বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

  বি আর এস খতিয়ান কি?2024 সালে জমির খতিয়ান যাচাই করবো কীভাবে

বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি অফিসের কাজই অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়। তাই ভুমি অফিসের অত্যান্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কুরনাজকাল অনলাইনেই করা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জমির খতিয়ান ও দলিল সম্পর্কে জানলেও “বি আর এস খতিয়ান” সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই, আজকের এই পোস্ট টি তাদের জন্য। আশা করি পোস্ট টি পুরোপুরি শেষ পর্যন্ত পড়লে এ ব্যাপারে ক্লিয়ার ধারনা পাবেন। আসুন বি আর এস খতিয়ান কি, বি আর এস খতিয়ান কিভাবে যাচাই করতে হয়, কিভাবে এটা সংশোধন করতে হয় এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

বি আর এস রেকর্ড কী?

 এক সময় সবাই জমির দলিল ও খতিয়ান চেক করতে ভুমি অফিসে যেত কিন্তু এই ডিজিটাল যুগের কল্যানে মানুষ ঘরে বসে অনলাইনেই এই কাজগুলো করতে সক্ষম হচ্ছে। জরিপ বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান হচ্ছে আর, এস, খতিয়ান যা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত (যেমন: বি এস এস খতিয়ান, বি আর এস খতিয়ান, সিটি জরিপ বা খতিয়ান ইত্যাদি)।

খতিয়ানের অর্থ হল ‘হিসাব। সাধারণভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা এবং তাদের স্বত্ত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ, শ্রেণী, এদের জন্য দেয় খাজনা ইত্যাদি বিবরণ সহ ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্ত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলা হয় এবং উক্ত রেকর্ডকে স্বত্ত্বের রেকর্ড বা রেকর্ড অব রাইট্স (ROR) বলা হয়।

আর বি আর এস রেকর্ড হলো “যে রেকর্ড বা খতয়ান একপৃষ্ঠা বিশিষ্ট ৯ টি কলামযুক্ত এবং আড়াআড়ি হয় সেই রেকর্ড বা খতিয়ানকে বি আর এস রেকর্ড বলে। এই খতিয়ানের পৃষ্ঠার উপরে সিটি জরিপের সিল মারা থাকে। যেখানে সি এস এবং আর এস খতিয়ান লম্বালম্বি হয় সেখানে বি আর এস খতিয়ান সবস্ময় আড়াআড়ি এবং ৯ কলামযুক্ত হয়ে থাকে। খুব বেশি প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য এক্সট্রা কলাম থাকতে পারে।

বি আর এস খতিয়ান কত সালে হয়?

বি আর এস খতিয়ানের সর্বশেষ জরিপ হয়েছিলো ১৯৯০ সালে। সেই অনুযায়ী এটা পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা অঞ্চলের অনেকে এটাকে মহানগর জরিপ হিসেবেও জানে। ১৯৯৮-৯৯ হতে চলমান যে জরিফ হয় সেই জরিফকে বি আর এস খতিয়ান বা রেকর্ড বলা হয়।

আর এস রেকর্ড বা খতিয়ান কি?

আর এস খতিয়ান হলো – একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তাকে আরএস খতিয়ান বলে। ওই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার এর পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত।

আর এস রেকর্ড বা খতিয়ান কত সালে হয়?

এস  এ রেকর্ড এ ওণেক ভূল-ভ্রান্তি থাকায় সারাদেশে জনগনের মধ্যে প্রচুর গন-অসন্তোষ দেখা যায়। তাই সরকার বিষয়টি যাচাই করার জন্য ১৯৫৯ সালে মাহমুদ কমিশন এবং পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দিন হোসেন কমিশন গঠন করেন।১৯৬৫-৬৬ সন হতে সংশোধনী জরিপ বা Rivisional Survey (আর এস খতিয়ান) চালু করা হয়। 

বি আর এস রেকর্ড সংশোধন করবেন কিভাবে?

