরিচয়পত্র/ স্মার্ট কার্ড/ জন্মনিবন্ধন সনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি ও পাসপোর্টসাইজের সত্যায়িত ০২ (দুই) কপি ছবি প্রদান করতে হবে।
ঘ) গ্রাহকের যদি টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট থাকে তবে ডিপিএস হিসাব খোলার সময় টিআইএন(TIN) সার্টিফিকেট জমা নিতে হবে এবং যথাযথভাবে হিসাব খোলার ফর্মে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
ঙ) হিসাব খোলার ফরমে মেয়াদকাল ও মাসিক জমার পরিমান (অংকে ও কথায়) স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।কোনরূপ কাটাকাটি, ঘষামাজা, উপরিলিখন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন কোন অবস্থাতেই গ্রহনযোগ্য হবেনা।
চ) এ হিসাবে গ্রাহক নগদে বা শাখায় রক্ষিত আমানতকারীর সঞ্চয়ী হিসাব হতে স্থানান্তরেরমাধ্যমে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে মাসিক কিস্তির টাকা জমা করতে পারবেন।গ্রাহককে মাসিক কিস্তির টাকা জমা প্রদানের জন্য যেকোন একটি পদ্ধতি বেছে নিতে হবে। সঞ্চয়ী হিসাব হতে স্থানান্তরেরক্ষেত্রে স্থায়ী নির্দেশনা থাকবে,এরূপ নির্দেশনার জন্য কোনফি/ চার্জ কাটা যাবে না।
ছ) নগদ জমার ক্ষেত্রে এ ডিপিএস এর জন্য নির্দিষ্ট জমার শিল্প ব্যবহার করতে হবে।
জ) প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে মাসিক কিস্তির টাকা জমা/স্থানান্তর করা না হলে পরবর্তী. মাসে মাসিক ২% হারেজরিমানাসহ টাকা স্থানান্তর করতে হবে। একাধারে ৩ মাস এমন হলে হিসাবটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ডিপিএস এর পুরো মেয়াদে (৭ বছরে) সর্বোচ্চ ৭ টি কিস্তি জরিমানাসহ জমা দিতে পারবে।
ঝ) এ ডিপিএস এর আওতায় অগ্রীম কিস্তি জমা দেয়া যাবে। তবে জমাকৃত অগ্রিম কিস্তির উপর কোন সুদ প্রদান করা হবে না।
ঞ) প্রতিটি হিসাবে বাৎসরিক ভিত্তিতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ প্রদেয় হবে। মাসিক ভিত্তিতে সুদ প্রভিশন রাখতে হবে।
ট) হিসাবটি চেকবিহীন হবে এবং মেয়াদপূর্তিতে গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ হিসাবের টাকা প্রদেয় হবে।
প্যাকেজের নাম
Scheme
Year 3/5/7/10
Interest Rate: 7.25%, 7.50%,8.00%,8.25%
নমিনি মনোনয়ন সংক্রান্ত নিয়মাবলীঃ
ক) আমানতকারীকে ব্যাংকের প্রচলিত নিয়মে হিসাবের অবশ্যই নমিনী নিযুক্ত করতে হবে।
আমানতকারী কর্তৃক সত্যায়িত নমিনীর ০১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ফর্মের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।নাবালক/নাবালিকাকেও নমিনী
করা যাবে।
খ) আমানতকারীর জীবদ্দশায় এবং হিসাবের স্হিতি গ্রহনের পূর্বে নমিনীর মৃত্যু হলে ঐ মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে।সে ক্ষেত্রে হিসাবধারী নতুন নমিনী মনোনয়ন করতে পারবেন। কেবলমাত্র আমানতকারীর মৃত্যুর পরই নমিনী হিসাবের অর্থ প্রাপ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে সাকসেশন সার্টিফিকেট গ্রহনের প্রয়োজন হবে না এবং বিষয়টি শাখা পর্যায়েই নিষ্পত্তিযোগ্য হবে।
নমিনীকে হিসাবের অর্থপরিশোধের সময় নিম্নোক্তকাগজপত্রাদি গ্রহণ করতে হবে:
১) আমানতকারীর মৃত্যু সংক্রান্তসনদপত্র।
২) নমিনীর পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র/ স্থানীয় চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনার/ একজন গেজেটেড অফিসার বা ব্যাংকের ৯ ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র লাগবে।
