বিয়ে করা, পরিবার গড়ে তোলা বা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়ার মতো বড় বড় দায়িত্বগুলো যতই বাড়তে থাকবে, আপনার বীমা করার প্রয়োজনীয়তাও ততই বৃদ্ধি পাবে। কারণ, বীমা আপনার প্রিয়জনদের জন্য এমন একটি আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যা প্রয়োজনের সময়ে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
বীমা কী?
সাধারন ধারণা অনুযায়ী, বীমা একটি সহজ পদ্ধতি যাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে সহজ ভাষায় বীমা মানে কোন সংস্থার সাথে এমন একটি চুক্তি, যা আপনার অসুস্থতা বা অকাল মৃত্যুতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে। কিছু বীমা পলিসি যেমন, মেটলাইফ এর মতন বিভিন্ন পলিসি আছে যা আপনাকে জীবিত থাকাকালীন সুবিধাও প্রদান করে। এক্ষেত্রে, আপনি দুইভাবে আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন; আপনার জীবনে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনায় অথবা আপনার অবসর জীবনের আয় হিসেবে।বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে এবং অসংখ্য বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে। বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়াও ব্যাক্তিগতভাবে অর্থ সঞ্চয় করে সম্ভাব্য ঝুঁকির দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়। বীমা প্রক্রিয়া, ক্ষয়ক্ষতির ধরন এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়।আপনার জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। অতএব, সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটির জন্য, অর্থাৎ আপনার জীবনের জন্য একটি বীমা নিরাপত্তা নিয়ে রাখাই বিচক্ষণতার কাজ।কারণ, বীমা আপনার প্রিয়জনদের জন্য এমন একটি আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যা প্রয়োজনের সময়ে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে আসুন জেনে নেই –
বীমা আসলে কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেছেন, বীমা হল নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কোন প্রতিষ্ঠানকে স্থানান্তর করা।
এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে।
হাসিনা শেখ বলেন, “বীমা এক ধরনের বিনিয়োগ। এর মানে হচ্ছে আপনি ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে এখন একটি নির্দিষ্ট অর্থ জমা রাখছেন, নির্দিষ্ট মেয়াদের পর আপনি আপনার অর্থ হাতে পাবেন। এটা আপনার ঝুঁকি আরেকজনের সঙ্গ ভাগাভাগি করে নেয়ার মতো।”
ধরা যাক, হেলথ ইনস্যুরেন্স বা স্বাস্থ্য বীমার কথা, যেখানে নিজের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিপরীতে আপনি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ জমা করছেন, উদ্দেশ্য হচ্ছে যদি আপনার কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ঐ বীমা প্রতিষ্ঠান আপনার স্বাস্থ্য ব্যয়ের একটি অংশ বা একটি বড় অংশ প্রদান করবে।
এই যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনি জমা রাখছেন, একে বলা হয় প্রিমিয়াম।
অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত স্বাস্থ্য বীমা তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলোতে ‘ক্যাশলেস’ সেবা অথবা সেবা গ্রহণ পরবর্তী কালে গ্রাহককে বীমার অর্থ প্রদান করার কথা।
“সহজ কথায় বলতে গেলে, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য অর্থ প্রদানের মতো।”
আশা করি বীমা কী? পরিবার কর্তার কেন বীমা করা উচিৎ?কিছুটা ধারণা পেয়েছেন।
আরো পড়ুন :-জীবন বীমা কী এবং ২০২৪ এ আমাদের জীবন বীমা করা কেন প্রয়োজন?
বীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা জেনে নেয়ার আগে আসুন জেনে নেই কিছু বিভিন্ন প্রকার বীমার সুবিধা ও পরিচিতি
আপনার জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। অতএব, সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটির জন্য, অর্থাৎ পরিবার কর্তার জীবনের জন্য একটি বীমা নিরাপত্তা নিয়ে রাখাই বিচক্ষণতার কাজ। বিয়ে করা, পরিবার গড়ে তোলা বা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়ার মতো বড় বড় দায়িত্বগুলো যতই বাড়তে থাকবে, আপনার বীমা করার প্রয়োজনীয়তাও ততই বৃদ্ধি পাবে। কারণ, বীমা আপনার প্রিয়জনদের জন্য এমন একটি আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যা প্রয়োজনের সময়ে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে আশা করি আপনারা বুজতে পারছেন যে আমাদের সবার জীবনেই বীমা কেন গুরুত্ব পূর্ণ ?
