বাংলাদেশের একজন নাগরিকের প্রমাণ পত্র হলো ভোটার আইডি কার্ড। দেশের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এই জন্যই সকল নাগরিকের ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করা খুবই দরকার। আর যারা এখনো ভোটার আইডি কার্ড করেন নাই তারা তারাতাড়ি আইডি কার্ড তৈরি করা প্রয়োজন। একটি ভোটার আইডি কার্ড করতে যত সময় লাগে এবং তত সময় লাগে ভোটার আইডি কার্ড পেতে। একটি ভোটার আইডি কার্ড অনেক কাজে প্রয়োজন হয়। যেমন: ভোট দেওয়ার, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করা, পাসপোর্ট আবেদন করতে, সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে, বাড়ি ভাড়া এবং জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হয়।
আপনার যদি ভোটার আইডি কার্ড না থাকে তাহলে কীভাবে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করবেন? ভোটার আইডি কার্ড পেতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতি ৩ বছর পর পর সবার বাসায় বাসায় গিয়ে ভোটার তালিকা তৈরির হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমে যাদের বয়স ১৬ বছরের বেশি তারা ভোটার আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবেন। ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করার পর কিছুদিনের মধ্যেই আপনার বিভিন্ন তথ্য এবং বায়োমেট্রিক দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই আপনাকে ভোটার স্লিপ প্রদান করা হবে। পরবর্তী এই স্লিপ ব্যবহার করে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করা হয়। ফলে এভাবেই আপনি আপনার কাছে সহজেই ভোটার আইডি কার্ড পেতে পারেন।
আবার অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে এবং সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করে থাকে। এই পদ্ধতিতে আবেদন করেন তাহলে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই একটি ভোটার স্লিপ প্রদান করা হবে।
এসব কাজে শেষে নতুন ভোটারদের মনের মধ্যে একটি কথা চিন্তা করে প্রশ্ন মনের মধ্যে থাকে যে ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন সময় লাগবে? তাই আপনাদের এই প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে দূর করতে আপনি কতদিন অপেক্ষার পর ভোটার আইডি কার্ড হাতে পাবেন নিচে উল্লেখ করা হলো।
ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে?
ভোটার নিবন্ধন আবেদন ফরম পূরণ করে এবং আপনার সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করার শেষে নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্তৃপক্ষ আপনার সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। সব কার্যক্রম শেষ করার পর আপনার ভোটার আইডি কার্ড সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে আপনাকে ১০৫ এই নাম্বার থেকে একটি SMS পাঠাবে। ওই SMS এ আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বারটি জানিয়ে দিবে। এরপর আপনি চাইলে আপনার ভোটার আইডি কার্ড https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে সহজেই ডাউনলোড করে নিয়ে নিতে পারবেন।
৩ বছর পর পর এলাকায় ভিত্তিক যে ভোটার আইডি কার্ড করার তথ্য সংগ্রহের হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করে, ওই কার্যক্রমে অনেকেই একসাথে আবেদন করে। তাই এই মাধ্যমটির ফলে ভোটার আইডি কার্ড পেতে অনেক সময় লেগে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ৬ মাসের বেশি সময় লেগে যায় ভোটার আইডি কার্ড প্রস্তুত হতে। এরপর কিছুদিন অপেক্ষা করে আপনার নিকটস্থ উপজেলা অফিস থেকে স্মার্ট কার্ড পাবেন। তাছাড়া গ্রাম অথবা এলাকা ভিত্তিক হিসেবে স্মার্ট কার্ড বিতরণ ক্যাম্পিং এর মাধ্যমেই আপনার স্মার্ট কার্ড পাওয়া যাবে।