পর্চা বা খতিয়ান সংশোধনকে রেকর্ড সংশোধন বলে। সাধারনত ভূমি জরিপ করার সময় বিভিন্ন ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। তাই আজকে আলোচনা করবো, জরিপের সময় যদি কোন ভুল পরিলক্ষিত হয় অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে  কেউ যদি ভুল রেকর্ড তৈরি করে তবে তা কিভাবে সংশোধন করা যায় অথবা জমির রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধন করার নিয়ম কি এগুলো সম্পর্কে। সরকার ২৫-৩০ বছর পর পর সাধারনত ভূমি জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড তৈরি করে থাকে। এগুলোতে ভুল পরিলক্ষিত হলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন করা যায়। ভুল সংশোধন কয়েকভাবে করা যায়-

১. মালিকানা বা দখলীয় কোন ভুল হলে তার সংশোধনের এখতিয়ার শুধু ভূমি সার্ভে আপিল বোর্ড, ভূমি সার্ভে আপিল ট্রাইবুনাল অথবা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এর উপর।

2.আর ভুল যদি সাধারন বা প্রিন্টিং জনিত হয় তাহলে সে ভুল সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড এর মাধ্যমে আবেদন করে সংশোধন করা যায়।

বি আর এস খতিয়ান যাচাই করবেন কিভাবে?

জরিপ বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান হচ্ছে আর, এস, খতিয়ান যা বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন (যেমন: বি এস এস খতিয়ান, বি আর এস খতিয়ান, সিটি জরিপ বা খতিয়ান ইত্যাদি) নামেও পরিচিত। খুবই সামান্য সময়ের মধ্যে অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করা সম্ভব। বাংলাদেশের সরকার এর জাতীয় ভুমি তথ্য ও সেবা কাঠামোর উপর একটা ওয়েবসাইট রয়েছে। সবধরনের খতিয়ানই এখন এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

এখানে আলোচনা করবো eporcha gov bd ওয়েবসাইট থেকে সহজেই কিভাবে যেকোন খতিয়ান যাচাই করা যায়। আবার ইচ্ছা করলে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপিও নামমাত্র ফি এর বিনিময়ে সংগ্রহ করতে পারবেন। জমির খতিয়ান যাচাই করার কয়েকটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

১. প্রথমে www.land.gov bd  লিংকে ক্লিক করুন অথবা ই-খতিয়ান লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম যে সার্চ রেজাল্ট আসবে সেই লিংকে ক্লিক করুন।

2. পেজে সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান এ গিয়ে প্রথমে কয়েকটি জিনিস সিলেক্ট করতে হবে যেমনঃ প্রথমে বিভাগ, তারপর জেলা এবং উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে।এরপর খতিয়ানের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। খতিয়ানের আবার কয়েকটি ধরন আছে যেমনঃ বিএস, সিএস, বিআরএস, আরএস, এসএ, পেটি, দিয়ারা ইত্যাদি। এইগুলোর ভিতর যেই খতিয়ানটি আপনার প্রয়োজন সেইটি সিলেক্ট করুন।

৩. খতিয়ানের ধরণ সিলেক্ট করার পরে উক্ত খতিয়ানে মৌজার নামসমূহ আসবে। এখান থেকে আপনার জমি যেই মৌজায় সেই মৌজাটি সিলেক্ট করতে হবে।

৪. জমির মৌজা সিলেক্ট করলেই উক্ত মৌজায় সকল জমির খতিয়ান সমূহ দেখা যাবে। খতিয়ানে তালিকার নিচে সার্চ অপশনে খতিয়ান নম্বর দিলেই আপনার নামের খতিয়ানটি চলে আসবে।আর যদি খতিয়ান নম্বর না জানা থাকলে দাগ নম্বর দিয়েই আপনি খতিয়ানটি খুঁজে পাবেন। এরজন্য খতিয়ান তালিকার নিচে “অধিকতর অনুসন্ধান” বাটনে ক্লিক করলে, দাগ নম্বর দিয়ে খোঁজার একটা অপশন আসবে, সেখানে আপনি দাগ নং দিয়ে কাংখিত খতিয়ানটি খুঁজে পেতে পারেন।  

অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করার সুবিধা:

অনেক সময় আমাদের জমির খতিয়ান হারিয়ে যায়। আর এই জন্য ভূমি অফিসে দিনরাত ঘোরাঘুরি করে খতিয়ান বের করতে হয়। কিন্তু আপনি চাইলে খুব সহজে ঘরে বসে অনলাইনে আপনার জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন। অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করার সুবিধা হলোঃ

  • অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করা খুবই সহজ এবং দ্রুত।
  • এটিতে কোন প্রকার ফি দিতে হয় না।
  • যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করা যায়।
  • খতিয়ান  হারিয়ে গেলে বা খতিয়ান নম্বর মনে না থাকলেও দাগ নং দিয়েও জমির খতিয়ান যাচাই করা যায়।
পোস্ট ট্যাগঃ

