বাংলায় ইনফো: বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট

৫ দিনের মধ্যেই ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট কি কি? নতুন আপডেট।

ওজন বাড়ছে বোঝার সাথে সাথেই বেড়ে যায় আমাদের চিন্তা।এসময় ডায়েট চার্ট না মেনে ডায়েট শুরু করা হয় অথবা রাতে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওজন তো কমেনা বরং বাড়তে থাকে।

কীভাবে ঘরে বসে ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট করা যায়?

ঘরে বসে ডায়েট চার্ট বানাতে নিমোক্ত উপদানগুলো সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। চলুন জেনে নিই –

  • পরিমিত পানি :

একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ২ লিটার পানি খাওয়া উচিত।

শুধু যে পানি খেলেই হবে ব্যাপারটা তা না।ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে পানি খেতে হবে।এতে দ্রুত ওজন কমে।

  • ব্লাক কফি :

ব্ল্যাক কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামে একটি পদার্থ রয়েছে। এই উপাদানই ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই উপাদান রাতের খাবার বা রাতের খাবারের পরে শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করতে বিলম্ব করে। এছাড়াও, নতুন ফ্যাট কোষের গঠন হ্রাস পায়, ফলে শরীরে কম ক্যালোরি শোষিত হয়।

  • গ্রীণ টি :

ওজন কমানোর কথা ভাবলেই গ্রীণ টি চলে আসে এই তালিকার শীর্ষস্থালে।কিন্তু সবসময় খেলেই কি গ্রীণ টির সঠিক কার্যকরীতা বজায় থাকবে? না।কিন্তু আমাদের অনেকেরই ধারণা গ্রীণ টি খেলেই ওজন কমে।এটা সঠিক নয়।সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে কোনও ভারী খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে কিংবা ২ ঘণ্টা পরে গ্রিন টি খেতে পারেন। এই চায়ে ক্যাফিন ও ক্যাটেচিন ভাল মাত্রায় থাকে, এই যৌগগুলি বিপাকহার বাড়াতে সাহায্য করে।

  • লেবু পানি :

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা সকালে লেবু-পানি পান করে থাকেন। প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এটি শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে চিনি বা মিষ্টি কিছু মিশিয়ে খাওয়া যাবে না। তবে ১ কাপ সমপরিমাণ পানিতে অর্ধেক পরিমাণ লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন।

  • চিয়া সিড :

দ্রুত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পানিতে সাধারণ তাপমাত্রায় ভিজিয়ে রাখতে হবে।

আরো পড়ুন: হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায়।

  • মেথি :

সকালে খালি পেটে মেথির জল খেলে ওজন কমতে পারে। এক চা চামচ মেথি সারারাত জলে ভিজিয়ে সকালে খেতে পারেন। ভাল ফল পেতে মেথির এই জল দিনে দু’বার খেতে পারলে ভাল। 

  • রোজা(Fasting) :
  • অনেকে ভাবেন রোজা রাখলেই ওজন কমে। আর তাই রোজা রাখেন ঠিকই, কিন্তু ভাঙার পর প্রচুর ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, ভারী ও মিষ্টি খাবার খেয়ে ফেলেন। আবার অনেকে ভাবেন সেহরি বাদ দিয়ে রোজা রাখলে হয়তো ওজন কমবে। এসব করলে আসলে ওজন কমে না। তাছাড়া সেহেরি তে পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত। কারণ এটা দিনের প্রথম খাবার। এই খাবার আপনাকে সারা দিন কর্মক্ষম রাখবে এবং শরীরের শক্তি জোগাবে। এই খাবার বাদ দিলে বিপাক হার কমে যায়। রোজা থেকে শুয়ে বসে থাকবেন না,পর্যাপ্ত পানি পান করুন।এগুলো ওজন কমাতে সহায়ক হবে।
  • কার্বোহাইড্রেড কম গ্রহণ :

খাদ্যতালিকায় কম কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা রাখাটা ওজন কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা ঠিক এমনটাই বলে। লো-কার্বহাইড্রেটযুক্ত ফুড বা কম শর্করা জাতীয় খাবার আমাদের ক্ষুধাকে উপশম করে এবং খাওয়ার সময় খাবার গ্রহণের পরিমাণ না কমিয়ে কেবলমাত্র লো-কার্বহাইড্রেটযুক্ত ফুড গ্রহণ করেও ওজন কমানো যায়।

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ডায়েট চার্টের পাশাপাশি জেনে নিন সহজ কিছু ব্যায়াম

ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যায়াম খুবই উপকারী। ব্যায়াম শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে,শরীর থাকে সুস্থ,প্রাণবন্ত।আসুন সহজ কয়েকটি ব্যায়ামের নাম জেনে নিই যা আমাদের ৫ দিনের মধ্যে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এক পদক্ষেপ এগিয়ে নিবে।

  • হাঁটা
  • দৌঁড়ানো
  • সাইকেলিং
  • সাঁতার
  • ভার উত্তোলন
  • যোগব্যায়াম
  • পাইলেটস ব্যায়াম

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানো যায়? কথাটা শুনলে অবাক লাগলেও ব্যায়াম ছাড়া ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।তবে ব্যায়াম করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কমানোও যায় দ্রুত । 

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো-

  • চিনি কে না বলতে হবে।চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা।
  • খাবার যতোটা সম্ভব চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • খাবার কম মশলা দিয়ে রান্না করে খেতে হবে।
  • পরিমিত পরিমাণ পানি খেতে হবে। 
  • শাকসবজি বেশি বেশি খেতে হবে।
  • প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।

দ্রুত ওজন কমানোর কমানোর ডায়েট চার্টে কি খাবার রাখবেন?

দ্রুত ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা খুব দরকার। আপনাকে প্রতিদিন কত কিলোক্যালোরি খাবার খেতে হবে প্রথমেই সেই টার্গেট করতে হবে।একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহের জন্য প্রতিদিন ১২০০ কিলো ক্যালোরি খাবার গ্রহণ প্রয়োজন। চলুন জেনে নিই কি কি খাবার খাবেন-

  • প্রোটিন জাতীয় খাবার

প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে আছে-বাদাম,চর্বিবিহীন মাংস, ছোট মাছ ইত্যাদি।

  • আঁশ জাতীয় খাবার 

আঁশজাতীয় খাবারের মধ্যে আছে- সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি। 

  • ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে।

  • পানিসমৃদ্ধ সবজি

যেসব সবজি পানিযুক্ত যেমন: লাউ, কুমড়া,শশা ইত্যাদি। 

  • উদ্ভিজ্জ খাবার।

উদ্ভিজ্জ খাবারের তালিকায় আছে নারিকেল।এটি ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন:লেবু, আমড়া,কাচা আম ইত্যাদি। 

আরো পড়ুন: অতিরিক্ত কৃমি হলে করণীয় কি? কৃমি চিকিৎসায় ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট।

দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট চার্টে কোন খাবার রাখা যাবেনা?

দ্রুত ওজন কমাতে আমাদের বেশ কিছু খাদ্যাভ্যাস থেকে দূরে সরে আসতে হবে। দেখে নিন কি সেই খাবার ওজন কমাতে যা আমাদের বর্জন করতেই হবে-

  • শর্করা জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করুন। যেমন: ভাত, পাউরুটি, ময়দার রুটি, পরোটা ইত্যাদি।
  • চিনি জাতীয় খাবার বর্জন করুন। যেমন:চিনির শরবত, সফট ড্রিংক,  সেমাই, চকলেট, আইসক্রিম অর্থাৎ যেসব খাবারে চিনি আছে সেগুলো বর্জন করুন।
  • ফাস্টফুড পরিহার করুন। যেমন: বার্গার,পিজ্জা, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি।
  • চর্বিযুক্ত খাবার যেমন: ডুবো তেলে ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি। 
  • অত্যাধিক মিষ্টিফল যেমন: পাকা আম, পাকা কলা কম খাবেন।

৫ দিনে ওজন কমানোর  ডায়েট চার্ট

প্রথম দিন

>>ব্রেকফাস্ট– আধা কাপ আঙ্গুর, ১টি টোস্ট, ২ চা চামচ পিনাট বাটার এবং চা-কফি।

>>লাঞ্চ– আধা কাপ মাছ, ১টি টোস্ট স্লাইস, কফি-চা।

>>ডিনার– যেকোনো মাংসের ২টি টুকরো, ১ কাপ সবুজ মটরশুটি, ছোট ১টি কলা, ১টি ছোট আপেল এবং ১ কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম।

দ্বিতীয় দিন

>>ব্রেকফাস্ট– ১টি ডিম, ১টি টোস্ট স্লাইস, ছোট ১টি কলা।

>>লাঞ্চ– ১ কাপ পনির, ১টি সেদ্ধ ডিম, ৫টি ক্র্যাকার বিস্কুট।

>>ডিনার– ২টি হট ডগ, ১ কাপ ব্রোকোলি, আধা কাপ গাজর, ছোট ১টি কলা এবং আধা কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম।

তৃতীয় দিন

তৃতীয় দিন রোজা/ ফাস্টিং করুন।

চতুর্থ দিন 

>>ব্রেকফাস্ট– ৫টি ক্র্যাকার বিস্কুট, ১ টুকরো পনির, ১টি ছোট আপেল।

>>লাঞ্চ– ১টি সেদ্ধ ডিম, ১টি টোস্ট স্লাইস।

>>ডিনার– ১ কাপ মাছ, ছোট ১টি কলা, ১ কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম।

 পঞ্চম দিন

সবচাইতে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে ৫ম দিনের এই ডায়েট চার্ট টি। এখানে সারাদিনে কি কি খাবেন কি পরিমাণে খাবেন সেটা দেওয়া হলো।

  • আধা কাপ হাই ফাইবার কনফ্লেক্স:

এটি ওজন কমাতে খুব বেশি সাহায্য করে। তবে কনফ্লেক্স যেন চিনি ছাড়া হয় এদিকে খেয়াল রাখবেন। চিনি ছাড়া কনফ্লেক্স অনেকে খেতে পারেন না তারা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

  • ১ কাপ মাখন ছাড়া দুধ:

মাখন ছাড়া দুধে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এজন্য এটি ডায়েট চার্টে অবশ্যই রাখবেন।

  • ফল:

বেশি করে ফল খাওয়া এই ডায়েটের প্রধান বৈশিষ্ট।বিশেষ করে পাকা পেঁপে রাতে খেতে পারেন।পাকা পেঁপে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধফল ওজন কমাতে খুব বেশি সাহায্য করে।

পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। এখন এই উপাদানগুলো কে ভাগ করে নিন। কখন কোনটি খাবেন,কি পরিমাণে খাবেন।

শেষ কথা (conclusion) :

ডায়েট করার ক্ষেত্রে আপনার পথচলাকে সহজ করতে আমরা হয়তো করণীয় কিছু পরামর্শ আপনাকে দিতে পারব,কিন্তু প্রধান কাজ আপনাকেই করতে হবে।সেটি হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে ডায়েট করা।ব্যাপারটা মোটেও এমন না যে ডায়েট ও করলাম আবার যে খানার গুলো খাওয়া যাবেনা সেগুলা ও খেলাম।ডায়েট করার ক্ষেত্রে আমার কিছু পরামর্শ –

>>পরিমিত পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

>>কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পরিহার করুন।

>>চিনি কে না বলুন।

>>পরিমিত পরিমাণ ঘুমান।

>>সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে ডায়েট চার্ট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পড়ার পাশাপাশি এই ভিডিওটি দেখে নিন।

FAQ

  1. ওজন কমানোর জন্য সকালে কি খেতে পারেন?

    ওজন কমানোর জন্য সকালে লেবু পানি,চিয়া সিড,জিরা পানি,ডিম ইত্যাদি খেতে পারেন।

  2. স্বাভাবিকভাবে মাসে কত কেজি ওজন কমতে পারে?

    এক মাসে যদি আপনি দেড় থেকে আড়াই কেজি কমাতে পারেন তাহলে সেটি আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। এর চেয়ে বেশি ওজন কমনোর অর্থ হলো আপনি বেশি শরীরচর্চা বা ক্র্যাশ ডায়েট করছেন। এর ফলে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, বিশেষ করে কিডনিতে চাপ পড়ছে। ওজন কমানোর সময় অনেকেই উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খায়। যা কিডনিতে আরও বেশি চাপ দেয়।

    আপনি যদি এক মাসে ৫ কিলো বা তার বেশি হারাতে থাকেন, তাহলে দুর্বল, ক্লান্ত, অলস ও বমি ভাব হতে পারে। যদি এমন সমস্যায় পড়েন তাহলে ডায়েটের দিকে আবারও নজর দিতে হবে।

  3. ১ মাসে সর্বোচচ কতটুকু ওজন কমানো সম্ভব?

    পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়েট চার্ট মেনে এক মাসে ৩ কেজি কমানো স্বাস্থ্যসম্মত। অর্থাৎ হাতে যদি ৩ মাস সময় থাকে, তবে সহজেই মাসে ৮ থেকে ১০ কেজি ওজন কমানো যেতে পারে।

Leave a Comment