অপরদিকে, আপনি যদি অনলাইনে মাধ্যমে এবং উপজেলা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করে থাকেন তাহলে সে ক্ষেত্রে কাগজপত্র এবং বায়োমেট্রিক তথ্য গুলো যাচাই-বাছাই করার পর ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই SMS পেয়ে যেতে পারেন।
তবে সকলেই মনে রাখবেন, আপনি যদি এলাকা ভিত্তিক ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ফরম পূরণ করেন কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড SMS না পেয়ে থাকেন তাহলে কোনো ভাবেই সরাসরি দ্বিতীয়বার উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের গিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করবেন না। এটি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ভালো হবে যে, আপনি যদি নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন তাহলে SMS না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
যদি আপনি ১০৫ নাম্বার থেকে SMS আসে তাহলে nidw এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ডাউনলোড করে ফেলুন। আরো বিস্তারিত জেনে নিয়ে আপনি এখনই নতুন নিয়মে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করুন।
এনআইডি কার্ড পাওয়ার উপায়
এলাকা ভিত্তিক নতুন ভোটার কার্যক্রমে এবং উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে ভোটার হওয়ার আবেদন করলে ভোটার আইডি কার্ড পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ভোটার আইডি কার্ড অত্যন্ত প্রয়োজন হয়। সাধারণত একজন নাগরিকের ১৮ বছরের উপর হলে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হয়।
ভোটার নিবন্ধন করার পরে আপনার বিভিন্ন তথ্য যাচাই বাছাই করে কিছু দিনের মধ্যেই SMS করে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আপনারা nidw ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে অ্যাকাউন্ট করে নিন। অ্যাকাউন্ট করতে নিচে বিস্তারিত দেখুন।
ধাপ-১:
আপনার মোবাইলের Crome browser প্রবেশ করে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ওয়েবসাইটি সার্চ করে ভিজিট করুন।
ধাপ-২:
নতুন অ্যাকাউন্ট করার জন্য রেজিস্ট্রেশন অপশনটি ক্লিক করুন।
ধাপ-৩:
আগের কোন অ্যাকাউন্ট করা থাকলে তাহলে আপনার সঠিক তথ্য দিয়ে লগইন করে নিন।
ধাপ-৪:
এরপরে ১০৫ নাম্বার থেকে SMS এ আসা ভোটার নাম্বারটি এবং জন্ম তারিখ বসান। নিচের ক্যাপচারটি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করে “সাবমিট” অপশনটি ক্লিক করুন।
ধাপ-৫:
এরপরে আপনার সঠিক বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট করে “পরবর্তী” অপশনটি ক্লিক করুন।
ধাপ-৬:
আপনার সঠিক মোবাইল নাম্বারটি বসিয়ে OTP ভেরিফিকেশন কমপ্লিট সম্পূর্ণ করুন।
ধাপ-৭:
এরপরে গুগল প্লে স্টোর থেকে “NID Wallet” ডাউনলোড করে “QR” Scanner করে নিন।
ধাপ-৮:
“NID Wallet” Apps এর মাধ্যমে ফেস ভেরিফিকেশন করে নিন।
ধাপ-৯:
একটি কঠিনতম পাসওয়ার্ড বসান।
ধাপ-১০:
তারপর আবার ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট লগইন করে প্রোফাইল অপশনে প্রবেশ করে “ডাউনলোড” অপশনটি ক্লিক করুন।
SMS করে ভোটার আইডি কার্ড এর নাম্বার সংগ্রহ
আপনি সহজ ভাবে SMS করে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার সংগ্রহ করতে পারবেন। যদি আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার সংগ্রহ করতে চান তাহলে প্রথমেই মোবাইলের মেসেজ অপশন চালু করে নিন। তারপর nid <স্পেস> Form Number <স্পেস> dd-mm-yyyy লিখে ১০৫ এই নাম্বারে বার্তা পাঠান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। তারপর ১০৫ নাম্বার থেকেই আপনাকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিবে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বারটি।
উদাহরণ স্বরূপ হিসেবে নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
ভোটার এসএমএস না আসলে করনীয় কি?