বি আর এস খতিয়ান কি, চিটা নকশা কি, ১ নম্বর খতিয়ান কি, বাংলাদেশের খতিয়ান কিভাবে চেক করবো? আর এস খতিয়ান অনলাইন চেক, www.land.gov bd আর এস খতিয়ান, আর এস রেকর্ড, খতিয়ান অনুসন্ধান, দাগ ও খতিয়ান নং, বি আর এস পর্চা, আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান, আর এস খতিয়ান অনলাইন আবেদন, ই খতিয়ান যাচাই, আর এস ও বি এস খতিয়ান, বি এস খতিয়ান ডাউনলোড, বি আর এস খতিয়ান অনলাইন।

বি আর এস খতিয়ান ডাউনলোড:

যেসমস্ত সিরিয়াল অনুসরন করে অনলাইন থেকে বি আর এস খতিয়ান ডাউনলোড করা যায় সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-

  1. ই পর্চা লিখে গুগল করে প্রথম লিংকে ক্লিক করুন অথবা সরাসরি এই eporcha.gov.bd/khatian লিংকে ভিজিট করুন।
  2. বিভাগ, জেলা, খতিয়ানের ধরন উপজেলা, মৌজা সিলেক্ট করুন।
  3. খতিয়ান, দাগ, মালিকের নাম বা পিতা/স্বামীর নাম এর যেকোন একটি সিলেক্ট করুন।
  4. খতিয়ান নম্বর দিন
  5. ক্যাপচা এন্ট্রি করুন। অনুসন্ধান করুন ক্লিক করুন।
  6. আবেদন করুন ক্লিক করুন
  7. অনলাইন কপি সিলেক্ট করুন
  8. জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর দিয়ে যাচাই করুন ক্লিক করুন।
  9. ইমেইল ও ক্যাপচা লিখুন
  10. পরবর্তী ধাপ সিলেক্ট করলেই আপনি অনলাইন কপি দেখতে পাবেন এবং সেটি ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করতে পারবে।
  11. এটিতে জলছাপ দেওয়া থাকে তাই এটি কোনভাবে দাপ্তরিক কাজে গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে আপনি তথ্যগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন এবং তথ্য নিশ্চিত হয়ে সার্টিফাইড কপি’র জন্য অন্যলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

FAQ

মোবাইলে খতিয়ান যাচাই করবো কিভাবে?

মোবাইলে খতিয়ান যাচাই করার জন্য প্রথমে eporcha.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করুন অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে ই-খতিয়ানঅ্যাপ ইন্সটল করে বিভাগ, জেলা উপজেলা, খতিয়ানের ধরণ, মৌজা নির্বাচন করে খতিয়ানের এর তথ্য যাচাই করতে পারবেন।

খতিয়ান ও পর্চা মধ্যে পার্থক্য কি?

খতিয়ান হল সাধারণত কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর জমির একটি চূড়ান্ত ফাইনাল রেকর্ড যা খতিয়ান হিসেবে লেখা হয়।আর চূড়ান্ত কাজ হওয়ার আগে যে জরিপ হাতে পাওয়া যায় তাকে পর্চা বলে।

আর এস পর্চা কি?

জমির খতিয়ান জরিপ হওয়ার পর তাতে যদি কোন ভুল ত্রুটি থাকে, তা সংশোধনের জন্য পরবর্তীকালে যে জরিপ করা হয় তাকে সাধারণতঃ আর এস খতিয়ান বলা হয়।

শেষ কথাঃ

উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই যেকোন খতিয়ান অনুসন্ধান ও যাচাই করতে পারবেন। আশাকরি এই লেখাটা আপনাদের ভালো লেগেছে। আশাকরছি, আরএস খতিয়ান অনুসন্ধান কিভাবে বের করতে হয় সে সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারনা আপনারা পেয়ে গিয়েছেন। খতিয়ান অনুসন্ধান ঘরে বসেই মোবাইল এর মাধ্যমে কিভাবে করতে হয়?

সেটিও আমি আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আপনাদের কাছে যদি কোনরকম সন্দেহ বা বুঝতে অসুবিধা হয়! তাহলে আমি উপরে একটি ভিডিও দিয়ে রেখেছি, চাইলে ওই ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। ভিডিওতে আরো বিস্তারিত ভাবে সব কিছু বলা আছে। আর যদি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর এতোটুকু পরিমাণ আপনার উপকার হয়ে থাকে! তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের(www.banglayinfo.com) সাথে থাকবেন। এবং কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment