আপনি যদি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করে থাকেন তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার মত আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি হয়েছে কিনা বা কি ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের বর্তমান অবস্থা কিভাবে জানবেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম সম্পর্কে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডের জন্য যারা বায়োমেট্রিক তত্ত্ব প্রদান করেছেন তাদের তাদের এ প্রশ্নগুলো ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে জানতে পারবেন। এবং আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের সময় রেজিস্টার করা মোবাইল নাম্বার দিয়ে খুব সহজে এমএমএস এর মাধ্যমে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। এই সমস্ত সব তথ্য পেতে সম্পূর্ণ পোস্টে অবশ্যই পড়ুন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
- ড্রাইভিং লাইসেন্স পূর্বসত্য হলো লার্নার বা শিক্ষা নেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স।
- প্রথমে আবেদনকারীর লার্নার বা শিক্ষা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন করতে হয়।
- আবেদনকারীর অস্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান ঠিকানার (প্রয়োজনীয় কাগজপত্র) বিআরটিসি এর যে সার্কেলে আওতায় ভুক্ত থাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
- সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি শিক্ষা নিবেদ বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে যা দিয়ে আপনার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। ২ থেকে ৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আবেদনকারী নির্ধারিত তারিখ ও সময় নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে-এ অংশগ্রহণ করতে হবে। এই সময় আবেদনকারীকে তার লার্নারবার শিক্ষা নিবি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মূল কপি ও লিখিত পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে। তবে একজন পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স
- সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং অপেশাদারের জন্য সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হবে।
লার্নার বা শিক্ষা নিবিজ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
- রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- এনআইডি কার্ড / জন্ম সনদ /পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- নির্ধারিত ফি, ১ ক্যাটাগরি-৩৪৫/- টাকা ও ২ ক্যাটাগরি- ৫১৮/- টাকা বিআরটিএর নির্ধারিত (ব্যাংক এর তালিকা www.brta.gov.bd – এই ওয়েবসাইটে জমা দানের রশিদ পাওয়া যাবে)।
- সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প সাইজের ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
এরপর লিখিত মোবি কো ফিল টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক্স ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হবে। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণ হলে আবেদনকারী কে এসএমএস এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপরেও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনার নিকটস্থ ড্রাইভিং অফিসে গিয়ে আরো বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রকৃতি
- পেশাদার হালকা মোটরযানের ওজন ২৫০০ কেজি এর নিচে হলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
- পেশাদার মধ্যম মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি হলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ব্যবহার কমপক্ষে ৩ বছর থাকতে হবে।
- পেশাদার ভারি মোটর চানের ওজন ৬ হাজার ৫০০ কেজির বেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং পেশাদার মধ্য ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ব্যবহার কমপক্ষে ৩ বছর থাকতে হবে।
অর্থাৎ একজন পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী কে প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পর তিন বছর পর বাড়ি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- নির্ধারিত আবেদন ফরম নিতে হবে।
- রেজিস্ট্রি কার্ড ডাক্তার কোচিং মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে।
- এনআইডি কার্ড /জন্ম সনদ /পাসপোর্টে সত্যায়িত ফটোকপি।
- সুন্দর তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- নির্ধারিত ফি (পেশাদার ১৪৩৮/- টাকা ও অপেশাদার ২৩০০/- টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দানের রশিদ লাগবে।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন লাগবে।
রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
যারা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তারা বিআরটিএ অফিস থেকে একটি ফরম পাবেন। এই ফরমটিতে একটি রেফারেন্স নাম্বার দেওয়া হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স যেকোনো তথ্য এ রেফারেন্স নাম্বার ব্যবহার করে পাওয়া যায়। অনলাইনে বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ট্যাটাস ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এবং এই রেফারেন্স নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রদান করে খুব সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা যায়। এবং সেখান থেকে অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি ডাউনলোড করা যায়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক অনলাইন
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য আপনার দুটি তথ্য ও প্রয়োজন হবে। একটি হল রেফারেন্স নাম্বার বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার এবং আরেকটি হলো জন্ম তারিখ।
এই দুইটি তথ্য এবং একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে আপনি নিজেই অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন। কিভাবে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটা অনলাইনে চেক করবেন তা নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলো –
- প্রথমে আপনার স্মার্টফোনে অন্য কোন ডিভাইস থেকে বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ট্যাটাস ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
- এখানে প্রবেশ করার পর উল্লেখিত ছবির মত একটি ইন্টারফেস আপনার সামনে আসবে।
- এখান থেকে প্রথম অপশনে আপনি রেফারেন্স নাম্বার দেখতে পাবেন। এরপর আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স রেফারেন্স নাম্বার লিখতে হবে এখানে।
- এরপর নিচে আপনার জন্ম তারিখ সঠিকভাবে লিখে সাবমিট পাটনে ক্লিক করতে হবে।
সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর পেজটি পুনরায় লোডিং হবে এবং আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর তথ্য দেখাবে। তারপর এখানে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড করার অপশনটিতে ক্লিক করে পিডিএফ ফরমেট অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।
মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
এসএমএস এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য আপনার মোবাইল মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন DL<Space>Reference Number লিখে সেন্ড করুন 26969 এই নাম্বারে। যদিও মাঝে মাঝে অনলাইন থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার সিস্টেমটি বন্ধ থাকে সে কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর অবস্থা জানার জন্য এসএমএস এর মাধ্যমে যাচাই করতে পারেন।
শেষ মন্তব্য
আজকের পোস্টে কিভাবে মোবাইলে বা অনলাইনে মাধ্যমে রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করবেন বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি যারা নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করবেন তারা এই পোস্টটি পড়লে উপকৃত হবেন। এছাড়াও সৌদি আরবে কোন ভিসা ভালো এটি জানতে চাইলে এই পোস্টটি ভিজিট করতে পারেন। এমন আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে বাংলা ইনফোর সাথে যুক্ত হন। ধন্যবাদ এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য।
আরো কিছু জানতে চাইলে নিচের উল্লেখিত ভিডিওটি দেখতে পারেন।
কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন।
FAQ’s
১. ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে কত টাকা জরিমানা হতে পারে?
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে মোটরযান ও গণপরিবহন চালনা বিডি নিষেধ সংক্রান্ত ধারা ৪ এবং ৫ এর বিধান লংঘন করলে ২৫হাজার টাকা দন্ড অনধিক ৬ মাস।
২. লাইসেন্স এর অর্থ কি?
লাইসেন্স এর অর্থ অনুমতিপত্র যা কোন কিছু, ব্যবহার করা বা নিজের করে নেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক অনুমতি।
৩. ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে কত টাকা লাগে?
নির্ধারিত ফি (পেশাদার ১৬৭৯/- ও অপেশাদার- ২৫৪২/-টাকা) বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকের জমা দানের রশিদ।