আপনি ভোটার নিবন্ধন আবেদন করেছেন অনেকদিন হয়ে গেছে। আপনার সাথে একইভাবে যারা ভোটার নিবন্ধন আবেদন করেছে তারা ভোটার আইডি কার্ড পেয়েছে এবং এসএমএস পেয়েছে। কিন্তু আপনি এখনো ভোটার আইডি কার্ড এবং এসএমএস পাননি। এরূপ অনেক সময় দেখা যায় নেটওয়ার্ক এবং সার্ভারের সমস্যার কারণে এসএমএস আসতে অনেক দেরি হয়। এতে ভোটার আইডি কার্ড পেতে ও অনেক দেরি হয়।
এক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত উল্লেখিত ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করে একাউন্ট করে নিন। উপরে nidw ওয়েব সাইটটি কিভাবে আপনি অ্যাকাউন্ট করবেন এবং লগইন করে ডাউনলোড করবেন সব বিস্তারিত দেওয়া রয়েছে। এখন করার পর ওই পদ্ধতিতে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বারের পরিবর্তে আপনার কাছে থাকা ফরম বা স্লিপের নাম্বার বসিয়ে দিন।
এরপরও যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ড এর বিস্তারিত জানতে না পারলে তাহলে সরাসরি আপনার নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে আপনার সমস্যাগুলো তুলে ধরুন। তারা আপনাকে খুবই তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করে দিবে। এই সব কিছু ভালো ভাবে ফলো করলে তাড়াতাড়ি ভোটার আইডি কার্ড পেতে সাহায্য করবে।
ভোটার আইডি কার্ড চেক করার পদ্ধতি
আপনার যদি ভোটার হয়ে থাকে তাহলে সহজ ভাবে বিভিন্ন উপায়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে পারবেন। প্রথম উপায় হল, ১০৫ নাম্বারে এসএমএস পাঠিয়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে পারবেন। এবং দ্বিতীয় উপায় হল, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই চেক করতে পারবেন।
এই দুইটি উপায় এর মাধ্যমে আপনি অনেক সহজেই ভোটার আইডি কার্ড পেতে সাহায্য করে।
ভোটার আইডি কার্ড পেতে ভিডিওটি দেখুন
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনারা বুঝতে পারছেন যে ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করার পর এবং আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার পর ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে।
ইতিমধ্যেই আমাদের ওয়েবসাইট “বাংলায় ইনফো”তে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে অনেক প্রকারের আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়েছে। পাবলিশকৃত আর্টিকেল গুলো নিচে টেবিল আকারে দেওয়া হল।
নতুন ভোটার হতে চাইলে | নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন |
নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি চেক করতে চাইলে | নাম্বার দিয়ে নতুন ভোটার আইডি কার্ড চেক |
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে চাইলে | অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন |
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে চাইলে | নতুন নিয়মে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করুন ২০২৪ |
FAQ
১. কত বছর বয়সে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতি ৩ বছর পর পর সবার বাসায় বাসায় গিয়ে ভোটার তালিকা তৈরির হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমে যাদের বয়স ১৬ বছরের বেশি তারা ভোটার আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবেন।
২. স্মার্ট কার্ড কোথায় পাওয়া যাবে?
উত্তর: আপনার নিকটস্থ উপজেলা অফিস থেকে স্মার্ট কার্ড পাবেন। তাছাড়া গ্রাম অথবা এলাকা ভিত্তিক হিসেবে স্মার্ট কার্ড বিতরণ ক্যাম্পিং এর মাধ্যমেই আপনার স্মার্ট কার্ড পাওয়া যাবে।
৩. স্মার্ট কার্ড কিভাবে বের করবেন?
উত্তর: স্মার্ট কার্ড বের করতে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। নতুন অ্যাকাউন্ট করার জন্য রেজিস্ট্রেশন অপশনটি ক্লিক করুন। আগের কোন অ্যাকাউন্ট করা থাকলে আপনার সঠিক তথ্য দিয়ে লগ ইন করে নিন। এরপরে ১০৫ নাম্বার থেকে SMS এ আসা ভোটার নাম্বারটি এবং জন্ম তারিখ বসান। নিচের ক্যাপচারটি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করে সহজেই স্মার্ট কার্ড বের করতে পারবেন।
৪. NID নাম্বার কত সংখ্যার হয়?
উত্তর: আগের NID নাম্বার ১৭ ডিজিট ছিল কিন্তু বর্তমানে NID নাম্বার অথবা স্মার্ট কার্ড এর নাম্বার ১০ ভিজিটের।