৩) নমিনীর আইনানুগ অভিভাবকের আবেদনপত্র পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি (নাবালক/নাবালিকারক্ষেত্রে)
৪) নাবালক/ নাবালিকার ক্ষেত্রে নমিনীর আইনানুগ অভিভাবক কর্তৃক শাখার একজন আমানত হিসাবধারীর সাথে যৌথভাবে সম্পাদিত ইনডেমনিটি বন্ড (ক্ষতিপূরণ মুচলেকা)।
৫) আমানতকারী যে কোন সময় লিখিতভাবে তার মনোনয়ন বাতিল করে নতুন নমিনী মনোনয়ন করা যাবে।
আরো পড়ুন :কৃষি ব্যাংক ডিপিএস চার্ট 2024
মেয়াদপূর্তির পূর্বে হিসাব বন্ধ করা হলে টাকা উত্তোলন পদ্ধতি:
ক)আমানতকারী লিখিত আবেদনের মাধ্যমে মেয়াদপূর্তির পূর্বে আমানত হিসাবটি বন্ধ করতে পারবেন মেয়াদপূর্তির পূর্বে আমানত হিসাবটি বন্ধ করা হলে নিম্নোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে প্রাপ্য টাকা গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে প্রদেয় হবে।
খ) মেয়াদপূর্তির পূর্বে ২ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করা হলে কোন সুদ পাবেনা। ২ বছরের বেশি কিন্তু ৭ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করা হলে সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ হারে মুনাফা দেয়া হবে। হিসাবে জমাকৃত আসলের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০% ঋণ সুবিধা প্রদান ।
ঋণের সময়কাল সর্বোচ্চ ০১ বছর। ডিপিএস এর বিপরীতে ঋণ নিলে এ ডিপিএস হিসাবের সুদের চেয়ে ২% বেশী (ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চক্রবৃদ্ধি হারে) সুদ দিতে হবে।
কৃষি ব্যাংক ডিপিএস এর বিপরীতে ঋণ নেওয়ার দলিল পত্রদি
ক) | ডিমান্ড প্রমিসরি নোট। |
খ) | লেটার অব লিয়েন। |
গ) | লেটার অব এরেঞ্জমেন্ট। |
ঘ) | লেটার অব ডিসবার্সমেন্ট। |
ঙ) | সংশ্লিষ্ট আমানত হিসাবটি বন্ধ করে ঋণ হিসাব সমন্বয় (Set off) করার সম্মতিপত্র। |
বিশেষ নোট সূমহ:
ক) হিসাবধারীর মৃত্যুর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাবটি বন্ধ হয়ে যাবে।
খ) এ ডিপিএস এর বিপরীতে গৃহীত ঋণ সম্পূর্ণভাবে পরিশোধের পূর্বে আমানতকারীর মৃত্যু হলে আমানতের স্থিতি হতে ঋণের বকেয়া সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট স্থিতি (যদি থাকে) নিযুক্ত নমিনিকে বা উত্তরাধিকারীগণকে প্রদেয় হবে। কোন অবস্থাতেই ঋণের টাকা অসমন্বিত রাখা যাবে না।
গ) এ ছাড়া উক্ত স্কীমের জন্য পৃথক লেজার সংরক্ষণ করতে হবে।
ঘ)কমিটি ব্যাংকের নিজস্ব উদ্যোগে প্রণীত বিধায় যে কোন সময় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ ডিপিএস এর যে কোন শর্ত সংশোধন বা বাতিল করার অধিকার সংরক্ষণ করে।
ঙ) হিসাবের মেয়াদপূর্তির পর গ্রাহককে তার প্রাপ্য টাকা এককালীন প্রদেয় হবে।
চ) এ ডিপিএস এর আওতায় খোলা হিসাব ব্যাংকের এক শাখা হতে অন্য শাখায় স্হানান্তর করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে আমানতকারীকে হিসাব স্থানান্তরের জন্য ৫০০.০০ (পাঁচশত) টাকা স্থানান্তর ফি প্রদান করতে হবে।
কৃষি ব্যাংক ডিপিএস সুবিধা:
