সুচিপত্র–
কেন যোগাযোগ প্রয়োজন ?
যোগাযোগ এর কার্যকরী বৈশিষ্ট্য
যোগাযোগের সমস্যার লক্ষণ-
আপনার যোগাযোগ উন্নত করুন
কখন আপনার একজন পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজন হবে ?
কেন যোগাযোগ প্রয়োজন ?
একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য যোগাযোগ খুবই প্রয়োজনীয়। আপনার জীবনের লোকেদের সাথে খোলামেলা এবং সততার সাথে কথা বলতে নিজেকে সক্ষম বানানো থেকে শুরু করে কিভাবে আপনি অন্যএকজন মানুষের সাথে সবকিছু ভাগ করা , কথা বলা , নিজের মনের অনুভূতি জানাতে এবং মানুষটির সাথে একটি দীর্ঘস্থায়ী বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি বন্ধুবান্ধবই হউক অথবা পরিবারের সাথে সম্পর্ক সহ যে কোনও সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এটি রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।
যদিও প্রত্যেকটি সম্পর্ক আলাদা এবং প্রতিটিরই নিজস্ব উত্থান-পতন রয়েছে, আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলতে পারার অর্থ হল আপনি আপনার উদ্বেগ ও ভিতরের অনুভূতি গুলো ভাগ করতে পারবেন। একে অপরের প্রতি সমর্থন দেখাতে পারবেন এবং আরও ভালোভাবে একে অপরকে পরিচালনা করতে এবং একসাথে কাজ করতে ও পারবেন।
তাই আমরা আজ কের লিখার বিষয় হিসেবে , সম্পর্কের মধ্যে যোগাযোগ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ? সেটা নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশাকরি এই বিষয়গুলো আপনার সাথে আপনার প্রিয়জনদের ভাল যোগাযোগ এর বন্ধন তৈরী হবে এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকার ফলে যে সমস্যার তৈরী হয়ে থাকে সেটি কেন হয় সেটি বুজতেও পারবেন।
যোগাযোগ এর কার্যকরী বৈশিষ্ট্য
আমাদের প্রত্যেক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগাযোগের কিছু বৈশিষ্ট্যে রয়েছে যা হচ্ছে –
মনোযোগ সহকারে শোনা : মনোযোগ সহকারে শোনা এবং লোকেরা যা বলেছে তার কথা শুনেই অকারণে রিএক্ট না করা। আপনার মনে যদি কখনোই কোনও সংশয় দেখা দিয়ে থাকে স্পষ্টীকরণের জন্য সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করে নিবেন এবং কখনোই পরিস্থিতির সম্পর্কে না জানে বিচার করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত ই হবে।
বিষয়গুলি ব্যক্তিগতকরণ না করা: সম্পর্কের মধ্যে যোগাযোগ করার সময়, যারা সম্পর্ক কে সুন্দর ও ভালো রাখতে চায় তারা কখনোই ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কারণ তারা জানে প্রত্যেক মানুষের কিছু নিজস্বতা থাকে। সেই পরিস্থিতি তে এবং কীভাবে জিনিসগুলি সমাধান করা যেতে পারে তার উপর ফোকাস করবেন। অযথা তর্ক না করে ভালো।
নিজের ব্যবহার কে সুন্দর রাখা: একটি বিব্রত ব্যবহার কখনোই দুটো মানুষ কে এক সাথে থাকতে দিতে পারে না। তাই কোনও কিছু বলার আগে আপনার বিপরীত মানুষটিকে আপনার “না” বলার পরিবর্তে সুন্দর ব্যবহার এর সাহায্যে কেন না করছেন সেটি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন। আমরা কেউই অশান্তি পরিবেশ এ থাকতে চাই না তাই বাড়ির চারপাশে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। তাহলে সম্পর্কে কখনোই অস্বস্তি বোধ হবে না।
যোগাযোগের সমস্যার লক্ষণ-
আসুন এখন জেনে নি কি কি কারণে সম্পর্কে যোগাযোগের সমস্যা হতে পারে।
যোগাযোগের সমস্যাগুলির দ্বারা আপনার সম্পর্ক খারাপ এর দিকে যাচ্ছে এমন কিছু লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
১.আপনি নিজের মনে একটি ধারণা করে বসে আছেন যে আপনি জানেন আপনার সঙ্গী কি ভাবেন বা অনুভব করেন।
