বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অন্যতম একটি ব্যাংক। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ বিদেশ ভ্রমণ করে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য। অনেকে বিদেশে যেতে চাইলেও টাকার অভাবে তাদের যাওয়া হয়ে ওঠেনা। তাই বিদেশ গমনদের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কাজ করছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে খুব সহজ শর্তে লোন গ্রহণ করে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবে। আজকের আর্টিকেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম, লোন এজন্য আবেদন করতে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কিত বিস্তারিত সকল তথ্য উল্লেখ করা হবে। তাই অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ সহকারে দেখুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম💸🏦
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম এর বিস্তারিত জানতে এই পোস্ট লিখা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের জন্য তাদের যাবতীয় সকল সপ্তম এনে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। এবং ব্যাংক শাখায় গিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করে ব্যাংকের জমা দিতে হবে। অথবা অনলাইনের মাধ্যমে আপনারা লোন এপ্লিকেশন ফর্ম ডাউনলোড করে সঠিক তথ্য দিয়ে সেটা পূরণ করে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় জমা দিতে পারেন।
প্রবাসি কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
বর্তমানে তিন প্রকার লোন প্রদান করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ১. অভিবাসন ঋণ, ২. পূর্ণবাসন ঋণ ও ৩. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ।
১. অভিবাসন ঋণ
বিদেশগামীদের বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অভিবাসন ঋণ প্রদান করে থাকে। বিদেশে যাওয়ার সকল ডকুমেন্টস নিয়ে ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করলে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অভিবাসন ঋণ প্রবাসীরা সর্বোচ্চ ১ থেকে ৩ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত দিন গ্রহণ করতে পারবে।
২. পূর্ণবাসন ঋণ
যারা একজন বৈধ বিদেশ প্রবাসী হয়ে থাকেন এবং বিদেশ থেকে চলে আসেন সে ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণবাসনের পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি যদি বৈধভাবে বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং রাজনৈতিক সামাজিক ইত্যাদি হয়রানি শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন তবে তিনি পরবর্তীতে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে প্রবাসী ব্যাংক লোন থেকে পূর্ণবাসন ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। পূর্ণবাসন ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর হয়ে থাকে। এবং একজন ঋণগ্রহীতা সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন তবে জামানতবিহীন ৩ লক্ষ্য টাকার সর্বজনীন গ্রহণ করতে পারবেন।
৩. বঙ্গবন্ধু অধিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
প্রবাসে বৈধভাবে চাকরির জন্য ভ্রমণ করার পরে পরিবারের যে কোন সদস্য যেমন বাবা-মা ভাই-বোন স্ত্রী, সন্তান অথবা নিকটআত্মীয় কেউ বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবারের গ্রহণ করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু অধিবাসীবৃহৎ ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর। এই ঋণের সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা লোন গ্রহণ করতে পারবেন তবে ৩ লক্ষ টাকার জমানতবিহীন গ্রহণ করতে পারবেন, তবে এর বেশি ঋণ নিতে চাইলে ঋণ গ্রহীতার স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্রিট মার্কেট মূল্য উক্ত ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রবাসে কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা
বিদেশগামীদের বিভিন্ন উপায়ে আত্মিক সেবা প্রধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নির্মাণ করা হয়। খুব সহজ হতে এই ব্যাংক থেকে প্রবাসীরা বিভিন্ন উপায়ে লোন গ্রহণ করতে পারেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো –
- চাকরি বা কাজের জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতে আত্মিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন।
- প্রবাসে থাকাকালীন কোন প্রবাসী আর্থিক সমস্যায় পড়লেই সে সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে।
- প্রবাসীরা দেশে ফিরে অন্য কাজের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাইলে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে।
এগুলো ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ের বিদেশগামীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন শর্তের উপর লোন প্রদান করে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে ?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম এর ধরনের ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। নিচে লোনের ধরন অনুযায়ী কি কি লাগে তা উল্লেখ করা হলো।