কৃষি ব্যাংক ডিপিএস সুবিধা জানার আগে ডিপিএস কি তা জানতে হবে। ডিপিএস হচ্ছে নির্দিষ্ট সময় পর পর বা এককালিন কিছু টাকা জমা রাখার পর নির্ধারিত সময় শেষে জমাকৃত টাকা সহ টাকার একটা অংশ সুদ হিসেবে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সুদের অতিরিক্ত টাকাটাই ডিপিএস এর লাভ হিসেবে পরিচিত।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কৃষি ব্যাংকের ডিপিএস সুবিধা অনেক ভালো।কৃষি ব্যাংক ডিপিএস এ কত পারসেন্ট লাভ দিবে তা নির্ভর করবে আপনি কোন প্রসেসে কি পরিমাণ টাকা জমা রাখছেন তার উপর।তবে স্বাভাবিক ভাবে কৃষি ব্যাংকে ৩ মাস ৬ মাস আবার ১ বছর মেয়াদি ভিন্ন ভিন্ন ডিপিএস আছে।
যে হিসাবের বিপরীতে ৫.৭৫%, ৫.৮৫% ও ৬% হারে মুনাফা দিয়ে থাকে।
কৃষি ব্যাংক কি অনলাইন :
কোনও ব্যাংক বা কৃষি ব্যাংক অনলাইন কি না তা জানার আগে জানতে হবে ব্যাংক অনলাইন বলতে কি বুঝায়। ব্যাংক অনলাইন মানে হলো ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে অনলাইনে পরিচালিত হয় কি না। আবার গ্রাহকদের সকল সেবা অনলাইনে দেওয়া হয় কি না।কৃষি ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেটা সেন্টারে কেন্দ্রীভূত সার্ভার শাখা সার্ভারের পরিবর্তে গ্রাহকদের সমস্ত স্ট্যাটিক ও আর্থিক ডেটা সংরক্ষণ করে রাখে।গ্রাহক আর কোনো শাখার গ্রাহক না হয়ে সরাসরি ব্যাংকের গ্রাহক হয়।
এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মোট ১০৩৮ টি শাখার সবকয়টি অনলাইনের মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। কৃষি ব্যাংক কি অনলাইন কি না তা আরও জানতে কৃষি ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://www.krishibank.org.bd/ প্রবেশ করে দেখে নিতে পারেন।
নিচের ভিডিও টি দেখলে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন সম্পুর্ন বিষয় :
শেষ কথা :
আজকে আমরা জানতে পেরেছি কৃষি ব্যাংক ডিপিএস একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে।জেনেছি কৃষি ব্যাংক কাকে বলে, কৃষি ব্যাংক ডিপিএস সুযোগ সুবিধা।কৃষি ব্যাংক ডিপিএস সুদের হার এবং কৃষি ব্যাংক কি অনলাইন কি না।আশা করছি এই বিষয়ে এরপরে আর অজানা কিছু থাকবে না।এরপরেও কিছু জানতে চাইলে পোষ্টের নিচে কমেন্ট করুন।
খুব তারাতাড়ি আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়া হবে।এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন আমাদের বাংলায় ইনফো এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।
বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের সুদের হার কত?
বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণে সুদের হার আট শতাংশ নির্ধারণ করলেও কৃষকদের তিন গুণেরও বেশি হারে সুদ দিতে হচ্ছে, এমনকি করোনাভাইরাস মহামারির এমন কঠিন সময়েও ছিল।
বাংলাদেশের সেরা ডিপোজিট স্কিম কোনটি?
রূপালী মিলিয়নেয়ার ডিপোজিট স্কিম হল একটি মাসিক কিস্তি ভিত্তিক ডিপোজিট স্কিম। স্কিমটি নমনীয় কিস্তির পরিমাণ এবং মেয়াদ সহ মেয়াদপূর্তির উপর সর্বনিম্ন 10 লক্ষ টাকা (করের আগে) গ্যারান্টি দেয়। এই স্কিমের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় উচ্চ সুদের হার এবং মাসের যে কোনও দিনে কিস্তি জমা দেওয়ার নমনীয়তা রয়েছে৷
কত টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়?
ফিক্সড ডিপোজিটে সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ কত পরিমাণ জমা করা যেতে পারে। সর্বনিম্ন পরিমাণ ব্যাঙ্ক এবং NBFC গুলিতে পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত ₹1000 থেকে ₹25,000 পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফিক্সড ডিপোজিটে জমা করা যেতে পারে এমন সর্বাধিক পরিমাণের কোনও উচ্চ সীমা নেই।