আপনি কি জানেন জীবন বীমা কী এবং কেন প্রয়োজন? জীবন বীমার প্রকারভেদ নিয়ে ভাবছেন? তাহলে এই পোস্টে ভিজিট করে দেখেনিন। এই আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে মনোযোগ সহকারে পড়ুন-
বীমা মূলত ঝুঁকি নিরসনের একটি উপায় যার মাধ্যমে যে কেউ তার নিজের জান-মাল, সম্পত্তি, ব্যবসা এসবের নিরসন করতে পারে। আর জীবন বীমা জীবনের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য করা একটি বীমা। আসুন এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানি।
জীবন বীমা কী?
জীবনের নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয় তাকেই বলা হয় জীবন বীমা। অর্থাৎ ভবিষ্যতে জীবনের ঝুঁকি ক্ষতির নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয় তাকে জীবন বীমা বলে। জীবন বীমা কোনো ব্যক্তি এবং বীমা দাতার মধ্যকার চুক্তি। কোনো পরিবারে যদি অর্থ উপার্জন করার একমাত্র ব্যক্তি থাকে তাহলে তার মৃত্যুর পর তার পরিবার অর্থ সংকট দেখা যাবে। এই জন্য কোনো ব্যক্তি বীমা দাতার কাছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি টাকা জমা করে ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির যদি মৃত্যু হয় তাহলে একটি মোটা অংকের টাকা ওনার পরিবার পাবেন। যার ফলে ওই ব্যক্তির পরিবার আর অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে না এবং ওই পরিবারে অর্থ সংকট দেখা দেবে না।
জীবন বীমার গুরুত্ব
আপনার অকাল মৃত্যুতে আপনার প্রিয়জনদের আর্থিক ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে জীবন বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জীবন বীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ তার কিছু মূল কাব়ণ ব়য়েছে এখানে:
প্রিয়জনদের জন্য আর্থিক সুরক্ষা
জীবন বীমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল আপনার সুবিধাভোগীদের একটি মৃত্যু সুবিধা প্রদান করা। এই আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে যে আপনার প্রিয়জনরা তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারে এবং তাদের আর্থিক বাধ্যবাধকতা মেটাতে পারে, যেমন বন্ধকী অর্থ প্রদান, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় এবং শিশুদের শিক্ষাগত খরচ।
ঋণ পরিশোধের
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে কোনো বকেয়া ঋণ, যেমন একটি বন্ধকী, গাড়ি ঋণ, বা ক্রেডিট কার্ড ব্যালেন্স কভার করতে। পর্যাপ্ত কভারেজ থাকার মাধ্যমে, আপনি আপনার পরিবার থেকে ঋণের বোঝা কমিয়ে আনতে পারেন, তাদেরকে উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো আর্থিক দায়বদ্ধতা থেকে বিরত রাখতে পারেন।
এস্টেট পরিকল্পনা
জীবন বীমা এস্টেট পরিকল্পনার একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি আপনাকে একটি উত্তরাধিকার রেখে যেতে এবং আপনার উত্তরাধিকারীদের জন্য একটি উত্তরাধিকার প্রদান করতে দেয়। একটি জীবন বীমা পলিসি থেকে মৃত্যু সুবিধা এস্টেট ট্যাক্স প্রদানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, নিশ্চিত করে যে আপনার প্রিয়জনরা আপনার এস্টেট থেকে সর্বোচ্চ মূল্য পান।
কেন আমাদের জীবন বীমা করা উচিত?