- অভিবাসন লোন গ্রহনের জন্য কি কি লাগে
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- নাগরিক সনদপত্র ফটোকপি।
- পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি।
- দুইজন জমিদার এবং তাদের যাবতীয় তথ্য।
- ভিসা, পাসপোর্ট ও বিএমইটি কার্ডের ফটোকপি।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় একটি একাউন্ট থাকতে হবে।
- জমিদারের স্বাক্ষর করা ব্যাংকে তিনটি চেকের পাতা।
পূর্ণবাসন লোন গ্রহণের জন্য কি কি লাগে
- জাতীয় পরিচয় পত্রের কবি ও পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি।
- জমিদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদনকারী ও জমিনদার এর পৌরসভা বা ইউনিয়ন কোচিক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
- ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
- জামানত সম্পত্তি ডকুমেন্ট এর ফটোকপি।
- ঋণ গ্রহীতার বিনিয়োগের ঘোষণাপত্র।
- ঋণগ্রহীতা সাক্ষ্যসহ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর তিনটি চেক পাতা।
- বিদেশ থেকে প্রত্যাগমন সংক্রান্ত ডকুমেন্ট।
- প্রকল্পের সকল তথ্য সহ গত দুই বছরে আয় ও ব্যয় এর বিবরণী।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন গ্রহণের জন্য কি কি লাগে
- যাদের পরিচয় পত্রের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি।
- ট্রেড লাইসেন্স।
- জমিদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- ব্যবসা বা প্রকল্পের স্থান ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে, লিজে চুক্তিপত্র লাগতে পারে।
- আবেদনকারী ও জমিন তার এর পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
- প্রকল্পের এক বছরের আই ও ব্যয় এর বিবরণী সহ বিস্তারিত তথ্য।
- ৩টি চেকের পাতা স্বাক্ষর করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
- কোন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে, উক্ত স্থান থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম ডাউনলোড করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন অথবা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম ভিজিট করতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করে লোনের আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। ঠিকভাবে ফরমটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য ডকুমেন্ট সংযুক্ত করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনে সুদের হার জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউস লোন
প্রবাসী যারা আছেন তারা যদি ঘর তৈরির করতে চান তারা প্রবাসী ব্যাংক লোন থেকে পুনর্বাসন গ্রহণ করতে পারেন। বৈধভাবে বিদেশ ভ্রমণ করে যারা রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক হয়রানি শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসে নিজেকে ও পরিবারকে পুনর্বাসন করার জন্য এই লোন দিয়ে থাকেন। এই লোন শুধু ঘর তৈরিতে নয়, ঘর তৈরির পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাজ ও বিনিয়োগ করতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোথায় আছে এটি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
এছাড়াও যদি আপনারা জানতে চান ২০২৪ এ কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় ? তাহলে এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
এই পোস্টের শেষ মন্তব্য
আজকের পোস্টে আপনাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। আশা করি আপনারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম এবং লোন নেওয়ার জন্য আরো তথ্য জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। এমন আরো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ে তথ্য পেতে বাংলায় ইনফোর ভিজিটের আমন্ত্রন জানিয়ে আজকের পোস্ট এখানে শেষ করলাম। ধন্যবাদ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সংক্রান্ত আরো কিছু জানতে চাইলে নিচের উল্লেখিত ভিডিওটি দেখতে পারেন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সংক্রান্ত সাধারণ কিছু প্রশ্ন আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
FAQ’s
১. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি সরকারি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রবাসীদের জন্য বিশেষায়িত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
২. বাংলাদেশে কোন ব্যাংকের নন ফার্মিং লোন সবচেয়ে কম?
বাংলাদেশের সেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সর্বনিম্ন NPL অনুপাত ৩.৩৫ শতাংশ।
৩. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
যারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে ইচ্ছুক তাদের প্রথমত, বিদেশ যাওয়ার প্রথম শর্ত বৈধ পাসপোর্ট থাকা, বিদেশ যাওয়ার জন্য ব্যাংক লোন পেতে প্রধান শর্ত হচ্ছে বৈধ ভিসা থাকা ইত্যাদি আরও যেগুলো তথ্য লাগবে ওইগুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।