বাংলাদেশে কী ধরণের বীমা চালু আছে?
বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের বীমা হয়–জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা।
জীবন বীমায় একজন ব্যক্তি নিজের বা পরিবারের কোন সদস্যের জীবন বীমা করাতে পারেন।
কেন পরিবারের কর্তার বীমা করা উচিত?
আপনি কি জানেন বীমা কী? পরিবার কর্তার কেন বীমা করা উচিৎ?আমাদের প্রত্যেকের জীবনই অনিশ্চিত। যেকোন সময় অপ্রত্যাশিত, অভাবনীয় কোন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা ভালো বা খারাপ যেকোনটি হতে পারে।বীমা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার জন্য একটি নিরাপত্তার ঢাল স্বরুপ।
প্রতিটি মানুষের জন্যই তার পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকেই চায় তার অবর্তমানে তার পরিবার যেন নিরাপদে থাকে। আর্থিক কষ্টে না পড়ে এবং এ কারনে বীমা একটি নিশ্চয়তা স্বরুপ। এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে যার কারনে আপনার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন পরতে পারে। যেকারনে পরিবারের কর্তার বীমা করা উচিত। যেমনঃ
▶️ আকস্মিক কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবার আর্থিক অবনতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
▶️ শারীরিক অসুস্থতাজনিত জটিলতায় বীমা অতিরিক্ত আয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
▶️ আপনার অবর্তমানে সন্তানদের শিক্ষা ও অন্যান্য খরচ নিশ্চিত করবে বীমা।
▶️ ভবিষ্যতে সঞ্চয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
▶️ চাকরি হতে অবসরে যাওয়ার পর অবসরকালীন সময়ে আয়ের একটি উৎস হিসেবে সহায়তা করবে।
এরকম আরো অনেক দুর্ঘটনাজনিত ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য বর্তমান সময়ে বীমা একটি রক্ষা কবচের মতো। এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই আমাদের জীবন বীমা করা উচিত।
বীমার সুবিধাগুলি কীভাবে কাজ করে?
কোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির বা পরিবার কর্তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হলে যে আর্থিক ক্ষতি সাধন হয় তা একটি বীমা পরিকল্পনার দ্বারা অনেকাংশে পূরণ করা যায়। পরিবারের বাকি সদস্যরা বীমার এই অর্থ দিয়ে তাদের হোম লোন বা অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন অথবা সন্তানের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারবেন। কিছু বীমা পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংরক্ষণেও সহায়তা করে থাকে যা আপনার অবসরকালীন সময়ের চাহিদাগুলো পূরণে নিয়মিত আয়ের সুবিধা প্রদান করবে। অর্থাৎ, যে সকল বাংলাদেশীরা তাদের ভবিষ্যতের আর্থিক অবস্থা সুরক্ষিত রাখতে চান, বীমা তাদের জন্যে অনেক চমকপ্রদ সুবিধা প্রদান করতে পারে।
কখন পরিবারের কর্তারজীবন বীমা করা উচিত?
পরিবারপ্রেমী প্রতিটি মানুষই চায় তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পরিবার যেন নিরাপদে থাকে। পরিবারের প্রতি ভালবাসা থেকে তাদের নিরাপত্তার জন্য বীমা খুবই কার্যকরী। পরিবারের প্রতি এই ভালবাসা মমত্ববোধ থেকে পরিবার কর্তা বীমা করতে উদ্বদ্ধ হতেই পারেন।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন লক্ষ্য আপনাকে বীমা করতে আগ্রহী করে তুলবে। চলুন আমরা এ নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারনা নেই।
▶️ ধরুন আপনি সন্তান নিতে ইচ্ছুক, তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনাস্বরুপ বীমা বেছে নিতে পারেন।
▶️ আবার, পেশাগত জীবন শেষে অবসরকালীন জীবনের আয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে বীমা নিশ্চয়তা প্রদান করে। একারণেও চাকরিকালীন সময়েই জীবন বীমা করা উচিত।
▶️ এছাড়াও আমাদের এই অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি নিরসনের জন্য বীমা সুস্থ অবস্থায় করে রাখা উচিত। আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে যাতে পরিবার অভাবের মুখে না পরে এই নিশ্চয়তাও বীমা প্রদান করে থাকে।
▶️ যদি আপনার কোন ঋণ থেকে থাকে, কোন দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হলে আপনার করা বীমা এই ঋন পরিশোধ করবে। এই ঋনের বাড়তি বোঝা আপনার পরিবারকে বইতে হবে না।
এরকম আরো অনেক কারনে আমাদের বীমা করা উচিত।
পরিশেষে
জীবন এতটাই অনিশ্চিত যে ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কিছু আগে থেকেই আন্দাজ করে রাখা প্রায় অসম্ভব। বীমা এমন একটি পদ্ধতি যা আপনাকে আস্থার সাথে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে।যত কম বয়সে আপনি পলিসি ক্রয় করবেন, আপনাকে তত কম প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। একটি ছোট পলিসিও কঠিন সময়ে আপনার প্রিয়জনদেরকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এমনকি ঋণ পরিশোধ করা, চলমান জীবনমানের ব্যয় বহন করা এবং আপনার সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে সঞ্চয় করাও সম্ভব হয়ে উঠে। সঠিক বীমা নিরাপত্তাটি করা থাকলে কঠিন সময়গুলোতে আপনার আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তিত হতে হয় না। ফলে আপনি তখন দরকারী বিষয়গুলোতে ঠিকমতো মনোনিবেশ করতে পারবেন।উপরের আলোচনায় বুঝতে পেরেছেন বীমা কী।পরিবার কর্তার কেন বীমা করা উচিৎ।
একটি ছোট বিনিয়োগ আপনার ভবিষ্যতের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। এজন্য ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমানোর একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে বীমা। জীবনের প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।আরো ভালোভাবে বুঝতে হলে নিচের ভিডিও টি দেখতে পারেন –
আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্ট টি আপনাদের খুবই কাজে আসবে।
বাংলায় ইনফো তে এইভাবে আরো ভালো ভালো টিপস পেতে হলে আমাদের সাথে অবৈশ্যৈই যুক্ত থাকুন। ধন্যবাদ।
FAQ
ব্যাংক ও বীমার মধ্যে পার্থক্য কি?
বীমাকারী এবং পুনঃবীমাকারীদের মূল ক্রিয়াকলাপ হ’ল ঝুঁকি পুলিং এবং ঝুঁকির রূপান্তর, যখন ব্যাঙ্কগুলির কাজ হল আমানত সংগ্রহ করা এবং ঋণ প্রদান করা, পাশাপাশি ফি-ভিত্তিক বিভিন্ন পরিষেবার ব্যবস্থা করা।
কোন ধরনের বীমা করা ভালো?
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই সম্মত হন যে জীবন, স্বাস্থ্য, দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা এবং অটো বীমা এই চার ধরনের বীমা আপনার অবশ্যই থাকতে হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ইন্সুরেন্স কোম্পানি কোনটি?
১০ টি সেরা বীমা কোম্পানি,মেটলাইফ,ডেল্টালাইফইন্স্যুরেন্স,জীবন বীমা কর্পোরেশন,পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স,মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স,সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, Top 10 insurance.
বীমাকারীর আগে বীমা পলিসির মালিক মারা গেলে কি হবে?
যদি মালিক এবং বীমা গ্রহীতা দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি হয় এবং মালিক প্রথমে মারা যান, তাহলে বীমাকৃতের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত পলিসির মালিকানা একজন।