আমাদের প্রত্যেকের জীবনই অনিশ্চিত। যেকোন সময় অপ্রত্যাশিত, অভাবনীয় কোন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা ভালো বা খারাপ যেকোনটি হতে পারে। জীবন বীমা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার জন্য একটি নিরাপত্তার ঢাল স্বরুপ।
প্রতিটি মানুষের জন্যই তার পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকেই চায় তার অবর্তমানে তার পরিবার যেন নিরাপদে থাকে। আর্থিক কষ্টে না পড়ে এবং এ কারনে জীবন বীমা একটি নিশ্চয়তা স্বরুপ। এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে যার কারনে আপনার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন পরতে পারে। যেকারনে জীবন বীমা করা উচিত। যেমনঃ
▶️ আকস্মিক কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবার আর্থিক অবনতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
▶️ শারীরিক অসুস্থতাজনিত জটিলতায় জীবন বীমা অতিরিক্ত আয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
▶️ আপনার অবর্তমানে সন্তানদের শিক্ষা ও অন্যান্য খরচ নিশ্চিত করবে জীবন বীমা।
▶️ ভবিষ্যতে সঞ্চয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
▶️ চাকরি হতে অবসরে যাওয়ার পর অবসরকালীন সময়ে আয়ের একটি উৎস হিসেবে সহায়তা করবে।
এরকম আরো অনেক দুর্ঘটনাজনিত ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য বর্তমান সময়ে জীবন বীমা একটি রক্ষা কবচের মতো। এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই আমাদের জীবন বীমা করা উচিত।
আরো পড়ুন: আপনি কি টাকা জমাতে চান? ২০২৩ এ টাকা জমানোর সহজ উপায়
জীবন বীমার প্রকারভেদ
সকলের একটি ভালো সুরক্ষিত জীবন বীমা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবন বীমা আপনার বৃদ্ধ বয়সের সম্বল অথবা আপনার বর্তমানে আপনার পরিবারের নিরাপত্তা স্বরূপ। তাই সকলের সঠিক জীবন বীমা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতে বিভিন্ন প্রকারের জীবন বীমা পরিকল্পনা রয়েছে আপনি আপনার সুবিধামতো জীবন বীমা পরিকল্পনা নির্বাচন করতে পারেন। ভারতের বিভিন্ন জীবনবীমা পরিকল্পনা-
র্টাম লাইফ ইন্সুরেন্স বা টার্ম পরিকল্পনা
টার্ম প্ল্যান লাইফ ইন্সুরেন্স সবচেয়ে জনপ্রিয় জীবন বীমা। এটি বহুল ব্যবহৃত সহজ সরল জীবন বীমা পরিকল্পনা। র্টাম লাইফ ইন্সুরেন্স জীবনবীমার মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী।
অন্যান্য জীবন বীমা পরিকল্পনার তুলনায় একটি সস্তা।
নামমাত্র প্রিমিয়ামে উচ্চ পরিমাণে কভারেজ।
এই জীবনবীমা পরিকল্পনা ম্যাচুরিটি সুবিধা প্রদান করে। অর্থাৎ পলিসির মেয়াদ শেষে প্রিমিয়ামের রির্টান পাবেন।
এক্সিডেন্টাল ডেথ বেনিফিট এর সুবিধা পাবেন।
চাইল্ড সাপোর্ট রাইডার বেছে নিয়ে টার্ম প্লেনের কভারেজ বাড়াতে পারেন।
অবসর পরিকল্পনা
অবসর পরিকল্পনা আপনার অবসর প্রাপ্ত সময়ে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে। আপনি যদি বর্তমানে কোন চাকরি বা কোন কাজ করেন তাহলে এখন থেকেই এই পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করা চালিয়ে যান কারণ আপনার অবসর প্রাপ্ত সময়ে আপনার অর্থাভাব দেখা দিতে পারে। এই পরিকল্পনাটি আপনার অবসর প্রাপ্ত সময়ে আপনার খরচের বোঝা উঠাবে। বর্তমানে আপনি আপনার কর্মজীবানের উপার্জিত টাকার কিছু অংশ এই অবসর পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করতে পারেন। অবসর পরিকল্পনা আপনার চাকরি থেকে রিটায়ারমেন্টের পর একটা আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করবে। এবং অবসর পরিকল্পনা আপনার মৃত্যুজনিত সুবিধাও রয়েছে।
শিশু বীমা
শিশু বীমা পরিকল্পনা হল সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা সন্তানের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করে তুলবে। পিতা মাতার অবর্তমানে শিশুর বিবাহ, লেখাপড়া এবং শিশুর লক্ষ্য পূরণে আর্থিক চাহিদা মেটাবে। পলিসিধারীর দুর্ভাগ্যজনিত মৃত্যুর পরে শিশুর ভবিষ্যতের সুরক্ষা প্রদানে সাহায্য করে এই পরিকল্পনা।