২.প্রতিনিয়ত একে অপরের সমালোচনা করছেন।
৩.প্যাসিভ-আক্রমনাত্মক আচরণে জড়িত হয়ে পড়ছেন।
৪.মনে হচ্ছে আপনি সত্যিই আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলতে পারবেন না।
৫.আপনার সঙ্গী যখন আপনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তখন আপনি
নিজেকে আত্মরক্ষা করার উপায় ভাবছেন।
৬.একে অপর এর সামনে নীরব আচরণ করা।
৭.একটি সল্যুশন এ পৌঁছানোর কথা না ভেবেই বার বার তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন।
৮.আপস করতে বা অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ শুনতে অস্বীকার করা।
আপনার সম্পর্কের মধ্যে যদি উপরের বলা পয়েন্ট এর মধ্যে একটিও দেখতে পান তাহলে আপনি ভুজতে পারবেন যে আপনার সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই দেরি না করে এই সব বিষয় গুলো নিয়ে সঙ্গীর সাথে তর্ক না করে আলোচনা করে সম্যসা গুলো কে কমানোর চেষ্টা করবেন।
আপনার যোগাযোগ উন্নত করুন
আপনাদের সম্পর্কের যোগাযোগ কে আরো বেশি উন্নত করতে আজকে আমরা ,কিছু টিপসগুলি দিয়ে আপনাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি যা আপনার দের কে যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের আশেপাশের কোনও কিছু দেখে ও নিজেদের সম্পর্কের সঙ্গে অন্য কারুর সম্পর্কের তুলনা করা উচিত না। পাশাপাশি একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য প্রচেষ্টা এবং ধৈর্যের ও প্রয়োজন।
আসুন আজ আমরা জেনে নি ঠিক কি কি উপায় এর সাহায্যে আমরা স্বাস্থ্যকর এবং একটি সুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবো। আপনার দের জন্য রইল এই পাঁচটি টিপস:
টিপ্স নাম্বার ১ – সুন্দর করে কথা বলা যে কোনও সম্পর্কেরই চাবিকাঠি। আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটান, গল্প করুন, তাঁর বলা কথা মনযোগ দিয়ে শুনুন। তাঁর দিকটাও সমান ভাবে চিন্তাভাবনা করুন। সঙ্গীর অনুভূতিকে প্রাধান্য দিন। নিজেদের মধ্যে সততা বজায় রাখুন। সাথে যোগাযোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গীর প্রতি সহানুভূতিশীল হন। পাশাপাশি নিজের মনের কথাও তাঁর সঙ্গে ভাগ করে নিন। এতে আপনাদের মধ্যের সম্পর্ক গাঢ় হবে ও একে অপরকে সমান ভাবে প্রাধান্য দেওয়াও হবে। যা প্রত্যেক টি ভালো সম্পর্কের মূল বিষয়।
টিপস নাম্বার ২ – একটা সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি হল বিশ্বাস। আপনার আচার ব্যবহারে ও কথার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখুন। আপনার সঙ্গীর সঙ্গে নির্ভরযোগ্য, সৎ এবং স্বচ্ছ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যা ই প্রতিশ্রুতি দেবেন তা মেনে চলুন। বিশ্বাস কখনও ভাঙবেন না, কারণ বিশ্বাস ভাঙলে তা জোড়া লাগানো খুব মুশকিল। বিশ্বাস অর্জন করতে এবং একে ওপরের প্রতি বিশ্বাস কে আরো বেশি শক্ত করুন। যাতে যেকোনো ব্যক্তি এর কথায় আপনাদের
বিশ্বাস সহজেই ভেঙে যেন না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন। কারণ আজকাল বেশির ভাগ সম্পর্ক কোনও একজন তৃতীয় ব্যক্তির জন্যই ভাঙতে দেখা যাচ্ছে। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
টিপস নম্বর ৩ – একে ওপরের প্রতি শ্রদ্ধা ঠিক বিশ্বাস এর মতই আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সব ক্ষেত্রেই আপনার সঙ্গীর মতামত এবং অনুভূতির প্রতি সম্মান করা করা আপনাদের সম্পর্কের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এক কথায় বলতে গেলে হল তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া। একটা সম্পর্কে থেকে সঙ্গী যখন তারা সম্মানিত বোধ করেন, তখন এটি সম্পর্কের মধ্যে আস্তে আস্তে নিরাপত্তার অনুভূতি টিও একসাথে তৈরি হতে থাকে যা দুজনের জন্যই একটি ভালো সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করবে।
