বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

এলার্জি বা চুলকানি থেকে মুক্তির কার্যকর উপায়

এলার্জি কিভাবে হয়?

রাতের মহল্লায় যেমন পাহারাদার টহল দিতে থাকে, আমাদের শরীরেও তেমন অনেকগুলো পাহারাদার দিনে রাতে টহল দেয় ক্ষতিকর জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে। আমরা যে প্রতিদিন অপরিষ্কার কত কিছু খায়, বাতাসে বেসে বেড়ানো কত জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে , তাও আমরা অসুস্থ হয় না। কারণ এই পাহারাদারদেরেই কল্যানে। ক্ষতিকর জিনিসগুলোকে ধরাও পাকড়াও করে একদম নিশ্চিহ্ন করে দেই। আমরা কিছুই টের পাই না। এটাই হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা। তবে এটা সব সময় নিখুঁতভাবে কাজ করে না, মাঝে মাঝে ভুলও করে বসে। তখনই দেখা দেই এই এলার্জি বা চুলকানি।

যেমন ধরেন, আমরা কত শাকসবজি মাছ মাংস খাই। অনেক ধরনের শাকসবজি এবং মাছ মাংসের মধ্যে বিভিন্ন এলার্জি রয়েছে। ওইসব খাবার খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন এলার্জি দেখা যায়। আপনার শরীরের জন্য সব শাকসবজি এবং মাছ-মাংস ক্ষতিকর না কিন্তু আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদেরকে শত্রু হিসেবে চিনে রেখেছে। পাহারাদার টহল দেওয়ার সময় নাগাল পেলে একেবারে এক হাত দেখে নেই। আর তখনই আপনি পড়েন মহা যন্ত্রণায়। সাধারণত এটা ভয়ের কিছু না, আপনা আপনি চলে যায়। তবে অনেক রোগীকেই এটা খুব কষ্ট আর অশান্তিতে রাখে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে এলার্জি প্রাণঘাতী হতে পারে। এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এলার্জি বা চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে নিচে বিস্তারিত তুলে ধরব।

প্রাণঘাতী এলার্জি বা চুলকানির লক্ষণ।

শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া, বুক ধড়ফড়, মাথা ঘুরানো, মনে হয় অজ্ঞান হয়ে পড়েছি বা অজ্ঞান হয়ে পড়া, গায়ে ঘাম আসা, কনফিউশন, মুখ, চোখ, ঠোট, জিব্বা ফুলে যাওয়া। সাথে সাথে গায়ের চাকা চাকা, চুলকানি, বমি ভাব, বমি, পেট ব্যাথা ইত্যাদি থাকতে পারে। এমন হলে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগী ভালো অনুভব করলেও হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। আগেই উল্লেখ করেছে এটা প্রাণঘাতী হতে পারে। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে সময় মত একটা ইনজেকশন দিলেই রোগী বেঁচে যেতে পারে।

এলার্জি চুলকানি দূর করার সহজ উপায়

এলার্জি চিকিৎসা মোটা দাগে দুই ধরনের। প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকারী উপায় হল শরীরে এলার্জি হতে না দেয়া। আপনার শরীর যাকে শত্রু মনে না করে, তাকে আপনার কাছে ঘেঁষতে না দেয়া। আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো যখন এলার্জি দেখা দেয়, সে অস্বস্তি গুলো কমানোর জন্য চিকিৎসা।

১. প্রথম উপায়ে বলতে গেলে, যে জিনিসে আপনার এলার্জি সেটা আপনার কাছে আসতে দিবেন না। তাহলে আপনার শরীরের পাহারাদার গুলো অযথা মারামারি করার জন্য আর কেউকে পাবে না। আপনারও আর কোন যন্ত্রনা হবে। তবে ঠিক কিসে আপনার এনার্জি সেটা খুঁজে বের করতে আপনাকে একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হতে পারে। আপনার যেসব খাবারে এলার্জি রয়েছে সেসব খাবার পরিহার করতে হবে। খাবারের এলার্জি হলে সেটা খুঁজে বের করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা খাবারের ফটো খুঁজে পাবা এত সহজ না।