পুরো জীবন বীমা পরিকল্পনা
পুরো জীবন পরিকল্পনা হল এক ধরনের জীবন বীমা যা পলিসিধারী ব্যক্তিকে পুরো জীবন অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত সুরক্ষা প্রদান করে। পুরো জীবন বীমা পরিকল্পনায় প্রিমিয়ামের পরিমাণ বেশি হলেও একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পলিসিধারী ব্যক্তিকে লভ্যাংশ প্রদান করা হয়।
মানি ব্যাক পলিসি
জীবন বীমা পরিকল্পনার একটি প্রকার হলো মানি ব্যাক পলিসি। পলিধারীকে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিমাকৃত অর্থের একটি শতাংশ প্রদান করা হবে। বীমা ম্যাচিউরিটির পর পলিসিধারীকে অবশিষ্ট টাকা প্রদান করা হবে। এবং পলিসিধারীর মৃত্যুর পর তার উপর নির্ভরশীল পরিবারকে অর্থ প্রদান করা হবে।
এনডাওমেন্ট পলিসি
এনডাওমেন্ট পলিসি বীমা এবং সঞ্চয় উভয়প্রকার হিসেবে কাজ করে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হল বীমা ম্যাচুরিটির পর বীমাকৃত ব্যক্তিকে তার অর্থ প্রদান করা।
কখন আমাদের জীবন বীমা করা উচিত?
পরিবারপ্রেমী প্রতিটি মানুষই চায় তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পরিবার যেন নিরাপদে থাকে। পরিবারের প্রতি ভালবাসা থেকে তাদের নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা খুবই কার্যকরী। পরিবারের প্রতি এই ভালবাসা মমত্ববোধ থেকে আপনি জীবন বীমা করতে উদ্বদ্ধ হতেই পারেন।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন লক্ষ্য আপনাকে জীবন বীমা করতে আগ্রহী করে তুলবে। চলুন আমরা এ নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারনা নেই।
▶️ ধরুন আপনি সন্তান নিতে ইচ্ছুক, তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনাস্বরুপ জীবন বীমা বেছে নিতে পারেন।
▶️ আবার, পেশাগত জীবন শেষে অবসরকালীন জীবনের আয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে জীবন বীমা নিশ্চয়তা প্রদান করে। একারণেও চাকরিকালীন সময়েই জীবন বীমা করা উচিত।
▶️ এছাড়াও আমাদের এই অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি নিরসনের জন্য জীবন বীমা সুস্থ অবস্থায় করে রাখা উচিত। আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে যাতে পরিবার অভাবের মুখে না পরে এই নিশ্চয়তাও জীবন বীমা প্রদান করে থাকে।
▶️ যদি আপনার কোন ঋণ থেকে থাকে, কোন দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হলে আপনার করা জীবন বীমা এই ঋন পরিশোধ করবে। এই ঋনের বাড়তি বোঝা আপনার পরিবারকে বইতে হবে না।
এরকম আরো অনেক কারনে আমাদের জীবন বীমা করা উচিত।
পরিশেষে
আমাদের প্রয়োজনেই জীবন বীমার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সময় কখন, কোথায়, কোন জায়গায় আমাদের দাঁড় করাবে আমরা কেউই জানি না।একটি ছোট বিনিয়োগ আপনার ভবিষ্যতের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। এজন্য ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমানোর একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে জীবনবীমা। জীবনের প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
FAQ
জীবন বীমা পেমেন্ট কত টাকা?
আপনার জীবন বীমা পলিসির অর্থপ্রদান নির্ভর করবে আপনি যে পরিমাণ মৃত্যু সুবিধার জন্য অর্থ প্রদান করবেন, সেইসাথে পেআউটের আগে পলিসির বিপরীতে ধার করা অর্থের উপর।
জীবন বীমার অসুবিধা কি?
সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল এই সুবিধার জন্য আপনাকে মাসিক বা বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হবে । লাইফ ইন্স্যুরেন্স থাকার সুবিধাগুলি বেশিরভাগ লোকের জন্য ক্ষতির চেয়ে বেশি হয় যাদের আর্থিক দায়বদ্ধতা রয়েছে যেমন বন্ধকী প্রদান, শিশু।