টিপস নম্বর ৪- একটি স্বাস্থ্যকর সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী একসঙ্গে সময় কাটানো। নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ভালো সময়গুলো উপভোগ করেন। সঙ্গীর জন্য নিয়মিত সময় বের করে তাঁর সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া , বা ডিনার করা, কিংবা সিনেমা দেখা উচিত অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া এইসব বিষয়গুলোকে যদি মাথায় রেখে চলতে পারেন ,দেখবেন দুজনে ই ভাল সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন , তেমনি, একে ওপরের পছন্দ -অপছন্দ গুলোও আরও ভাল করে জানতে পারবেন।
টিপস নম্বর ৫-সম্পর্কে কখনোই মনোমালিন্য হতে দেওয়া যাবে না , এটি যে কোনও সম্পর্কের একটি স্বাভাবিক অংশ, তবে আপনাদেরকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে এটি যেনো খুব সহজে মিটে যায়। বেশি ক্ষণ ধরে নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি ধরে বসে না থেকে চেষ্টা করবেন কথা বলে বিষয়টিকে হালকা করে নিতে। এতে আপনার সঙ্গীর প্রতি আপনার দায়িত্ব এর বোঝাপড়া টাও গড়ে উঠবে। আপনার সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি শোনা, একে অপরের অনুভূতি বোঝা তাঁর সমাধান একসঙ্গে খোঁজাটা খুব দরকারি। ঝগড়া কে না এড়িয়ে এটাকে মেটানোর চেষ্টা করা দরকার নাহলে সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস ও নষ্ট হতে পারে।
কখন আপনার একজন পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজন হবে ?
আপনার সম্পর্কের যোগাযোগ উন্নত করার জন্য আপনি নিজে থেকে অনেক পদক্ষেপ নিতে পারেন।
তবে এমন সময় ও আসতে পারে আপনার জীবনে যখন আপনি অনুভব করবেন যে একজন পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজন । সেই ক্ষেত্রে “দম্পতিদের থেরাপি” যোগাযোগের সমস্যাগুলি মোকাবেলার একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে যা আপনার সম্পর্ককে আটকে রাখতে পারে।
একজন থেরাপিস্ট অসহায় যোগাযোগের ধরণগুলি সনাক্ত করে , তার নতুন মোকাবিলা করার কৌশলগুলি আপনাদেরকে বলে দিতে পারে এবং সেটা আপনাদের জন্য বেশি কার্যকর হবে। উনারা একে অপরের সাথে কথা বলার অনুশীলন করতে সহায়তা করতে পারে। তারা যে কোনও অন্তর্নিহিত বিরক্তি বা অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকেও সমাধান করতে পারে যা আপনার সম্পর্কের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।
শেষ কথা
আশাকরি আপনাদের পুরো পোস্ট টি পরে কিভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরী করে নিজেদের রিলেশনশিপ কে আরো সুন্দর কিভাবে করা যায় সেটির বিষয়ে কিছু ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। রিলেশনশিপ সম্পর্কে আরো নতুন তথ্য কিংবা টিপস জানতে অবৈশ্যৈই আমাদেরকে কমেন্ট করবেন।
এছাড়া আরো নতুন বিষয় জানতে বাংলাইনফোর পাশে ও সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।
পোস্ট ট্যাগ সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার উপায় ,দূর থেকে কিভাবে একটি সম্পর্ক ঠিক রাখা যায় ,সম্পর্ক গভীর করার উপায়,সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিভাবে ভালো যোগাযোগ রাখা যায়