কোন জিনিসগুলোর একটা তালিকা হল ডাস্ট মাইট। এগুলো হলো ছোট ছোট পোকা যা খালি চোখে দেখা যায় না। মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখলে সাদা রঙের আট পা ওয়ালা পোকার মত দেখা যায়। আমাদের চামড়া থেকে যে মৃত কোষগুলো ঝরে পড়ে, এরা সেগুলোকে বেঁচে থাকে। আমাদের চামড়া থেকে তো প্রতিদিনই অল্প অল্প মৃত কোষ ঝরে পড়ছে বিছানায়, কার্পেটে, সোফায় আর এসব জায়গায় বাসা বাধছে কোটি কোটি ডাস্ট মাইট। এই ডাস্ট মাইটের কারণে আপনার এলার্জি হতে পারে। এটা এলার্জির খুবই কমন একটা কারণ। কিন্তু একে তো চোখে দেখা যায় না তাই ধরতে পাড়া কঠিন। এটা দূরে রাখতে বিছানার চাদর, কাঁথা, লেপের কভার সপ্তাহে অন্তত একবার করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। যেসব জিনিস নিয়মিত ধোয়া যায় না যেমন, কার্পেট সেগুলো বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। বিছানো গোছানো, ঝাড়া মোছা করার সময় ভালো একটা মাক্স পরে নিতে পারেন। আর যেসব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায় সেগুলোতে ভেজা কাপড় দিয়ে মুজবেন যাতে ধুলা না ছড়ায়। বাসায় যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় কাটানো সে জায়গায় পরিষ্কার রাখার মনোযোগ দিবেন।

২. মোল্ড বা ছত্রাক

বাসা স্যাতসেতে থাকলে ছত্রাক হতে পারে। ছত্রাক থেকে ছোট ছোট কণা নিঃসরণ হয়, সেটাতে আপনার এলার্জি হতে পারে। বাসার কোথাও ছত্রাক হতে থাকলে সেটা সরিয়ে ফেলবেন। আর ছত্রাক যাতে না হয়, সেজন্য ঘরের বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা করবেন। ঘরের ভিতরে কাপড় শুকাবেন না। আর ঘরের ভিতরে গাছ থাকলে তা সরিয়ে ফেলবেন।

৩. পরাগ রেণু

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বাতাসে বেসে বেড়ানো পরাগ রেণুর ধরন বদলায় এবং সংখ্যা বাড়ে কমে। আর সেই সাথে আপনার এলার্জির তীব্রতা বাড়তে কমতে পারে। বছরের একটা সময় দেখা যায় অনেকের চোখ নাক চুলকানো শুরু করে, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, সর্দি থাকে বা নাক বন্ধ হয়ে যায়, চোখ লাল হয়ে যায়, মাথাটা ধরে যায়, হাঁচি কাশি সারতে চায় না। এমন হলে পরাগ রেণু আপনার শত্রু হতে পারে। খেয়াল রাখবেন বছরের ঠিক কোন সময়টাতে আপনার এমন হচ্ছে। সেই সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের থাকা যায়, বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টে গোসল করতে হবে। যাতে পরাগ রেণু ধুয়ে চলে যায়। আর কাপড় জামা পারলে ঘরের ভিতর শুকাতে দিবেন। তাতে খেয়াল রাখবেন বাসায় যাতে ছত্রাক না হয়।

৪. গরম বা ঘাম

ঘামে যে উপাদান গুলো আছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আপনার শরীরে রিয়াক্ট করতে পারে। অনেক খাটাখাটি করলে, পরিশ্রম করলে, ব্যায়াম করলে, যখন শরীর গরম হচ্ছে, ঘামছেন তখন শরীরে চুলকানি হতে পারে এবং চাকা হতে পারে। এমন হলে যতটা সম্ভব রোদে না যাওয়া। সব সময় বাতাস আছে এমন জায়গায় থাকতে হবে। পাতলা ঢিলেঢালা জামা করার চেষ্টা করবেন, যাতে আপনার শরীর খুব গরম না হয়ে যায়।

৫. ঠান্ডা

গরমের মতো বেশি ঠান্ডা গেলেও অনেকের শরীরে এলার্জি হতে পারে। বৃষ্টিতে ভেজা, পুকুরে গোসল করা ইত্যাদিতে আপনার অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও হতে পারে পশুপাখির লোম বা পালক যা বাতাসে ভাসতে পারে কিন্তু চোখে দেখা যায় না, পথে-ঘাটে ধুলাবালি, পোকার কামড়, নির্দিষ্ট কোন মেটাল যা আংটি, গয়না, ঘড়িতে থাকতে পারে, নির্দিষ্ট কেমিক্যাল যা সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, পারফিউম ইত্যাদিতে থাকতে পারে, নির্দিষ্ট ধরনের কাপড়, প্লাস্টিক, ওষুধ। যেমন: পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবেটিক এবং বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জাতীয় খাবার। যেমন: চিংড়ি, বাদাম, ছোট শিশুদের ডিমে বা দুধে এলার্জি থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় খাবারের যেকোনো একটা ধরনের এলার্জি যেমন: ঘাস খাওয়া গরুর মাংসের এলার্জি নেই। কিন্তু কর্ণ খাওয়া গরু মাংসের এলার্জি আছে। এসব থেকে এড়িয়ে থাকলে তাহলে আপনার শরীরে এলার্জি বা চুলকানি সহজেই দূর হবে। এবং শরীরে এলার্জি আর হবে না।

এলার্জি বা চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়

এলার্জি বা চুলকানি কমানোর জন্য জায়গাতে একটু ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। চুলকানি কমানোর জন্য একটি তোয়ালে বরফ পেঁচিয়ে আক্রান্ত স্থানের সেঁক দিতে পারেন। চুলকানি কমাতে কালামাইন লোশন ১% মেন্টল ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজিং লোশন ও ব্যবহার করা যেতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে সেটার জন্য কিছু ওষুধ বা স্প্রে আছে। মেডিকেল ভাষায় বলে ডিকনজেস্টেনট। চোখ চুলকানির জন্য চোখের ড্রপ আছে। এলার্জির সমস্যার সমাধানে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানসিক চাপ। মানসিক চাপে থাকলে এলার্জি আরও খারাপ হতে পারে। তাই যারা এলার্জি বা চুলকানির সমস্যাই অনেক কষ্ট পাচ্ছেন, দেখেন আনা যায় কিভাবে ? নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, শেষের ব্যায়ামের মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারেন। এসব ধারণা আপনার কাছে থাকলে তাহলেই আপনি এলার্জি বা চুলকানির থেকে মুক্তি পাবেন।

একজন বাংলাদেশী কনন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করে আসছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পর্কে, ব্যবসায়িক বিভিন্ন তথ্য এবং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জানা অজানা তথ্য খবরা-খবর প্রকাশ করাই মূল লক্ষ্য। তার ইচ্ছা এই কাজের মাধ্যমে একদিন বাংলায় ইনফো ওয়েবসাইটটি বড় সাফল্য অর্জন করবে‌।

Related Posts

জাফরান হেয়ার অয়েল

জাফরান হেয়ার অয়েল ব্যাবহারের নিয়ম

জাফরান হেয়ার অয়েল এমন একটি অয়েল যার উপকারী উপাদান গুলি খুব সহজে চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে চুল ও স্ক্যাল্পে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। ফলে পুষ্টির অভাবে অতিরিক্ত চুল…

অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel)

অ্যালোভেরা জেল(Aloe Vera gel) কীভাবে বানাবেন দেখে নিন

এখন সময় শীতের শেষ। শীতের সুস্কতায় জরাজীর্ণ মানুষের ত্বক। এই পুরো শীতে ত্বকের যত্ন নেওয়া দরকার হলেও কাজের ব্যাস্ততায় অনেকেই পরিপূর্ণ যত্ন নিতে পারেন নি। সেই জরাজীর্ণ…

চুলের কাটিং পিক ২০২৪

ছেলেদের চুলের কাটিং পিক ২০২৪

চুলের কাটিং হল ব্যক্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের চেহারাকে আকার দেয় এবং আমাদের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। একটি সুন্দর চুলের কাটিং আমাদেরকে আরও আকর্ষণীয় এবং আত্মবিশ্বাসী করে…

চুল বড় করার তেলের নাম

2024 সালে আপনার জন্য বেস্ট চুল বড় করার তেলের নাম জেনে নিন-

নারীর সৌন্দর্য্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে লম্বা চুলের জুড়ি নাই। লম্বা চুলের কদর চলে আসছে সৃষ্টির শুরু থেকেই।একটা মেয়ে যখন বেড়ে ওঠে তার প্রথম আকর্ষণ থাকে চুল। পাশাপাশি…

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা

বাচ্চাদের পেট ফাঁপা দূর করার ঘরোয়া উপায় ২০২৪

নবজাতক শিশু প্রতিটি বাবা মায়ের একটা পরম সাধনার বস্তু। কিভাবে বাচ্চাকে সুস্থ রাখা যায় সেই চেষ্টার শেষ থাকেনা বাবা মায়ের। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই বাচ্চার বিভিন্ন…

ডায়েট চার্ট

৫ দিনের মধ্যেই ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট কি কি? নতুন আপডেট।

ওজন বাড়ছে বোঝার সাথে সাথেই বেড়ে যায় আমাদের চিন্তা।এসময় ডায়েট চার্ট না মেনে ডায়েট শুরু করা হয় অথবা রাতে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওজন তো…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *